২০১৫ সালে জাহাজডুবিতে অভিবাসি মৃত্যুর হার ৩০ গুন বেশি
শনিবার ভুমধ্যসাগরে জাহাজডুবির ঘটনায় প্রায় ৮০০ অভিবাসি ও শরণার্থীর মৃত্যু, এ যাবৎ ঘটে যাওয়া সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনা। আন্তর্জাতিক সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী ৮৫০ জন যাত্রী নিয়ে উত্তর আফ্রিকা থেকে ইউরোপ যাওয়ার পথে সর্বশেষ ঘটা ঐ নৌ দুর্ঘটনায় মাত্র ২৮ জন প্রাণে বেঁচেছেন।
ভূমধ্যসাগরে জাহাজডুবিতে প্রাণে বেঁচে যাওয়া ২৮জন ভাগ্যবানকে ইতালির সিসিলির ক্যাটানিয়ায় নেয়া হয়েছে। তাদের বেশিরভাগই সাব সাহারান আফ্রিকার মালি, গাম্বিয়া, আইভরি কোস্ট, ইরিত্রিয়া, সেনেগাল ও সিয়েরা লিওনের। বাংলাদেশ এবং তিউনিসিয়ার অভিবাসিও রয়েছেন বলে স্থানীয় কতৃপক্ষের ধারণা।
বেঁচে যাওয়াদের সঙ্গে ক্যাটানিয়ায় পাঠানো হয় ডুবে যাওয়া জাহাজ থেকে উদ্ধার করা ২৫টি মৃতদেহ। ভুমধ্যসাগরের এই হৃদয়বিদারক ও বিয়োগান্তক ঘটনা সপ্তাহটিকে সকলের কাছে বেদনা বিধুর করেছে।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা জানিয়েছে এপ্রিলের ১৪ তারিখে মাল্টার দক্ষিনে নৌকাডুবিতে ৪০০ অভিবাসি নিহত হয়েছিল। কয়েকদিন পর মারা যায় ৫০ জন। সংস্থার মুখপাত্র জোয়েল মিলম্যান বলেন ২০১৫ সালে এ পর্যন্ত ১ হাজার ৭২৭ জন অভিবাসির মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে বছরটি ইতোমধ্যেই মৃত্যুর সাল হিসাবে চিহ্নিত হয়ে গেল।
“সংস্থার হিসাব অনুসারে সর্বসাম্প্রতিক ঘটনার পর ২০১৫ সালে মৃত্যুর হার আগের বছরের চেয়ে অন্তত ৩০ গুন বেশি। গত বছর এই সময়ে ভূমধ্যসাগরে ৫৬ টি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এপ্রিলের শেষে ৯৬ জন অভিবাসি মারা যাওয়ার রেকর্ড ছিল। আর সেটি ছিল ঐ বছরের সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনা। সংস্থা বলেছে ২০১৪ সালে ভূমধ্যসাগর দিয়ে সব মিলে ৩ হাজার ২৭৯জন অভিবাসি অতিক্রম করেছিল। আর এ বছর কয়েক সপ্তাহেই সে সংখ্যা অতিক্রম করবে এবং বছরের শেষ দিকে এ সংখ্যা ৩০ হাজারের মত গিয়ে দাঁড়াতে পারে”।
জাতিসংঘ শরনার্থী সংস্থার মতে ৮ শয়েরও বেশী অভিবাসির মৃত্যু, ইউরোপের জন্য সতর্ক সংকেত; যার মধ্য দিয়ে ভূমধ্যসাগরে এই মর্মান্তিক মৃত্যুর কারণ খুঁজে বের করা ও তা বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দিক নির্দেশনা আসতে পারে।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন মন্ত্রীবর্গের তরফে দেয়া ১০-দফা প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন জাতিসংঘ কর্মকর্তারা। ইউএনএএইচসিআরের আন্তর্জাতিক সুরক্ষা বিষয়ক পরিচালক ভল্কার টার্ক বলেন ঐ পরিকল্পনায়, আশ্রয় প্রার্থীদের সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিৎ।
“বিভিন্ন সহযোগিতার মধ্যে রয়েছে আইন-শৃংখলা রক্ষা, চোরাচালান ও মানব পাচার বিষয়গুলি। আমরা বিশ্বাস করি ইউরোপের নিকটবর্তী এলাকায় নানা ধরণের আঞ্চলিক সমস্যা রয়েছে; যার কারণে স্থানচ্যুতিকরণের ঘটনা বন্ধ হবার নয়। কিছু পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে দেখা যায় আমরা যে বৈশ্বিক স্থানচ্যুতি নিয়ে কথা বলি, তার সঙ্গেও ইউরোপ সম্পৃক্ত। মানবাধিকার ও মানবীয় মর্যাদা’র ভিত্তিতে ইউরোপিয়ন মূল্যবোধের ওপর প্রতিষ্ঠিত, ইউরোপিয়ান নেতৃত্বের এখন এ সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসা দরকার”।
ভল্কার বলেন ইউএনএইচসিআর আশা করে ইউরোপিয়ন ইউনিয়ন, অভিবাসিদের সুরক্ষায় আরো সুদির্নিষ্ট পরিকল্পনা সংযুক্ত করবে। এর মধ্যে থাকতে পারে শরণার্থীদের পুনর্বাসন, মানবাধিকার নিশ্চিতকরণ এবং অভিবাসিদের ইউরোপে প্রবেশের বিকল্প বৈধ পথ বের করার পরিকল্পনা। তিনি বলেন তল্লাসী এবং উদ্ধার অভিযান বাড়ানো দরকার এবং অভিবাসিদের সম্পর্কে ভালোভাবে খোঁজ খবর করা উচিৎ, যাতে তারা আন্তর্জাতিক সুরক্ষা পাওয়ার যোগ্য হয়।
ভূমধ্যসাগর অতিক্রমকারী অভিবাসিরা বর্তমানে সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় যাচ্ছেন গ্রিস, ইতালি এবং মাল্টায়। ভল্কার বলেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের উচিৎ আশ্রয় প্রার্থীদেরকে তাদের সদস্য রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে সুষ্ঠুভাবে ভাগ করে নেয়া। তার মতে এখন পর্যন্ত সিরিয়া থেকে আসা শরণার্থীর বেশিরভাগ আশ্রয় পাচ্ছেন জার্মানি এবং সুইডেনে।
এসআরজে