কন্টেইনার ভিত্তিক পরিবহনের খরচ বেড়েছে
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে কন্টেইনার হল ভবনের ইটের মতো। আর এই মূহূর্তে মালামাল লেনদেনকারীরা পর্যাপ্ত পরিমাণে কন্টেইনার পাচ্ছেন না। পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি ও এশীয় বন্দরগুলোতে খালি কন্টেইনারের ঘাটতির কারণে কন্টেইনার ভিত্তিক পরিবহনের খরচ এখন আকাশমুখী। গত নভেম্বর থেকে একটি ৪০ ফুট কন্টেইনারের এশিয়া থেকে ইউরোপে পরিবহনের খরচ বেড়েছে তিন গুনেরও বেশি- ২ হাজার ২শ’ ডলার থেকে ৭ হাজার ৯শ’ ডলার। উত্তর আমেরিকা থেকে এশিয়াতে কন্টেইনার পরিবহনের খরচ বেড়েছে দ্বিগুণ। ১২টি গুরুত্বপূর্ণ পথে কন্টেইনার ভিত্তিক পরিবহনের খরচ দেখানো ফ্রেইটোস বাল্টিক সূচকে দেখা যায়, প্রতি কন্টেইনারের দাম ২ হাজার ২শ’ থেকে ৪ হাজার ডলার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।
এক বছর আগে কন্টেইনার ভিত্তিক পরিবহন শিল্প টিকে থাকার লড়াইয়ে ছিল। করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে বিভিন্ন দেশের সরকার লকডাউন কার্যকর করার পর বৈশ্বিক অর্থনীতি সংকুচিত হয়ে পড়ে। এর ফলে পণ্য পরিবহনের প্রতিষ্ঠানগুলো জাহাজ ফেলে রাখতে ও সমুদ্র যাত্রা বাতিল করতে বাধ্য হয়। গত বছরের দ্বিতীয়ার্ধে যখন চাহিদা আবার বাড়তে থাকে এবং কারখানাগুলো পূর্ণগতিতে উৎপাদন শুরু করে, তখন ইউরোপ ও আমেরিকার বন্দরগুলোতে হাজার হাজার কন্টেইনার পড়ে ছিল। অথচ এশিয়াতেই তখন কন্টেইনার বেশি দরকার ছিল। পশ্চিমা ভোক্তাদের ছুটি যখন শেষ হল এবং তাদের জমানো অর্থ দিয়ে মোবাইল, ল্যাপটপসহ অন্যান্য পণ্য কেনা শুরু করলেন, তখন রফতানীকারকদের প্রচুর কন্টেইনার দরকার পড়ল। আর তখনই কন্টেইনার ভিত্তিক পরিবহনের খরচ গেল বেড়ে।
এমনকি চীনের রফতানীকারকরা কন্টেইনারের ঘাটতিতে পড়েছেন, বন্দরের বিভিন্ন জায়গায় পণ্যের বাক্স জমা হচ্ছে। অনেক বন্দরেই পণ্য জমা হচ্ছে কিন্তু কন্টেইনারের ঘাটতির কারণে নির্ধারিত সময়ে তা পরিবহন করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে দামও বেড়ে যাচ্ছে। সমুদ্রের পণ্য পরিবহন বিষয়ক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সিইন্টেলিজেন্স এর তথ্যমতে, নভেম্বরে মাত্র ৫০ শতাংশ কন্টেইনার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পৌঁছেছিল। প্রতিষ্ঠানটি ২০১১ সালে তাদের হিসাব রাখা শুরুর পর থেকে এটি সর্বনিম্ন হার। বিমান ভিত্তিক পরিবহন কমে যাওয়ার কারণে বাজার এখনো সংকুচিত রয়েছে। যাত্রীবাহী বিমানের চলাচল কম হওয়ার কারণে, যেসব মালামাল সাধারণত বিমানে করে পাঠানো হত, সেগুলোকে এখন জাহাজে করে পাঠানোর জন্য লড়াই করতে হবে।
করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন প্রদান শুরু ও মহামারির নিষেধাজ্ঞা শিথিল হওয়ার কারণে ভোক্তারা এখন রেস্টুরেন্ট, হোটেল ও অন্যান্য সেবায় আবার অর্থ ব্যয় করা শুরু করবেন। এর ফলে পণ্য রফতানীকারকদের ওপর চাপ কমবে। তবে এর আগ পর্যন্ত কন্টেইনারের ঘাটতি থেকে যাবে।
এমকে/জেআইএম