ঈদের ছুটিতে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষার খেসারত দিচ্ছে ইন্দোনেশিয়া

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:১৬ পিএম, ১৬ জুলাই ২০২১

দমকলকর্মীরা আগুন নেভানোর বদলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে মরদেহ বের করছেন, হাসপাতালগুলো নতুন রোগী ভর্তি করছে না, মেডিক্যাল অক্সিজেনেরও তীব্র সংকট- অনাকাঙ্ক্ষিত হলেও এটিই এখন ইন্দোনেশিয়ার দৈনন্দিন চিত্র। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনগোষ্ঠীর দেশ ভারতকে ছাড়িয়ে সম্প্রতি এশিয়ায় করোনাভাইরাস মহামারির নতুন উপকেন্দ্র হয়ে উঠেছে ইন্দোনেশিয়া। ভারতে যেমন করোনা বিস্ফোরণের জেরে সারি সারি চিতা জ্বালানোর দৃশ্য দেখা গিয়েছিল, অনেকটা সেভাবেই সারি সারি নতুন কবর খোঁড়া হচ্ছে বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম জনগোষ্ঠীর দেশ ইন্দোনেশিয়ায়। খবর বিবিসির।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বিপদের শুরুটা হয়েছিল ঈদুল ফিতরের ছুটির হাত ধরে। গত ঈদে ইন্দোনেশিয়ায় করোনাবিধি অমান্য করে অন্তত ১৫ লাখ লোক ছুটি কাটাতে বিভিন্ন শহরে ছুটেছিলেন। আজ তারই খেসারত দিচ্ছে দেশটি। তাদের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও পৌঁছে গেছে অতিসংক্রামক ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট।

jagonews24

ইন্দোনেশিয়ায় এ পর্যন্ত ২৭ লাখের বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে চলতি সপ্তাহে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে। রোগীর চাপে ভেঙে পড়তে বসেছে দেশটির স্বাস্থ্যব্যবস্থা।

মরদেহ বের করছে দমকল বাহিনী
জাকার্তায় দীর্ঘদিন ধরে দমকল কর্মীর কাজ করেন উইরাওয়ান। তবে গত বছর থেকে আগুন নেভানোর বদলে তাকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মরদেহ তোলার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। শুধু তিনিই নন, একই কাজ করছেন দমকল বাহিনীর আরও অনেক কর্মী।

উইরাওয়ান জানান, ভুক্তভোগীদের মধ্যে অনেকেরই মৃত্যু হচ্ছে পুরোপুরি একাকী অবস্থায়। সম্ভবত চিকিৎসা না পেয়ে ঘরের ভেতর ধুঁকে ধুঁকে মারা যাচ্ছেন তারা।

উইরাওয়ান বলেন, অনেক সময় প্রতিবেশীরা আমাদের কল দিয়ে বলেন, তারা আইসোলেশনে থাকা ব্যক্তিকে দেখতে পাচ্ছিলেন না। পরে আবিষ্কার করেন, তিনি মারা গেছেন। এ ধরনের ঘটনা আমরা রোজ দেখছি।

jagonews24

সাম্প্রতিক ঊর্ধ্বগতির আগে দৈনিক দুই থেকে তিনটি মরদেহ সৎকারের ব্যবস্থা করতে হতো এ দমকলকর্মীকে। এখন তিনি প্রতিদিন ২৪টির মতো কল পাচ্ছেন, যা তার ক্ষমতার বাইরে।

দায়ী সরকারের ঢিলেঢালা মনোভাবও
ইন্দোনেশিয়ায় ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতির পেছনে বড় দায় রয়েছে তাদের সরকারেরও। দেশটি কখনোই আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ করেনি। কেবল কোয়ারেন্টাইনের সময় আটদিন করা হয়েছে সম্প্রতি, এতদিন এর বাধ্যবাধকতা ছিল পাঁচদিনের। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সীমান্ত খোলা রেখে করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।

সরকারি হিসাবে, ইন্দোনেশিয়ায় করোনায় মৃত্যু ৭০ হাজার ছাড়িয়েছে। গত সপ্তাহ থেকে সেখানে দৈনিক মৃত্যু হচ্ছে এক হাজারের বেশি মানুষের। অবশ্য বিভিন্ন মহলের দাবি, দেশটিতে করোনায় মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা এরচেয়েও অনেক বেশি।

jagonews24

ইন্দোনেশিয়ার একটি স্বতন্ত্র তথ্য বিষয়ক সংগঠন বলছে, গত জুন থেকে এ পর্যন্ত অন্তত সাড়ে চারশ মানুষ বাড়িতে মারা গেছেন, যারা হাসপাতালে জায়গা না পেয়ে সেলফ-আইসোলেশনে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন।

অক্সিজেন সংকট
ইন্দোনেশিয়ায় করোনা সংক্রমণের অন্যতম প্রধান হটস্পট জাভা দ্বীপ। জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহান্তে ইয়োগাকার্তার একটি হাসপাতালে অক্সিজেন ফুরিয়ে গেলে ছটফট করতে করতে মারা যান ৬৩ জন করোনা রোগী। এ ঘটনা গোটা দেশে তোলপাড় সৃষ্টি করে। এরপর বেশ কয়েকটি হাসপাতাল অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে নতুন রোগী ভর্তি বন্ধ করে দেয়।

ইন্দোনেশিয়ার জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণের পরিস্থিতি এতটা খারাপ হবে, সেটি সরকার অনুমান করতে ব্যর্থ হয়েছে। সেজন্যই অক্সিজেনের সংকট দেখা দিয়েছে।

কেএএ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।