মনিপুর স্কুলে স্বাস্থ্যবিধিতে উদাসীনতা, ঝুঁকিতে শিক্ষার্থীরা
রাজধানীর মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজে ক্লাস শুরু ও ছুটির সময় অভিভাবক-শিক্ষার্থীর জটলা তৈরি হচ্ছে। কোনো ধরনের সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি না মেনে ক্যাম্পাসের ভেতরে-বাইরে বিশৃঙ্খলা তৈরি হচ্ছে। স্কুল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় শিক্ষার্থীদের করোনা ঝুঁকির আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে এমন পরিস্থিতি লক্ষ করা গেছে।
দেখা গেছে, বিকেল তিনটার পর থেকে মিরপুরের মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৬০ ফিট রোডে বালক শাখা ও মনিপুর বালিকা শাখায় অভিভাবকরা প্রবেশ পথের মূল ফটকে জটলা বেধে ভিড় জমিয়েছেন। সেখানে স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই ছিল না। গেটের সামনে দুই শতাধিক অভিভাবক জটলা করে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এরপর বিকেল সাড়ে তিনটায় স্কুল ছুটি হলে তারা সবাই একসঙ্গে কার আগে কে ভেতরে প্রবেশ করবেন সেই প্রতিযোগিতা শুরু হয়। ছুটির পর শিক্ষার্থীদের সারিবদ্ধভাবে অভিভাবকদের হাতে তুলে দেওয়ার সরকারি নির্দেশনা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। অভিভাবকরা নিজেরাই ভিড় করে সন্তানদের খুঁজে বের করে স্কুল থেকে বের হতে দেখা গেছে। এ সময় কোনো শিক্ষককে দেখা যায়নি। প্রতিদিন এমন পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।
পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রীর অভিভাবক বিলকিস আক্তারের সঙ্গে কথা হলে তিনি জাগো নিউজকে জানান, তার মেয়েকে নিতে ৩০ মিনিট আগে স্কুলের সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছেন। রাস্তার ওপর স্কুলের গেট তাই ফুটপাতে ভিড়ের মধ্যে দাঁড়াতে হচ্ছে। এখানে কোনো ধরনের অপেক্ষা করার স্থান নেই বলে সব অভিভাবকরা গেটের সামনে ও চারপাশে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন। ছুটি হলে ভেতরে গিয়ে মেয়েকে নিয়ে বাড়ি যাবেন।
তার অভিযোগ, শুরুতে স্বাস্থ্যবিধির নামে অনেক নিয়মকানুন মানা হলেও কদিন পরে তা শিথিল হয়ে গেছে। গেটের ভেতরে প্রবেশ করার পর জীবাণুনাশক টানেল দেওয়া হলেও তা এখন অকার্যকর করে রাখা হয়েছে। ছেলেমেয়েদের ভেতরে প্রবেশের পর হাতে হ্যান্ড স্যানিটাইজারও দেওয়া হচ্ছে না। বাচ্চারা ক্লাসের ফাঁকে একসঙ্গে খেলাধুলা করছে, আড্ডা দিলেও শিক্ষকরা বাধা দিচ্ছেন না।
মানুষের ভিড় উপেক্ষা করে গাদাগাদি করে ছেলেকে নিয়ে বের হওয়ার সময় সাজ্জাত রহমানের সঙ্গে কথা হলে তিনি দাবি করলেন, স্কুলের ভেতর-বাইরে কোনো ধরনের শৃঙ্খলা নেই, শিক্ষকরা শুধু টাকা আদায়ের ফন্দি করেন। সরকারের কোনো ধরনের নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। ছেলেকে স্কুলে না পাঠালে জরিমানাসহ নানা ঝামেলা তৈরি হবে বলে ইচ্ছে না থাকলেও বাধ্য হয়ে প্রতিদিন ঝুঁকি নিতে হচ্ছে বলে জানান তিনি।
স্কুল থেকে জানা গেছে, মঙ্গলবার মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের বালক শাখায় প্রভাতী ও দিবা শাখায় দ্বিতীয়, তৃতীয়, পঞ্চম, দশম শ্রেণি ও চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ক্লাস করানো হয়। এসব ক্লাসে ১ হাজার ২০০ জনের মতো শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল।
এদিকে, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভেতরে প্রবেশ করার সময় সারিবদ্ধভাবে সামাজিক দূরত্ব রেখে শিক্ষার্থীরা প্রবেশ করবে। প্রবেশের সময় হাতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও তাপমাত্রা মেপে প্রবেশ করার কথা থাকলেও তার কিছুই অনুসরণ করা হচ্ছে না মনিপুরে। শুধু তাই নয়, ক্লাস শুরু ও ছুটির সময় সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের বড় ধরনের জটলা তৈরি হচ্ছে। কে কার আগে বের হবে সেই প্রতিযোগিতা শুরু হয়।
তবে শিক্ষকদের উদাসীনতার অভিযোগ অস্বীকার করে মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী প্রধান শিক্ষক অর্জুন কুমার পাল মঙ্গলবার জাগো নিউজকে বলেন, অভিভাবকদের বিশৃঙ্খলার কারণে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের শিক্ষকরা নানাভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের ছুটির পর তাদের সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে অভিভাবকদের হাতে তুলে দেওয়া হয়ে থাকে। অভিভাবকদের তড়িঘড়ির কারণে ভিড় তৈরি হচ্ছে। এ কারণে শিক্ষকদের পক্ষে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হয় না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
অন্যদিকে, মনিপুর স্কুলে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করার ছবি ও ভিডিও পাঠিয়ে এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ গোলাম ফারুকের সঙ্গে অনেকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।
এমএইচএম/এমআরআর/জেআইএম