পাগলা কানাই এর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে উৎসব
মরমী কবি পাগলা কানাই এর ২০৬ তম জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষে কবির জন্মভিটা ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বেড়বাড়ি গ্রামে শুরু হয়েছে ৩ দিনব্যাপী উৎসব। এ উৎসবে কবিগান, ভাব সঙ্গীত, লাঠিখেলা, ধুয়া-জারী, আলোচনা সভা ও লোকজ মেলার আয়োজন করা হয়েছে।
লোক-সাধনা ও মরমী সঙ্গীতের এ কবি ঝিনাইদহ সদর উপজেলার লেবুতলা গ্রামে ১২১৬ বঙ্গাব্দের ২৫ ফাল্গুন জন্মগ্রহণ করেন এবং ১২৯৬ সালের ২৮ আষাঢ় মৃত্যুবরণ করেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি দূরন্ত ও আধ্যাত্মিক স্বভাবের ছিলেন। বাল্যকালে পিতৃহারা পাগলা কানাই-এর অর্থের অভাবে পড়ালেখা হয়নি। মানুষের বাড়ি রাখালের কাজ করার সময় গরু চরাতে গিয়ে ধুয়ো-জারি গান গাইতেন। নিরক্ষর হলেও তার স্মৃতি, মেধা ছিল প্রখর।
উপস্থিত বুদ্ধি দিয়ে তাৎক্ষণিক গান রচনা করে নিজ কণ্ঠে পরিবেশন করতেন পাগলা কানাই। তার সঙ্গীতে যেমন ইসলাম ধর্মের তত্ত্বকে প্রচার করেছেন তেমনি হিন্দু-পুরাণ, রামায়ণ ও মহাভারত থেকেও নানা উপমার প্রয়োগ ঘটিয়েছেন। এ কারণেই পাগলা কানাই এর গান সর্বজনীনতা লাভ করে। তার গানে বাউল ও কবিয়াল এ দুইয়ের যথার্থ মিলন ঘটেছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে এ উৎসব দেখতে আসেন কবি ভক্তরা। এদিকে মরমী কবি পাগলা কানাই কবির রচিত অসংখ্য গান দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলেও সংরক্ষণের অভাবে আজ তা হারিয়ে যাচ্ছে।
কবি ভক্তরা জানান, পাগলা কানাই এর রচিত গান আজও গ্রামগঞ্জে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। ৩ সহস্রাধিক গান থাকলেও আজও তা সংগৃহীত হয়নি। ঝিনাইদহসহ দেশের প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের মুখে মুখে ঘুরে ফেরে তার গান। এ সময় তারা কবির গান সংরক্ষণের দাবি জানান।
এলাকাবাসীরা জানান কবির জন্ম দিবস উপলক্ষ্যে এবারও ৩ দিন ব্যাপী কবিগান, ভাব সঙ্গীত, লাঠিখেলাসহ নানা অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে পাগলা কানাই স্মৃতি সংরক্ষণ সংসদ।
পাগলা কানাই স্মৃতি সংরক্ষণ সংসদের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. আব্দুর রশিদ সংসদের পক্ষ থেকে কবির সৃষ্ট গানগুলো সংরক্ষণ, গবেষণা ও মাজার প্রাঙ্গনে একটি গবেষণাগার ও অবকাঠামোর নানা উন্নয়নের দাবি জানান।
গবেষণার অভাব ও নানা সীমাবদ্ধতায় নতুন প্রজন্মের মানুষেরা ভুলতে বসেছে এই কবির জীবন দর্শন ও তার রচনা সম্পর্কে। লালন পরবর্তী কালের অন্যতম মরমী সাধক ও লোকোকবি পাগলা কানাই রচিত গান সংরক্ষণ করে তাঁর স্মৃতিকে ধরে রাখার আহবান সকলের।
এফএ/আরআইপি