রুনা লায়লা যখন নিজেই শিল্প


প্রকাশিত: ০২:৩৮ এএম, ১০ এপ্রিল ২০১৫

বাংলা সঙ্গীতাঙ্গনের কিংবদন্তি তিনি। এই শিল্পীর বর্ণাঢ্য সঙ্গীতজীবনের ৫০ বছর উদযাপিত হচ্ছে শুক্রবার। শিল্পী সত্ত্বাকে ছাড়িয়ে এই সুকণ্ঠী নিজেই আজ শিল্পে পরিণত হয়েছেন। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে তার সঙ্গীতজীবনের ৫০ বছরকে সম্মান জানাতে ‘সেলিব্রেশন অব মিউজিক’ শিরোনামের একটি কনসার্ট আয়োজন করা হচ্ছে।

এন্টারেজ এন্টারটেইনমেন্টের আয়োজনে এতে রুনা লায়লার সঙ্গে আরও গাইবেন ভারত ও পাকিস্তানের দুই শিল্পী কেকে ও ফাওয়াদ খান। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী সামরিন ইসলাম বলেন, উপমহাদেশের বরেণ্য কণ্ঠশিল্পী রুনা লায়লার সঙ্গীতজীবনের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আমাদের ‘সেলিব্রেশন অব মিউজিক’ কনসার্ট। অনুষ্ঠানে একটু ভিন্নতা আনতেই ভারতীয় কণ্ঠশিল্পী কেকে ও বলিউড নায়ক-গায়ক ফাওয়াদ খান পারফর্ম করবেন। ফাওয়াদ খান ঢাকায় এসেছেন বৃহস্পতিবার। কেকে ঢাকায় আসবেন শুক্রবার সকালে।’

শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় কনসার্ট শুরু হবে। বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে দর্শক-স্রোতারা আসন গ্রহণ করতে পারবেন। অনুষ্ঠানের ভিআইপি ও প্লাটিনাম টিকিট পাওয়া যাবে রাজধানীর এ্যাঞ্জেলস এন জিপসিস, কাবাব ফ্যাক্টরি, লাবেল বিউটি স্যালন ও চারকোল স্টেক হাউসের শো রুমে। শাহ আমীর খসরুর প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করবে আরটিভি। কনসার্টে প্রথমে রুনা লায়লা, পরে কেকে ও ফাওয়াদ খান গান পরিবেশন করবেন।


কিশোর বয়সে রুনা লায়লা চেয়েছিলেন নাচে ক্যারিয়ার গড়বেন। সঙ্গীত দেবীর আশীর্বাদে হয়ে হয়ে গেলেন গানের মানুষ। মঞ্চে প্রথমবার গান করেছিলেন অনেকটা কাকতালীয়ভাবে। পাকিস্তানের করাচী শহরের একটি অনুষ্ঠানে রুনা লায়লার বড় বোন দিনা লায়লার গান গাওয়ার কথা ছিল। পরে বোনের অসুস্থতার কারণে রুনা লায়লাকে সেই অনুষ্ঠানে গান গাইতে বলা হয়। প্রথম সুযোগেই সবাইকে বেশ চমকে দেন। এই সূত্রেই গানে লেগে থাকা। মাত্র ১২ বছর বয়সে ১৯৬৫ সালে সিনেমায় প্লেব্যাক করেন। লাহোরে নির্মিত উর্দু চলচ্চিত্র ‘জগনু’তে কণ্ঠ দেন। গানটির কথা ছিল ‘গুড়িয়া সি মুন্নি মেরি’। ষাটের দশকে বাংলা চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দেন রুনা লায়লা। সিনেমাটির নাম ছিল ‘স্বরলিপি’। নজরুল ইসলাম পরিচালিত এ সিনেমাটির সংগীত পরিচালক ছিলেন সুবল দাস। এতে রুনা লায়লার কণ্ঠে ‘গানেরই খাতায় স্বরলিপি লিখে’ গানটি দারুণ জনপ্রিয় হয়। লাহোরের বারী স্টুডিওতে রেকর্ডিং হয় গানটির। একই গানে আরও কণ্ঠ দিয়েছিলেন মাহমুদুন্নবী।


দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৪ সালে সত্য সাহার সুরে ‘জীবন সাথী’ চলচ্চিত্রে গান করেন। পাকিস্তানে নিসার বাজমির সুর করা ১০টি করে তিন দিনে মোট ৩০টি গান রেকর্ড করে বিশ্বরেকর্ড গড়েন রুনা। প্রথমবার গিনেস বুকে নাম ওঠে রুনা লায়লার। সঙ্গীতজীবনে মোট ১৭টি ভাষায় গান করেছেন এ শিল্পী। বাংলা, হিন্দি, উর্দু, পাঞ্জাবি, সিন্ধি, গুজরাটি, পশতু, বেলুচি, আরবি, পারসিয়ান, মালয়, নেপালি, জাপানি, ইতালিয়ান, স্পেনিশ, ফ্রেঞ্চ ও ইংরেজি ভাষায় গান করেন তিনি।

গানের বাইরে অভিনয়শিল্পী হিসেবেও দেখা গেছে তাকে। ‘শিল্পী’ চলচ্চিত্রে মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করতে দেখা গেছে তাকে। ছবিটি রুনা লায়লার ব্যক্তিজীবনের গল্প নিয়ে তৈরি।

উল্লেখযোগ্য গান (বাংলা) বাড়ির মানুষ কয় আমায়, বন্ধু তিন দিন তোর, সাধের লাউ বানাইল মোরে, শিল্পী আমি তোমাদেরই গান শোনাব, যখন থামবে কোলাহল, যখন আমি থাকব নাকো, এই বৃষ্টিভেজা রাতে, সুজন মাঝি রে, যে জন প্রেমের ভাব প্রভৃতি।

উল্লেখযোগ্য গান (হিন্দি) দে দে পেয়ার দে, দামা দাম মাস্ত্ কালান্দা, আব দিল কি আনজুমান, সুনো সুনো মেরি এ কাহানি, তুমহে হো না হো, দিল ধারকে, কাটে না কাটেরে, হাইয়া হে, ডিসকো এক্সপ্রেস। উল্লেখযোগ্য অ্যালবাম আই লাভ টু সিং ফর ইউ, রুনা ইন পাকিস্তান (গজল) (১৯৮০), রুনা ইন পাকিস্তান (গীত) (১৯৮০), দ্য লাভারস অব রুনা লায়লা, রুনা লায়লা-মুডস অ্যান্ড ইমোশনস (২০০৮), রুনা লায়লা-কালা শাহ কালা (২০১০) প্রভৃতি।

উল্লেখযোগ্য পুরস্কার স্বাধীনতা পদক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৭৬, ১৯৭৭, ১৯৮৯, ১৯৯৪, ২০১২, ২০১৩), লাক্স-চ্যানেল আই আজীবন সম্মাননা, সায়গল পুরস্কার (ভারত), নিগার পুরস্কার (পাকিস্তান)।

এলএ/এআরএস/বিএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।