করোনার বছরে মারা গেছেন হলিউডের যতো তারকা
শেষ হতে চলেছে আরও একটি বছর। নতুন ক্যালেন্ডারের অপেক্ষায় পৃথিবী। নতুন বছরে নির্ঘাত সবাই চিরততে ভুলে যেতে চাইবে ২০২০ সালকে। কারণ এই বছরে করোনাভাইরাসের শিকার হয়ে প্রাণ গেছে লাখো মানুষের। শোকের সাগরে ভেসেছে সারা দুনিয়া৷
হলিউডেও অনেক তারকার মৃত্যু হয়েছে করোনায়৷ এছাড়াও নানা রোগে ভুগে ও স্বাভাবিক মৃত্যুতে এই বছরে হলিউডে শোক নেমেছে বারবার৷ দেখে নেয়া যাক চলতি বছরে হলিউডে মারা যাওয়া তারকাদের নামগুলো-
ক্রিক ডগলাস
জনপ্রিয় আমেরিকান অভিনেতা ও লেখক ক্রিক ডগলাস। নিয় ইয়র্কের বস্তিতে জন্ম নেওয়া এক শিশু যে বড় হয়ে হলিউড শাসন করবে তা হয়তো ধারণা ছিলো না কারোর। কিন্তু বাস্তব মাঝে মাঝে কল্পনার চাইতেও বেশি সুন্দর ও সহজ। দুর্দান্ত অভিনয় দিয়ে জয় করে নিয়েছিলেন তিনি দর্শকের ভালোবাসা। ১৯৯৬ সালে চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদান রাখার জন্য অস্কারও জয় করেন তিনি। গুণী এই অভিনেতা চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি ১০৩ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।
ম্যাক্স ভন সিডো
সুইডেনে জন্মগ্রহণ করেন ফরাসি অভিনেতা ম্যাক্স ভন সিডো। দ্য সপ্তম সিল, দ্য এক্সোরিস্ট এবং স্টার ওয়ার্সের মতো জনপ্রিয় সিনেমাগুলোতে নান্দনিক সব চরিত্রে অভিনয় করে ব্যাপক দর্শকপ্রিয়তা লাভ করেন ভন সিডো। বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগে চলতি বছরের ৮ মার্চ মৃত্যুবরণ করেন এই অভিনেতা।
লুই জেমস লিপটন
লিপটন ছিলেন একাধারে একজন লেখক, গীতিকার ও অভিনেতা। নানা গুণে গুণান্বিত এই হলিউড তারকা শিক্ষকতাও করতেন। হ্যাপি বার্থ ডে বব, বব হোপ অন দ্যা রোড টু চায়নার মতো আরও বেশ কিছু জনপ্রিয় সিনেমা প্রযোজনা করেন তিনি। ২ মার্চ ৯৩ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন লিপটন।
জেরি স্টিলার
বার্ধক্যজনিত অসুখে ভুগে ১১ মে ৯২ বছর বয়সে মারা যান বর্ষীয়ান মার্কিন কমেডিয়ান জেরি স্টিলার। তার অভিনীত বহু টিভি শো দর্শক নন্দিত হয়েছে। নানা ধরনের চরিত্রে অভিনয় করে দর্শক মাতিয়ে রাখার জাদুকরী মন্ত্র জানতেন স্টিলার।
ফ্রেড উইলার্ড
৫০ বছর রূপালী পর্দায় বিচরণ করেছেন ফ্রেড উইলার্ড। তার কাজের একটা বড় বৈশিষ্ট ছিলো, কখনোই প্রধান বা বড় চরিত্রে অভিনয় করেননি। কিন্তু অল্প উপস্থিতিতেও নজড় কেড়ে নিতে জানতেন। বেস্ট ইন শো, ফর ইউর কনসিডারেশন এবং দিস ইজ স্পাইনাল ট্যাপ সিনেমায় অভিনয় করে দারুণ জনপ্রিয়তা পান ফ্রেড। চলতি বছরের ১৭ মে পরিচালক ক্রিস্টোফার গেস্টের স্ত্রী জেমি লি ফ্রেডের মৃত্যু খবর জানান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর।
আয়ান হলম
হলিউড এবং ব্রিটিশ সিনেমার খ্যাতিমান অভিনেতা আয়ান হলম। লর্ড অফ দ্য রিং-এর বিখ্যাত বিল্বো ব্যাগিন্সের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন তিনি। পার্কিনসন রোগে দীর্ঘদিন লড়াইয়ের পর ১৯ জুন শুক্রবার ৮৮ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন কিংবদন্তী এই অভিনেতা।
জোল শুমাখার
হলিউডের জনপ্রিয় নির্মাতা ‘ব্যাটম্যান’ সিনেমার পরিচালক জোল শুমাখার।নব্বই দশকের সিনেমা ‘সেন্ট এলমোজ ফায়ার’র মাধ্যমে সবার নজরে আসেন তিনি। এরপর ‘দ্য লস্ট বয়েজ’, ‘ফ্ল্যাট লাইনারস’ এবং ‘অ্যা টাইম টু কিল’ নির্মাণ করেন। কিংবদন্তী এই নির্মাতা ২৩ জুন ৮০ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।
এননিও মরিক্রনো
অস্কার-বিজয়ী সুরকার এননিও মররিকোন নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। জাদুকরী সুর দিয়ে নিজেকেই একটি বিশেষণে পরিণত করেছিলেন তিনি। দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য কুগল, এবং দ্য মিশন'খ্যাত ইতালীয় এ সুরকার মারা যান ১৫ জুন। ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ইতালি এবং হলিউডের জন্য পাঁচ শতাধিক সিনেমায় রেকর্ড সংখ্যক কাজ করেন তিনি।
চ্যাডউইক বোসম্যান
হলিউডের প্রথম কৃষ্ণবর্ণের অভিনেতা হিসেবে সুপারহিরো চরিত্রে অভিনয় করার গৌরবটি তার দখলে। সেই চরিত্রের ন 'ব্ল্যাক প্যান্থার'। এ চরিত্রে তিনি পান আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা। ছিলেন ছটপটে এক যুবকের মতো৷ তবে কখন যে শরীরে ক্যান্সার বাসা বেঁধেছে তা জানতেই পারেননি বোসম্যানের। অসুস্থতা গোপন রেখে সিভিল ওয়ার, ব্ল্যাক প্যান্থার, অ্যাভেঞ্জার্স : ইনফিনিটি ওয়ার, অ্যাভেঞ্জার্স : এন্ডগেমসহ বেশ কিছু সিনেমায় অভিনয় করেন বোসম্যান। দীর্ঘ ৪ বছর ক্যান্সারের সঙ্গে যুদ্ধের পর অবশেষে ২৯ আগস্ট শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
ডায়ানা রিগ
১৯৫৭ সালে দ্য ককেসিয়ান চক সার্কেল দিয়ে রিগের পেশাদার মঞ্চ অভিনয় জীবন শুরু হয়। টিভি সিরিজ দ্য অ্যাভেঞ্জার্স (১৯৬৫-৬৮)-এ এমা পিল এবং গেম অব থ্রোনস (২০১৩-১৭) সিরিজে ওলেনা টাইরেল চরিত্রে অভিনয় করে খ্যাতি পান। রিগ ১০ সেপ্টেম্বর ৮২ বছর বয়সে লন্ডনে তার নিজ বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর পর তার কন্যা রেচেল স্টার্লিং জানান তিনি মার্চ মাস থেকে ক্যান্সার রোগের জন্য চিকিৎসাধীন ছিলেন।
শন কনারি
১৯৩০ সালের ২৫ আগস্ট স্কটল্যান্ডের এডিনবরার ফাউন্টেনব্রিজে জন্মগ্রহণ করেন স্যার টমাস শন কনারি। বিশ্বজুড়ে বিখ্যাত জেমস বন্ডের ভূমিকায় অভিনয়ের মাধ্যমে সকলের নজরে আসেন শন কনারি। বন্ড চলচ্চিত্রের প্রথম পাঁচটি ছবির মূল চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। ছবিগুলো হলো- ড. নো (১৯৬২), ফ্রম রাশিয়া উইদ লাভ (১৯৬৩), গোল্ডফিঙ্গার (১৯৬৪), থাণ্ডারবল (১৯৬৫) এবং ইউ অনলি লাইভ টুয়াইস (১৯৬৭)। তারপর পুনরায় তিনি ডায়মণ্ডস আর ফরএভার (১৯৭১) এবং নেভার সে নেভার এগেইন (১৯৮৩) সিনেমায় অভিনয় করে জেমস বন্ড হিসেবে ফিরে আসেন। ইন্ডিয়ানা জোনস চরিত্রেও বেশ কিছু সিক্যুয়েলে তার অভিনয় মুগ্ধ করেছে দর্শককে। কনারি ৩১ অক্টোবর ৯০ বছর বয়সে ঘুমন্ত অবস্থায় বাহামা দ্বীপপুঞ্জের নাসাউ শহরে নিজ বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন।
এলএ/এমএস