দুর্যোগে মানসিক স্বাস্থ্য: দ্রুত সেবা ও সচেতনতার ওপর বিশেষ জোর

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:৩৬ পিএম, ১০ অক্টোবর ২০২৫
বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) জাগো নিউজের আয়োজিত ‘বিপর্যয়-জরুরি অবস্থায় মানসিক স্বাস্থ্যসেবা’ শীর্ষক গোল টেবিল বৈঠকে অংশ নেন অনেকে, ছবি: জাগো নিউজ

দুর্যোগ বা জরুরি পরিস্থিতি শুধু শারীরিক ক্ষতি নয়, মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও বিরূপ প্রভাব ফেলে। বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) জাগো নিউজের আয়োজিত ‘বিপর্যয়-জরুরি অবস্থায় মানসিক স্বাস্থ্যসেবা’ শীর্ষক গোল টেবিল বৈঠকে এই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরা হয়।

জাগো নিউজের প্রধান কার্যালয়ে এই গোলটেবিলের আয়োজন করা হয়। বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ মুনতাসির মারুফ। সম্পাদক কে এম জিয়াউল হকের সভাপতিত্বে ও পরিকল্পনা সম্পাদক মনিরুজ্জামান উজ্জ্বলের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ডা. নিলুফার আখতার জাহান, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ও শিশু-কিশোর মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সাদিয়া আফরিন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট মেসবাউল আলম, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ডা. এস এম জিকরুল ইসলাম, সাইক্রিয়াট্টিক স্যোশাল ওয়ার্কার জামাল হোসেন, সিনিয়র স্টাফ নার্স শফিউল আজম, মনের বন্ধুর সিনিয়র কাউন্সিলর মেহেদী মোবারক আমান এবং জাগো নিউজের ডেপুটি এডিটর ড. হারুন রশিদ।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ডা. নিলুফার আখতার জাহান বলেন, দুর্যোগের মধ্যে প্রায় প্রতিটি মানুষের মানসিক প্রতিক্রিয়া হতে পারে, দুশ্চিন্তা, হতাশা, রাগ, ঘুমের সমস্যা, কাজের প্রতি আগ্রহের অভাব। তবে প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজনের মানসিক সমস্যা দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে, বিশেষ করে যারা আগেই মানসিক রোগে ভুগছেন।

আরও পড়ুন
মানসিক রোগীদের ৯২ শতাংশই চিকিৎসার বাইরে, প্রধান অন্তরায় লজ্জা 
দুর্যোগ পরিস্থিতিতে প্রতি পাঁচজনে একজন মানসিক রোগে আক্রান্ত হন 
যে কোনো বিপর্যয়ে মনের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা জরুরি 

গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, দুর্যোগের পর প্রায় ২২ শতাংশ মানুষ মানসিক সমস্যার মুখোমুখি হন, যার মধ্যে ১৩ শতাংশ মৃদু রোগ যেমন ডিপ্রেসিভ ডিসঅর্ডার, অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার ও অ্যাকিউট স্ট্রেস ডিসঅর্ডার এবং ৯ শতাংশ গুরুতর রোগ যেমন, সিজোফ্রেনিয়া বা বাইপোলার ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত হন। ডিপ্রেসিভ ডিসঅর্ডারের ক্ষেত্রে রোগীরা দীর্ঘ সময় বিষণ্নতায় ভোগেন এবং কখনও কখনও আত্মহত্যার চিন্তা করেন।

শিশু-কিশোরদের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়েও বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন। শিশু-কিশোর মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সাদিয়া আফরিন বলেন, শিশু-কিশোররা কোনোভাবেই প্রাপ্তবয়স্কদের ছোট সংস্করণ নয়। তাদের মানসিক বিকাশের প্রতিটি ধাপে আলাদা চাহিদা থাকে। হঠাৎ স্কুলে না যেতে চাওয়া, বন্ধুদের এড়িয়ে চলা, ঘুম বা খাওয়ায় অরুচি এই লক্ষণগুলো মানসিক চাপের ইঙ্গিত দেয়। তিনি আরও যোগ করেন, মোবাইল ও ইন্টারনেট আসক্তি তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য বড় ঝুঁকি।

জরিপের তথ্য অনুযায়ী, প্রাপ্তবয়স্কদের ১৮.৭ শতাংশ এবং শিশু-কিশোরদের ১২.৬ শতাংশ মানসিক রোগে আক্রান্ত, কিন্তু ৯২ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক এবং ৯৪ শতাংশ শিশু-কিশোর কখনও চিকিৎসা সেবা পাননি।

বৈঠকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয় মানসিক সমস্যার সমাধানের ওপর

১. প্রাথমিক সেবা: মানসিক রোগের প্রাথমিক লক্ষণ চিহ্নিত করে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা।

২. কাউন্সেলিং ও থেরাপি: ডিপ্রেশন, উদ্বেগ বা ইন্টারনেট আসক্তির জন্য বিহেভিয়ার থেরাপি ও কাউন্সেলিং কার্যকর।

৩. সাইকিয়াট্রিক নার্স: সিনিয়র স্টাফ নার্স শফিউল আজম বলেন, নার্সরা রোগীর সঙ্গে সবচেয়ে বেশি সময় কাটান। তাই তাদের প্রশিক্ষণ ও দীর্ঘমেয়াদি সক্ষমতা বাড়ানো মানসিক সেবার জন্য অপরিহার্য।

৪. পরিবার ও কমিউনিটির ভূমিকা: শিশু-কিশোরদের জন্য রুটিন তৈরি, প্রযুক্তি ব্যবহারে নজরদারি এবং আউটডোর/সৃজনশীল কার্যক্রমে উৎসাহিত করা।

ডা. নিলুফার জাহান সতর্ক করে বলেন, যদি মানসিক রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলোকে উপেক্ষা করা হয়, তাহলে সমস্যার প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে। দুর্যোগের সময় মানসিক স্বাস্থ্য সেবা প্রয়োজনীয় এবং তা দ্রুত কার্যকর করা জরুরি।

গোল টেবিলে আরও আলোচনা হয় আইনি জটিলতা, আত্মহত্যা সম্পর্কিত সচেতনতা এবং মানসিক স্বাস্থ্য সেবার জন্য প্রয়োজনীয় সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ প্রসঙ্গে। বিশেষজ্ঞরা সবশেষে সবার জন্য মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি এবং দ্রুত সেবার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে আহ্বান জানান।

এসইউজে/এসএনআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।