দুর্যোগের পর মানসিক রোগ থেকে বের হতে দরকার সাইকোলজিক্যাল সাপোর্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:৪৫ পিএম, ১১ অক্টোবর ২০২৫
গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য দেন সাইকিয়াট্রিক সোশ্যাল ওয়ার্কার জামাল হোসেন/ছবি: জাগো নিউজ

মানবসৃষ্ট কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার ব্যক্তিদের অনেক সাইকোলজিক্যাল সাপোর্ট বা মানসিক সহায়তা প্রয়োজন। তা না দিলে তারা বিভিন্ন মানসিক রোগ থেকে বের হতে পারেন না।

জাগো নিউজ আয়োজিত ‘বিপর্যয়-জরুরি অবস্থায় মানসিক স্বাস্থ্যসেবা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে এসব তথ্য জানান জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সাইকিয়াট্রিক সোশ্যাল ওয়ার্কার জামাল হোসেন। বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে গত বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) এ অনুষ্ঠান হয়।

জামাল হোসেন বলেন, ‘দুর্যোগ-পরবর্তীতে অনেক সেবার প্রয়োজন। রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর দেখেছি, মানুষের কাজে মন বসে না, অলস থাকে, তারা বিভিন্ন বেআইনি কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। দুর্যোগের পর সাইকোলজিক্যাল সাপোর্ট না দিলে মানুষ এসব মানসিক রোগ থেকে বের হতে পারেন না। মানবসৃষ্ট হোক আর প্রাকৃতিক দুর্যোগ হোক, পরবর্তীতে সাইকোলজিক্যাল সাপোর্ট তার লাগবে।’

বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন জাগো নিউজের সম্পাদক কে. এম. জিয়াউল হক। প্ল্যানিং এডিটর মনিরুজ্জামান উজ্জ্বলের সঞ্চালনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ মুনতাসীর মারুফ। আলোচনায় আরও অংশ নেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ডা. নিলুফার আখতার জাহান, সহকারী অধ্যাপক ও শিশু-কিশোর মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সাদিয়া আফরিন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাইকিয়াট্রি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. এস এম জিকরুল ইসলাম, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট মেজবাউল ইসলাম, সিনিয়র স্টাফ নার্স শফিউল আজম, মনের বন্ধুর সিনিয়র কাউন্সেলর মেহেদী মোবারক আমান এবং জাগো নিউজের ডেপুটি এডিটর ড. হারুন রশীদ।

দুর্যোগের পর মানসিক রোগ থেকে বের হতে দরকার সাইকোলজিক্যাল সাপোর্ট

সাভারে রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে জামাল হোসেন বলেন, ‘রানা প্লাজা দুর্ঘটনা এ দেশের জন্য অনেক বড় একটা দুর্যোগ আর আমাদের জন্য শিক্ষা। আমরা মানসিক স্বাস্থ্যসেবাকে শুধু একটা চিকিৎসার আঙ্গিকে দেখি, কিন্তু এটা যে সাইকোসোশ্যাল ইন্টারভেনশন (মনোসামাজিক পদক্ষেপ) তা আমরা রানা প্লাজা দুর্যোগের পর দেখেছি।’

আরও পড়ুন
দুর্যোগে মানসিক স্বাস্থ্য: দ্রুত সেবা ও সচেতনতার ওপর বিশেষ জোর
আশ্বাসে আশান্বিত হতেন মাইলস্টোনে আহতদের স্বজনরা
সাইকিয়াট্রিক নার্সদের দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ জরুরি

এ সাইকিয়াট্রিক সোশ্যাল ওয়ার্কার জানান, দুর্যোগের পর মানুষের মৌলিক চাহিদা হিসেবে দেখা দেয় চিকিৎসা, খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থান। এ ছাড়া মানসিক জরুরি অবস্থা, অর্থনৈতিক সংকট ও মানসিক রোগ- এ তিনটি বিষয়কে মানসিক স্বাস্থ্যসেবায় খুবই গুরুত্বসহকারে দেখা হয়। রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর তারা মানসিক চিকিৎসকরা প্রথমে এ ঘটনাগুলো শুনেন। দুই মাস পর্যন্ত তারা এ সেবার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। ধারাবাহিকভাবে তারা তিনটি ধাপে প্রায় কয়েক মাস ধরে মানসিক চিকিৎসা দিয়েছেন। এতে অনেক রোগীর উন্নতি হয়েছে। পুরোপুরি মানসিক চিকিৎসা দেওয়ার জন্য খাদ্য, পুষ্টি ও অন্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তারা সংযোগ তৈরি করেছেন।

‘রোহিঙ্গা-সংকটের সময় আমরা এভাবেই চিকিৎসা দিয়েছি। দুর্যোগ-পরবর্তী এ সেবাগুলো মানুষের কাছে পৌঁছে গেলে তাদের দীর্ঘমেয়াদি মানসিক অসুস্থতা কমে যাবে,’ যোগ করেন জামাল হোসেন।

আরএএস/একিউএফ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।