করোনা বিধিনিষিধে পশ্চিমবঙ্গের লোকালয়ে হায়েনা, ময়ূর, হরিণ
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে করোনা সংক্রান্ত বিধিনিষেধের কারণে রাস্তায় যান চলাচল বেশ কমে গেছে। কমেছে মানুষের চলাফেরাও। এই পরিস্থিতিতে পুরুলিয়া জেলার জঙ্গল-ঘেঁষা লোকালয়ের কাছে বন্যপ্রাণিদের আনাগোনা বেড়েছে। দেখা মিলছে হায়েনা, ময়ূর, বনের পাখি ও সরীসৃপের। একটি এলাকায় উদ্ধার হয়েছে লোকালয়ে ঢুকে পড়া চিত্রা হরিণ।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইতোমধ্যেই ঝালদা এলাকার স্কুল শিক্ষক মৃন্ময় দাসের তোলা হায়েনার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। গত মঙ্গলবার বিকেলে ঝালদার দুই অরণ্যপ্রেমী তাপস কর্মকার এবং বিনয় রুংটার সঙ্গে অদূরে শিকরা পাহাড়ের কাছে গিয়েছিলেন মৃন্ময়। সেখানেই হায়েনার মুখোমুখি হন তারা।
মৃন্ময় বলেন, ‘আমি চাকরি সূত্রে কয়েক বছর আগে ঝালদায় এসেছি। এ অঞ্চলে কিছু বন্যপ্রাণি এখনও টিকে আছে বলে শুনেছিলাম। কিন্তু আগে কখনও চোখে দেখিনি। সম্প্রতি লকডাউনের মতো পরিস্থিতির কারণে বিকেলের পর এলাকা নির্জন হয়ে পড়ে। তাই সেগুলি দেখতে পাচ্ছি। ছবিতে তুলতে পারছি।’
তাপস জানান, শুধু হায়েনা নয়, করোনা পরিস্থিতিতে তারা ক্যামেরা-বন্দি করেছেন শিয়াল, খেঁকশিয়াল, ময়ূর, ভারতীয় ধূসর ধনেশ, পেইন্টেড স্পারফাউল, মালকোহা প্রভৃতি নানা প্রাণি। পাহাড়ের খাঁজে অজগরের পাশাপাশি পেয়েছেন গ্রিন পিট ভাইপারের মতো দক্ষিণবঙ্গে বিরল সাপও।
সম্প্রতি পুরুলিয়ার একাধিক বনাঞ্চলে ভারতের প্রাণিবিজ্ঞান জরিপের (জেডএসআই) গবেষকদের বসানো ট্র্যাপ ক্যামেরায় ধরা পড়েছিল হায়েনা এবং ধূসর নেকড়ের ছবি। বন্যপ্রাণ সমীক্ষক সংস্থা ‘হিউম্যান অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট অ্যালায়েন্স লিগ’ (হিল) সম্প্রতি পুরুলিয়ার ঝালদা ও বাঘমুন্ডি ব্লকের জঙ্গল-ঘেঁষা অসংরক্ষিত এলাকাগুলোতে হায়েনার উপস্থিতির খোঁজ শুরু করেছে। পাশাপাশি, হায়না ও মানুষের সংঘাতের কারণগুলোও অনুসন্ধান করছে তারা। সংগঠনের সম্পাদক শুভ্রজ্যেতি চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘ঝালদা ও বাঘমুন্ডি ব্লকের বেশ কয়েকটি এলাকায় আমরা ইতোমধ্যেই হায়েনার খোঁজ পেয়েছি। ছবিও তুলতে পেরেছি।’
বন দফতরের ঝালদার রেঞ্জার বিশ্বজিৎ দে বলেন, ‘হায়নার ভিডিওটি আমিও দেখেছি। যে এলাকায় এটি দেখা গেছে, সেখানে আমাদের কর্মীরা নজর রাখছেন। সরকারি বনসৃজন প্রকল্পের কারণে এই অঞ্চলে জঙ্গল যেমন বেড়েছে, ঠিক তেমনভাবে বন্যপ্রাণও বেড়েছে।’
তিনি জানান, কয়েকদিন দিন আগে পুরুলিয়ার তুলিন এলাকা থেকে চিত্রা হরিণ উদ্ধার করেছে পুলিশ এবং বন দফতর।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
এমকে/এএসএম