ইউটিউবার হয়ে যে ভালোবাসা ও পরিচিতি পেয়েছি তা অমূল্য : রাকিব

বিনোদন প্রতিবেদক
বিনোদন প্রতিবেদক বিনোদন প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১২:৩২ পিএম, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২০

রাশেদুজ্জামান রাকিব। বাংলাদেশের একজন জনপ্রিয় ইউটিউবার। কিছু সিনেমার সংলাপকে তিনি নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছেন তার ইউটিউব কন্টেন্ট হিসেবে ব্যবহার করে। মূলত মজা করে সেগুলো উপস্থাপন করলেও ট্রল নয়, সিনেমার খুঁটিনাটি অসঙ্গতি বিষয়গুলো তুলে ধরাই তার উদ্দেশ্য। বিনোদন কেন্দ্রিক ‘আর না আর’ নামে একটি ইউটিউব চ্যানেল আছে তার। সেটিতে প্রায় পাঁচ লাখ সাবস্ক্রাইবার রয়েছে, যারা নিয়মিতই রাকিবকে অনুসরণ করে থাকেন। আরও একটি চ্যানেল ছিল তার। কিন্তু হ্যাক হওয়ার কারণে সেটি বন্ধ।

‘আরএনএআর’ নামে একটি ফেসবুক পেজও আছে রাকিবের। যেখানে দুই লাখ লাইক এবং সাড়ে তিন লাখ ফলোয়ার্স রয়েছে। পেয়েছেন ইউটিউব থেকে স্বীকৃতি এবং লাখ লাখ দর্শক-ভক্ত। এ দেশের ইউটিউব জগতে জনপ্রিয় তরুণ এ ইউটিউবারের ইউটিউব যাত্রা, সাফল্য ও অভিজ্ঞতার গল্প শোনাচ্ছেন অরণ্য শোয়েব-

জাগো নিউজ : ইউটিউবে আপনার শুরুটা কীভাবে?
রাকিব : ছোটবেলা থেকেই সিনেমার প্রতি দারুণ ভালো লাগা আমার। নিয়মিত সিনেমা দেখি, ঘাঁটাঘাটি করি। এরপর সেইসব গল্প মজা করে বন্ধুদের জানাই। সিনেমা ভালো হলে বারবার দেখেছি। ভালো না লাগলে বন্ধুদের বলেছি। সেই বিষয়টাই একসময় ইউটিউবে চলে এলো। আইডিয়াটা হুট করেই আসে। ভাবলাম যে শুধু আমার গুটিকয়েক বন্ধুদের না বলে সবাইকে বলবো কোনটা কেমন ছবি। জানাবো ভালো সিনেমার কথা। মন্দ হলে সেটাও বলবো মজা করে।

ব্যস, শুরু হয় বিভিন্ন কন্টেন্ট নিয়ে কাজ করা। এতটা পথ পাড়ি দেয়া বলার মতো খুব সহজ ছিলো না। তারপরও সবার ভালোবাসা ছিল বলেই এগিয়ে চলছি। সেই ২০১৪ সালের দিকে ইউটিউব নিয়ে জানার আগ্রহ তৈরি হয়। পরে জানতে পারলাম, দুনিয়ার নাম্বার ওয়ান ইউটিউবার ‘পিউডিপাই’। এরপর তার ভিডিও দেখা শুরু করলাম।

জাগো নিউজ : তাহলে ‘পিউডিপাই’ আপনার প্রেরণা?
রাকিব : বলা যায়। কয়েক বছর ধরে ‘পিউডিপাই’র ভিডিওগুলো দেখার পর মনে হলো আমিও তো ইউটিউবে ভিডিও বানাতে পারি। কিন্তু সে তো ‘ভিডিও গেইম’ কেন্দ্রিক কন্টেন্ট বানায়। অন্যদিকে আমি তেমন গেইম খেলি না। পরে আমার ভালো লাগা সিনেমাকে কেন্দ্র করেই ভিডিও বানানো শুরু করলাম।

জাগো নিউজ : শখের বশে শুরু করে এখন এটাই বলা চলে আপনার পেশা। এতো পেশা থাকতে এখানেই কেন?
রাকিব : পেশা বলতে ইউটিউব ও ভিডিও নিয়ে ভেবেই দিনের বেশিরভাগ সময় কেটে যায়। আসলে মন সায় দিয়েছে বলেই এখানে পেশা তৈরি করছি। আমার যা ভালো লাগে, ভালো মনে হয় আমি সেটিই করার চেষ্টা করি। ইউটিউব আমাকে আজ সবার কাছে পরিচিত করেছে। চাইলে হয়তো আরও অন্য কিছু করতে পারতাম কিন্তু আমার কাছে ভিডিও বানানোটা অভ্যাস হয়ে গেছে। আর সময়ের চাহিদায় ইউটিউব এখন অনেক বড় ও বিস্তৃত একটি পেশা। প্রচুর মানুষ এখানে কাজ করতে পারছেন। আমিও চেষ্টা করছি।

জাগো নিউজ : অভিযোগ আছে যে কারণ ছাড়াও আপনি অনেক সিনেমা নিয়ে, অনেক তারকা ও ব্যক্তিদের নিয়ে ট্রল ভিডিও বানান...
রাকিব : কারণ ছাড়া কখনোই কিছু হয় না। আমিও করি না। কেউ বলুক যে আমার কোন ভিডিওটা কারণ ছাড়া বানিয়েছি। ইচ্ছে করে কাউকে ছোট করার মধ্যে আনন্দ বা সাফল্য নেই। এটা আমি বিশ্বাস করি। ট্রল বলতে যা হয় সেটারও কারণ থাকে। সেগুলোই ট্রল হয় যেগুলোকে পাবলিক ট্রলের উপাদান মনে করে কিংবা যেসব ঘটনা ও মানুষদের জন্য তারা মজা পায়। উদাহরণ দেয়ার মতো অনেক কিছু আছে চারপাশে। কোনো ইউটিউবারই শত্রুতা পুষে রেখে কাউকে ট্রল করে বলে আমার মনে হয় না। আবার সিরিয়াস কোনো ইস্যুতে ট্রল করাও যাবে না।

কারণ কনেন্টগুলো বিনোদনের জন্যই বানানো হয়। নানা চাপের জীবনে বাড়তি বিনোদন বের করতে দোষ কোথায়? আমি সেটাই করার চেষ্টা করি। আর আমার মজাও লাগে। আমি তো আমার নিজের মিউজিক ভিডিও, আমার বিয়ের ভিডিও নিয়েও দুষ্টুমি করেছি। সেগুলো নিয়ে অনেকে ট্রল করছে, ভাইরাল করছে। এটা স্রেফ বিনোদন হিসেবেই দেখতে হবে। আমি তো সিরিয়াস কোনো বিষয় নিয়ে ট্রল করছি না। যেটি হাস্যকর বা মজা দিয়ে ঘটছে সেটি নিয়েই করছি।

জাগো নিউজ : ট্রল করা নিয়ে অনেক ইউটিউবারদের বাজে অভিজ্ঞতার কথা শোনা যায়। আপনার বেলায় কি এমন কিছু আছে? বা কোনো হুমকির শিকার হয়েছেন কখনো?
রাকিব : হা হা হা হা হা! না এখন পর্যন্ত কোনো হুমকির শিকার হইনি। আমি তো সিরিয়াস কোনো বিষয় নিয়ে ট্রল ভিডিও বানাই না যে কেউ আমার নামে কোনো অভিযোগ করবে বা হুমকি দেবে। যেসব ঘটে চলছে মানুষকে বিনোদন দেয়ার মতো সেসব নিয়েই ভিডিও তৈরি করা হয়। আমার বেশিরভাগ কন্টেন্টই সিনেমা নিয়ে। বলতে গেলে সেইসব সিনেমা যেগুলো নিয়ে দর্শক বিরক্ত, হতাশ। ট্রলের মাধ্যমে সেই সিনেমাগুলোর ভুলগুলো ধরিয়ে দেই। আমাদের যে আরও ভালো মানের সিনেমা বানানো দরকার সেইটা বলে দেই।

জাগো নিউজ : অনেকেই ইউটিউবার থেকে আজ অভিনেতা হয়েছেন। নিয়মিত কাজ করছেন তারা। সেইরকম কোনো চিন্তা-ভাবনা আছে?
রাকিব : আমি স্ট্রেট ফরোয়ার্ড। সরাসরি বলছি অভিনেতা হবো না কখনো। ভিডিও বানাতেই পছন্দ করি আমি। এটাই মন দিয়ে আনন্দ নিয়ে করতে চাই। অভিনেতা হতে গেলে বেশ কিছু বিষয় নিজের মধ্যে থাকতে হয়। আমার মনে হয় সে জায়গায় আমি পুরোপুরি পারফেক্ট না। এছাড়াও অভিনয় খুব একটা টানে না আমাকে। আমি শুধু ভিডিও নিয়েই থাকতে চাই।

জাগো নিউজ : ইউটিউব নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কেমন জানতে চাই?
রাকিব : পরিকল্পনা অনেক। গোপন রাখতে চাইছি। আমার পরিকল্পনা প্রকাশ করলে কেন যেন সেটা আর বাস্তবে রূপ নেয় না। তাই মনে রেখেই সামনের দিকে অগ্রসর হতে চাই। এটি আমি প্রকাশ করতে চাই না।

জাগো নিউজ : আপনি শুধু ইউটিউবার রাকিব? না-কি আরও কোনো কাজ বা পেশার সঙ্গে জড়িত?
রাকিব : একটা ক্রিকেট পোর্টালে জব করি। এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে চাই না। ইউটিউবার হিসেবে মানুষকে বিনোদন দেয়ার পাশাপাশি ব্যক্তি নিজেকে ব্যস্ত রাখি আর কি।

জাগো নিউজ : ইউটিউবার হিসেবে আপনার প্রাপ্তিগুলো কী?
রাকিব : অনেক অপরিচিত মানুষকে পরিচিত হিসেবে পেয়েছি। ইউটিউবার না হলে এসব চমৎকার মানুষদের সঙ্গে কখনোই আমার যোগাযোগ হতো না। এটি আমার কাছে অনেক বড় পাওয়া। পাশাপাশি লাখ লাখ মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি।

জাগো নিউজ : বাংলাদেশে কোন ইউটিউবারকে আপনি ফলো করেন?
রাকিব : তেমন করে বলার মতো কাউকে অনুসরণ করা হয় না।

জাগো নিউজ : বাংলাদেশে কোন ইউটিউবারকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করেন?
রাকিব : যারা ভালোভাবে কন্টেন্টের টাইটেল ও থাম্বনেল দেয় তাদের সবাইকে। হা হা হা...! এটি আসলে খুব সৃষ্টিশীল ও জটিল কাজ ইউটিউবারদের কাছে।

এলএ/এসইউ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।