আল-আজহারের ইসরায়েলবিরোধী বিবৃতি চাপ দিয়ে প্রত্যাহার করিয়েছেন সিসি
মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম প্রভাবশালী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যান্ড ইমাম আহমদ আল-তায়েবকে চাপ দিয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দেওয়া এক বিবৃতি প্রত্যাহার করিয়েছে মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির প্রশাসন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আইকে দুটি ভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের হস্তক্ষেপেই বিবৃতিটি সরিয়ে নিতে বাধ্য হয় আল-আজহার কর্তৃপক্ষ।
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) আল–আজহার এক বিবৃতিতে গাজায় ইসরায়েলি অবরোধের কারণে ফিলিস্তিনিদের অনাহারকে ‘গণহত্যার উদ্দেশ্যে নৃশংসতা’ হিসেবে উল্লেখ করে নিন্দা জানায়। সেই বিবৃতিতে গাজার সংকট সমাধানে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সক্রিয় হস্তক্ষেপ দাবি করা হয়েছিল।
তবে তার একদিন পরে বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, বিবৃতিটি প্রত্যাহার করা হয়েছে। তারা বলছে, চলমান ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধবিরতির আলোচনা যেন বাধাগ্রস্ত না হয়, সেই বিবেচনায় বিবৃতিটি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, নিরপরাধ মানুষের জীবন বাঁচানোর কথা ভেবেই বিবৃতিটি প্রত্যাহার করা হয়েছে।
তবে মিডল ইস্ট আইয়ের দুটি সূত্র বলছে, এই সিদ্ধান্ত ছিল রাজনৈতিক চাপের ফল। সূত্রগুলো জানায়, বিবৃতি প্রকাশের কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রেসিডেন্ট সিসির কার্যালয় থেকে ‘অনুরোধ’ আসে সেটি মুছে ফেলার জন্য। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার অনুমতি না থাকায় তারা নাম প্রকাশ করতে চায়নি।
আল-আজহার তাদের বিবৃতিতে গাজার বর্তমান মানবিক সংকটের জন্য তৃতীয় পক্ষগুলোকেও দায়ী করেছিল এবং পুরো পরিস্থিতিকে ‘সম্পূর্ণ গণহত্যা’ বলে আখ্যা দিয়েছিল। দীর্ঘদিন ধরে আল-আজহার ইসরায়েল ইস্যুতে সচরাচর প্রকাশ্যে অবস্থান না নিলেও, এবার তাদের কঠোর ভাষায় বিবৃতি দেওয়া নজর কাড়ে আন্তর্জাতিক মহলে।
এদিকে, মুসলিম দুনিয়ার অন্যতম ধর্মীয় সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল মুসলিম স্কলার্স ইউনিয়নের মহাসচিব আলী আল-কারদাগি আল-আজহারের বিবৃতি প্রত্যাহারকে ‘অন্যায়’ ও ‘গভীর উদ্বেগজনক’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, মানবতা ও ধর্মীয় নৈতিকতার কণ্ঠ রোধের এক মরিয়া প্রচেষ্টা চলছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, গাজাবাসীর পক্ষে দেওয়া বিবৃতি সরিয়ে ফেলা অনৈতিক ও দুঃখজনক।
এই ঘটনায় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। নেদারল্যান্ডসে বসবাসরত কিছু অধিকারকর্মী মিসরের দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভে অংশ নেন। মিশরীয় মানবাধিকারকর্মী আনাস হাবিব হেগ শহরে মিসরীয় দূতাবাসের গেটে শিকল লাগিয়ে প্রতিবাদ করেন ও প্রেসিডেন্ট সিসিকে ‘নিষ্ঠুর ও প্রতারক’ হিসেবে অভিহিত করেন।
ইসরায়েল গত ২ মার্চ থেকে গাজায় কঠোর অবরোধ আরোপ করে রেখেছে। এর ফলে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার ত্রাণ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, অবরোধের কারণে এখন পর্যন্ত অনাহারে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১১৫ জনের, যার মধ্যে ৮০ জনই শিশু। শুধু সোমবারই (২১ জুলাই) অপুষ্টিতে মৃত্যু হয়েছে ১৫ জনের।
এই পরিস্থিতিতে আল-আজহারের বিবৃতি প্রত্যাহারকে অনেকেই রাজনৈতিক সমঝোতার অংশ হিসেবে দেখছেন, যা মানবিক সংকটের মুহূর্তে নৈতিক অবস্থান থেকে সরে আসার ইঙ্গিত দেয়।
সূত্র: মিডল ইস্ট আই
এসএএইচ