ইউজিসি সদস্য তানজীমউদ্দিন

নিয়োগবাণিজ্যের জন্যই নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:২৯ এএম, ২১ জানুয়ারি ২০২৫
অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান/ফাইল ছবি

নিয়োগবাণিজ্যের জন্যই বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে বেশি নজর দেওয়া হতো বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান।

তিনি বলেন, ‘কথা প্রসঙ্গে জানতে পারলাম, নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বেতন স্কেল ১০ হাজার টাকার জন্য ১০ লাখ, ২০ হাজার টাকা স্কেলের জন্য ২০ লাখ টাকা ঘুস দিতে হতো। তাহলে চাকরি মিলতো।’

সোমবার (২০ জানুয়ারি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে দিনব্যাপী সেমিনারের দ্বিতীয় পর্বে ‘জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয়: উচ্চশিক্ষার আত্মাহুতি’ শীর্ষক বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ বিশ্লেষণমূলক জার্নাল ‘সর্বজনকথা’ এ সেমিনারের আয়োজন করে।

সেমিনারে আওয়ামী লীগের ১৬ বছরে শাসনামলে প্রতিষ্ঠিত ২৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের নানান সংকটের কথা তুলে ধরেন ইউজিসির এ সদস্য।

তিনি বলেন, ‘এসব বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্ববিদ্যালয় বলতে কষ্ট লাগে। দেশের বুদ্ধিবৃত্তিক সমাজ; বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষকদের দলীয় সমর্থক বানানোর ক্ষেত্রে এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে কাজে লাগানো হয়েছে।’

আরও পড়ুন

দেশের উচ্চশিক্ষা জেনোসাইডের মতো ‘এডুসাইডের’ শিকার হয়েছে মন্তব্য করে অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান বলেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বলি...সে বিশ্ববিদ্যালটির অবকাঠামো নেই, শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছয়শর কাছাকাছি, কর্মকর্তা-কর্মচারী তিন শতাধিক, শিক্ষক ১০৪ জন, ২৪টা বিভাগ। শিক্ষকদের বসারও পর্যাপ্ত জায়গাও নেই। আরও কয়েকটি নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাড়া করা ভবনে ক্লাস নেওয়া হয়। ২১টি বিশ্ববিদ্যালয় ভাড়াবাড়িতে পরিচালিত হয়।

তিনি আরও বলেন, ‘দেখা যাচ্ছে, প্রশাসনিক ও একাডেমিক ভবন আছে; কিন্তু গ্রন্থাগার নেই। অর্থাৎ, গ্রন্থাগার ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু শিক্ষক নিয়োগ বা বিভাগ খোলার ক্ষেত্রে সবাই এগিয়ে। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণকাজের বাজেট ছিল প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা। তার মধ্যে অপ্রয়োজনীয় একটি প্রমোদতরীর জন্য ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকা বাজেট রাখা হয়। একটি বিষয় নিশ্চিত হওয়া গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার চেয়ে অন্য উদ্দেশ্যগুলো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেছে। শিক্ষা ও গবেষণার যে ন্যূনতম উপস্থিতি থাকা উচিত, সেটি নেই৷’

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে আমরা যে পরিবর্তনটা দেখছি, তার মূল নেতৃত্বটা যেহেতু শিক্ষার্থীদের কাছেই ছিল, ফলে শিক্ষাখাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে উন্নয়ন-ভাবনা নিশ্চিত করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা খুব দুঃখজনক যে শিক্ষার্থী নেতৃত্ব যারা আছেন, অনেক কিছু করলেও শিক্ষার্থীদের অধিকার ও চাওয়া-পাওয়া নিয়ে তাদের তরফ থেকে কোনো রাজনৈতিক ম্যানিফেস্টো আসেনি। এটা পীড়াদায়ক।’

সেমিনারে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা।

সর্বজনকথার গবেষক মাহতাব উদ্দীন আহমেদ ও সংগীতশিল্পী বীথি ঘোষের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপ্রধান ছিলেন সর্বজনকথার সম্পাদক আনু মুহাম্মদ।

এএএইচ/ইএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।