টেলিভিশনে কর্মজীবনে নওয়াজীশ আলী খানের ৫০ বছর পালন

বিনোদন প্রতিবেদক
বিনোদন প্রতিবেদক বিনোদন প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১১:১২ এএম, ২৯ নভেম্বর ২০১৭

১৯৬৭ সালের ২৯ নভেম্বর করাচি টেলিভিশনে পোস্টিং দিয়ে টেলিভিশন জীবনের যাত্রা শুরু করেন প্রখ্যাত টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব নওয়াজীশ আলী খান। আজ সেই যাত্রার ৫০ বছর পূর্তি হলো। এ উপলক্ষে তার বর্তমান কর্মস্থল এটিএন বাংলার পক্ষ থেকে সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে এটিএন বাংলা ও এটিএন নিউজের চেয়ারম্যান ড. মাহফুজুর রহমান ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মুস্তাফা মনোয়ার, ম. হামিদ, ফাতেমা তুজ জোহরা, ড. ইনামুল হক সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। অনুষ্ঠানে অতিথিবৃন্দ নওয়াজীশ আলী খানের বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের নানা দিক তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে নওয়াজীশ আলী খান এর হাতে সম্মাননা স্মারক ক্রেস্ট, উত্তরীয়, পোট্রেট তুলে দেন অতিথিবৃন্দ।

বিজ্ঞাপন

নওয়াজেশ আলী খানের জন্ম ১৯৪২ সালের ২ অক্টোবর। পিতা-মোহাম্মদ মাজেদ আলী খা আর মাতা জুবাইদা খানম। দুজনই প্রয়াত হয়েছেন অনেকদিন আগে। বাড়ি- বরিশাল জেলার, বাবুগঞ্জ উপজেলার লোহালিয়া গ্রামে। স্ত্রী ওয়াজিদা নাসরীন ও দুই সন্তান নিয়ে তার পরিবার। বড় ছেলে নওয়াদীর আলী খান (ধ্র“ব) একটি বেসরকারী ব্যাংকে কর্মরত। আর ছোট ছেলে নওয়াফীল আলী খান (তোরসা) অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী।

১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হলেও সে সময়ে দেশে ফেরার সুযোগ পাননি তিনি। ১৯৭২ সালের অক্টোবর মাসে পাকিস্তান থেকে পালিয়ে আফগানিস্তান ও ভারত হয়ে স্বাধীন মাতৃভূমি বাংলাদেশে ফিরে আসেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনে যোগদান করেন প্রযোজক পদে। বাংলাদেশ টেলিভিশনে তাঁর কাজ শুরু হয় গানের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। এরপর ‘রতœদ্বীপ’ নামে একটি আলেখ্যানুষ্ঠান তৈরি করেন তিনি। এরপরই এগিয়ে যাওয়ার গল্প। বিবিধ সার্থক অনুষ্ঠান প্রযোজনার জন্য ১৯৭৫ সালে শ্রেষ্ঠ প্রযোজক হিসেবে টেলিভিশন পুরস্কার পান তিনি।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

১৯৭৬ সালে ‘বর্ণালী’ নামের জনপ্রিয় অনুষ্ঠান প্রযোজনার জন্য দ্বিতীয়বার পান শ্রেষ্ঠ প্রযোজকের পুরস্কার। ফজলে লোহানীর উপস্থাপনায় বিটিভির জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘যদি কিছু মনে না করেন’ অনুষ্ঠানেরও প্রযোজক ছিলেন তিনি। এ অনুষ্ঠানটি তিনি প্রযোজনা করেছেন তিন/চার বছর। এছাড়া বিটিভির জনপ্রিয় ঈদ ম্যাগাজিন ‘আনন্দমেলা’র অনেক পর্বের প্রযোজক ছিলেন তিনি। আরো প্রযোজনা করেছেন আবদুল­াহ আবু সায়ীদের ‘সপ্তপর্না’।

অনুষ্ঠানের পাশাপাশি তিনি নিয়মিতভাবে নাটকে কাজ শুরু করেন আশির দশক থেকে। তার নাট্যরূপ দেয়া নাটকের মধ্যে উলে­খযোগ- সৈয়দ মুজতবা আলীর বিখ্যাত পন্ডিতমশাইয়ের তিন পায়ের কুকুরের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করে লেখা ‘পাদটীকা’ ও ‘টুনি মেম’, শরৎচন্দ্রের ‘অভাগীর স্বর্গ’, অধ্যাপক সৈয়দ অকরম হোসেনের ‘ঘুণপোকা’ ইত্যাদি। নাটক প্রযোজনায় আসার পর হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে পরিচয় ঘটে তাঁর। বিটিভিতে প্রচারিত হুমায়ূন আহমেদের প্রথম নাটক ‘প্রথম প্রহর’ এর প্রযোজক নওয়াজীশ আলী খান। বিটিভিতে হুমায়ূন আহমেদ এর যেসব ধারাবাহিক নাটক উলে­খযোগ্য তার মধ্যে ‘বহুব্রীহি’ ও ‘অয়োময়’ নওয়াজীশ আলী খানের প্রযোজনা।

এছাড়া হুমায়ূন আহমেদের লেখা এক পর্বের অনেক নাটকই প্রযোজনা করেছেন তিনি। এর মধ্যে উলে­খযোগ্য অসময়, অযাত্রা, বিবাহ, এসো নীপবনে, ঐজাবোর্ড, মাটির ও পিঞ্জিরার মাঝে, মরণরে তুহু মম, নিমফুল, জননী, কবি ও গাছমানুষ উলে­খযোগ্য।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

দীর্ঘ ২৮ বছর বাংলাদেশ টেলিভিশনে সফলভাবে দায়িত্ব পালন শেষে ২০০০ সালে জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে সরকারী চাকুরী থেকে অবসর গ্রহন করেন। বিটিভি থেকে অবসরের পর সে বছরই অনুষ্ঠান প্রধান হিসেবে যোগদান করেন একুশে টেলিভিশনে। সেখানে দায়িত্ব পালন করেছেন ৩১ ডিসেম্বর ২০০২ পর্যন্ত। এরপরই যোগদেন এটিএন বাংলায়। গত ১৫ বছর যাবত এ প্রতিষ্ঠানেই দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। বর্তমানে আছেন উপদেষ্টা (অনুষ্ঠান) হিসেবে।

জাগোনিউজের খবর পেতে ফলো করুন

তার দীর্ঘ পথচলায় দেশে ও বিদেশের অসংখ্য প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রশিক্ষণ গ্রহণ ও কনফারেন্সে যোগদান করেছেন তিনি। নিয়মিত দাপ্তরিক দায়িত্বের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সাথে তিনি জড়িত ছিলেন ও আছেন। তাঁর কর্মের স্বীকৃতি স্বরূপ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি, যার মধ্যে উলে­খযোগ্য- ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড ১৯৭৫ ও ১৯৭৬ (সেরা প্রযোজক), প্রেক্ষাপট অ্যাওয়ার্ড ১৯৮৮, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সোসাইটি অ্যাওয়ার্ড ১৯৯৫, শের-ই-বাংলা লিটারারি অ্যাওয়ার্ড ১৯৯২, ঢাকা ইয়োথ ফাউন্ডেশন অ্যাওয়ার্ড ১৯৯৫, কালোদ্ধনি ইন্ডিপেন্ডেন্স গোল্ড মেডেল ১৯৯৫, নিপা গোল্ড মেডেল- ২০০০, ন্যাশনাল পার্সোনালিটি অ্যাওয়ার্ড ১৯৯৫, টেনাসিনাস অ্যাওয়ার্ড ১৯৯৬, টিডিএফ লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড ২০০৪, এ-ওয়ান টেলিমিডিয়া এন্ড সিল্ক লাইন ইন্ডিপেন্ডেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০০৫, একটেল নাট্যসভা অ্যাওয়ার্ড, বিপ্লবী দেবেন্দ্রনাথ ঘোষ স্মৃতি অ্যাওয়ার্ড ২০০৫, মাহাত্মা আশ্বিনী কুমার দত্ত স্মৃতি অ্যাওয়ার্ড ২০০৮। সুদীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি ভারত, পাকিস্তান, জাপান, দ. কোরিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, আফগানিস্তান, কুয়েত, জার্মানি, সাউথ আফিক্রা, ইউএসএ, নেপাল, ইউকে এবং শ্রীলংকা ভ্রমণ করেছেন।

এলএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।