জেলেনস্কির বিরুদ্ধে ইউক্রেনে ব্যাপক বিক্ষোভ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯:২৪ পিএম, ২৩ জুলাই ২০২৫
সোমবার (২২ জুলাই) জেলেনস্কির বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামে হাজারও মানুষ/ ছবি: এএফপি

রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধবিরতির আলোচনার প্রস্তুতির মধ্যেই ইউক্রেনজুড়ে বড় ধরনের দুর্নীতিবিরোধী বিক্ষোভের মুখে পড়েছেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। বিতর্কিত এক নতুন আইন পাস করে সই করার পর তার বিরুদ্ধে ‘ক্ষমতা কেন্দ্রীকরণের’ অভিযোগ উঠেছে, যা ইউক্রেনের ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) যোগদানের আশাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।

মঙ্গলবার (২২ জুলাই) জেলেনস্কি ইউক্রেনের পার্লামেন্টে পাস হওয়া একটি আইন অনুমোদন করেন, যার মাধ্যমে দুর্নীতিবিরোধী দুই স্বাধীন সংস্থা- ন্যাশনাল অ্যান্টি-করাপশন ব্যুরো (এনএবিইউ) এবং স্পেশালাইজড অ্যান্টি-করাপশন প্রসিকিউটরস অফিসকে (এসএপিও) সরাসরি অ্যাটর্নি জেনারেলের অধীনস্থ করা হয়।

২০১৪ সালের ইউরোপপন্থী মাইদান বিপ্লবের পর এনএবিইউ ও এসএপিও প্রতিষ্ঠিত হয় দুর্নীতি নির্মূল ও গণতান্ত্রিক সংস্কার নিশ্চিত করতে। ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) যোগদানের পথে এগোতে এগুলো গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা হিসেবে বিবেচিত।

এই আইনের প্রতিবাদে মঙ্গলবার রাজধানী কিয়েভসহ ইউক্রেনের বড় বড় শহরে হাজারো মানুষ বিক্ষোভে নামেন। রাতের কারফিউ ভেঙেও চলে বিক্ষোভ।

ইউরোপীয় কমিশনের এক মুখপাত্র সতর্ক করে বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত ইউক্রেনের ইইউ সদস্যপদ পাওয়ার পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। ইউক্রেনের জন্য বরাদ্দ ইউরোপীয় সহায়তা সরাসরি স্বচ্ছতা, বিচার সংস্কার ও গণতান্ত্রিক শাসনের ওপর নির্ভরশীল বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

স্বচ্ছতা বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের ইউক্রেন শাখা এটিকে দুর্নীতিবিরোধী সংস্কার থেকে ‘গুরুতরভাবে পিছিয়ে যাওয়া’ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পথে ‘একটি সরাসরি হুমকি’ বলে আখ্যায়িত করেছে।

আইন পাসের আগে সোমবার এনএবিইউ’র কর্মকর্তা ও কার্যালয়ে অভিযান চালায় ইউক্রেনের নিরাপত্তা সংস্থা (এসবি) ও অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস। SAPO-তেও গোপন নথিপত্র ব্যবস্থাপনা নিয়ে তদন্ত শুরু হয়।

রুশ প্রভাব নির্মূলের জন্যই আইন: জেলেনস্কি

জেলেনস্কি এই পদক্ষেপকে যৌক্তিকতা দেওয়ার চেষ্টা করে বলেন, দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাগুলোর ভেতরে রুশ প্রভাব ও অনুপ্রবেশ দূর করতেই এই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, দুর্নীতিবিরোধী অবকাঠামো কাজ করে যাবে- তবে রুশ প্রভাব ছাড়া। সবকিছু এই প্রভাব থেকে মুক্ত করতে হবে। আরও বেশি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

জেলেনস্কি অভিযোগ করেন, বহু দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারি কর্মকর্তা ইউক্রেন থেকে পালিয়ে বিদেশে বিলাসবহুল জীবন যাপন করছেন, অথচ তাদের বিরুদ্ধে কোনো বিচার হয়নি। এটা অস্বাভাবিক ও কেন কয়েকশ কোটি ডলারের মামলাগুলো বছরের পর বছর ঝুলে আছে তার কোনো ব্যাখ্যা নেই।

সমাজের ক্ষোভ স্বীকার, কর্মপরিকল্পনার ঘোষণা

বুধবার (২৩ জুলাই) জেলেনস্কি জানান, তিনি দেশের সব আইনপ্রয়োগকারী ও দুর্নীতিবিরোধী সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আগামী সপ্তাহে একটি ‘গভীর কর্মপরিকল্পনা বিষয়ক’ বৈঠক হবে ও দুই সপ্তাহের মধ্যে একটি সম্মিলিত পরিকল্পনা ঘোষণা করা হব, যার লক্ষ্য হবে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, বিদ্যমান সমস্যাগুলোর সমাধান ও ইউক্রেনীয় সমাজের স্বার্থ সুরক্ষা।

অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক উদ্বেগ

জেলেনস্কির নিজ দলের সংসদ সদস্য ও সংসদের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির প্রধান ওলেক্সান্দার মেরেজকো এবিসি নিউজকে জানান, তিনি আইনটির পক্ষে ভোট দিলেও কিছু উদ্বেগ রয়েছে। মেরেজকো বলেন, আমি প্রেসিডেন্টকে বিশ্বাস করি। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আমাদের সদস্যপদ আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে কিছু বিষয় ব্যাখ্যার প্রয়োজন রয়েছে।

ইউক্রেনের এক সাবেক কর্মকর্তা বলেন, আমরা যুদ্ধ হেরে যাচ্ছি শুধু পশ্চিমা অস্ত্রের অভাবে নয়, বরং দুর্নীতি, পেশাদার ব্যবস্থাপনার অভাব ও মানুষ জেলেনস্কির একনায়কতন্ত্রের জন্য লড়াই করতে চায় না বলেই হারছি।

বিরোধীদের প্রতিক্রিয়া

দুর্নীতিবিরোধী কর্মী ভিতালি শাবুনিন আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, প্রেসিডেন্টের হাতে মনোনীত অ্যাটর্নি জেনারেল এখন প্রেসিডেন্টের বন্ধুদের বিরুদ্ধে থাকা সকল তদন্ত বন্ধ করতে পারবেন।

কিয়েভের মেয়র ভিতালি ক্লিচকো এই আইনকে ইউক্রেনকে ‘ইইউ ও গণতন্ত্র থেকে আরও দূরে নিয়ে যাওয়া পদক্ষেপ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, যেসব লোক এই আইন সমর্থন করছে তারা যুদ্ধের সুযোগে ইউক্রেনকে একনায়কতন্ত্রে ঠেলে দিচ্ছে, দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ধ্বংস করছে, স্থানীয় সরকারকে দুর্বল করছে এবং কর্মী ও সাংবাদিকদের মুখ বন্ধ করছে।

সূত্র: এবিসি নিউজ

এসএএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।