মহামারিতেও চাঙা যেসব দেশের অর্থনীতি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭:০১ পিএম, ২৯ ডিসেম্বর ২০২১

২০২০ সালে ব্যাপক মন্দার মধ্যেও কিছু দেশের অর্থনীতির গতি দেখে অনেকেই অবাক হয়েছেন। কয়েক মাস আগে ওইসিডিভুক্ত ৩৮টি দেশ সম্মিলিতভাবে সম্ভবত তাদের সংকটপূর্ণ মুহূর্ত কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে। ওইসিডির অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর বেকারত্বের হার ছিল ৫.৭ শতাংশ যা গড়ে যুদ্ধপরবর্তী অবস্থার গড় সীমানায় রয়েছে বলা যায়।

সম্মিলিতভাবে পারিবারিক আয়, মুদ্রাস্ফীতির সমন্বয় সাধনের বিষয়টি বেশ সংকটপূর্ণ অবস্থায় ছিল। কিন্তু কয়েক মাস আগেই সেই সংকট কাটিয়ে উঠেছে। বছরব্যাপী করোনাভাইরাসের বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্টের আবির্ভাব ঘটলেও পুরো চিত্র প্রায় একই। তবে এখানেও বেশ পার্থক্য রয়েছে। মহামারি একইসঙ্গে যেমন বিভিন্ন দেশকে সমৃদ্ধির দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছে, তেমনি অনেক দেশের অর্থনীতিতেও ধস নেমে এসেছে। আর এই পার্থক্যগুলো ২০২২ সালে গিয়ে আরও স্পষ্ট হবে।

২৩টি ধনী দেশের ৫টি অর্থনৈতিক ও আর্থিক সূচক নিয়ে এই পার্থক্যগুলো মূল্যায়ন করেছে দ্য ইকোনোমিস্ট। এগুলো যথাক্রমে- জিডিপি, প্রতিটি পরিবারের আয়, শেয়ারবাজারের অবস্থা, মূলধনায়িত ব্যয় এবং সরকারের ঋণগ্রহণের পরিমাণ। প্রত্যেকটি সূচক কেমন কাজ করছে এর ওপর ভিত্তি করে দেশগুলোর অর্থনৈতিক অবস্থার তালিকা দেখানো হয়েছে। কিছু দেশের অর্থনীতি তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে।

কিছু দেশ আগে যতটা ছিল, মহামারির সময় প্রত্যেকটি সূচকের ক্ষেত্রেই ভালো করেছে। ডেনমার্ক, নরওয়ে, সুইডেন প্রায় কাছাকাছি ও ভালো অবস্থায় রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও মোটামুটি ভালো অবস্থানেই আছে। ইউরোপের অনেক বড় বড় দেশ যেমন- ব্রিটেন, জার্মানি ও ইতালি একেবারে খারাপ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেছে। তবে সবচেয়ে বিপর্যয় দেখা গেছে স্পেনে।

২০১৯ সালের শেষের দিকে সামগ্রিক অর্থনীতির একটি চিত্র পাওয়া যায়। ভ্রমণ বন্ধ রাখায় বিশেষ করে ইউরোপের দক্ষিণাংশের যেসব দেশ ব্যাপকভাবে পর্যটননির্ভর তাদের অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা এসেছে এবং সেবা ব্যবস্থায় প্রচুর খরচের কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে গেছে।

বেলজিয়াম ও ব্রিটেনসহ অন্যান্য অনেক দেশে করোনা সংক্রমণ এবং মৃত্যুর হার অনেক বেশি। ফলে এসব দেশের ভোক্তাদের ব্যয় সীমিত হয়ে পড়ে। কীভাবে স্বচ্ছল পরিবারগুলো ব্যয়নির্বাহ করেছে, এটা কেবল পরিবারের আয়ের পরিবর্তনের বিষয়কে তুলে ধরে না। এর সঙ্গে সরকারি সাহায্য-সহযোগিতার ব্যাপারগুলোও জড়িত। সাম্প্রতিক এই মন্দায় জনসাধারণের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় তারা কীভাবে এর সঙ্গে সমন্বয় করেছে তা দেখানো হয়েছে।

কিছু দেশ যেখানে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা কিছুটা কম ছিল, সেসব জায়গায় শ্রমবাজারে কোনো সমস্যা হয়নি। সেখানে লোকজনের আয়রোজগার করার সুযোগ ছিল। মহামারি শুরুর সময়কালে জাপানের বেকারত্বের হার কিছুটা ওঠানামা করেছে। এদিক থেকে তুলনামূলকভাবে স্পেনে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত বেকারত্বের এই হার বেড়ে হয়েছে ৩ শতাংশ।

লোকজনের উপার্জনের উপায় না থাকায় কিছু দেশের সরকার তাদেরকে বিপুল পরিমাণে নগদ অর্থ পাঠিয়ে সহযোগিতা করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে এই চিত্র দেখা গেছে। লকডাউনে অর্থনীতি অচল হয়ে বেকারত্ব বেড়ে যাওয়া পরিবারগুলোকে চলতি বছর ও আগের বছরে ২ ট্রিলিয়নের বেশি অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

কানাডাও একই কাজ করেছে। অন্যান্য দেশগুলো, যেমন- বাল্টিক দেশগুলো নগদ অর্থের প্রবাহ বজায় রাখতে বা স্বাস্থ্যসেবা ঠিক রাখতে তাদের নিজেদের আর্থিক সক্ষমতায় নজর দিয়েছে। এক্ষেত্রে অস্ট্রিয়া ও স্পেন লোকজনকে চাকরিতে বহাল রাখা তো দূরের কথা, ক্ষতিপূরণও দিতে পারেনি। মহামারির আগেই এই দুদেশের পারিবারিক আয় শতকরা ৬ ভাগের নিচে নেমে আসে।

মহামারিতে বিভিন্ন কোম্পানিগুলোর অবস্থা কেমন ছিল? পুঁজিবাজারের ওঠানামা তাদের ওপর প্রভাব বিস্তার করেছে। এমনকি বিভিন্ন দেশের আগ্রহের ক্ষেত্র হলো বৈদেশিক বিনিয়োগকারী। ব্রিটেনের বাজারে শেয়ারের মূল্য মহামারির সময়গুলোর তুলনায় এখন আরো কম।

ব্রেক্সিট (ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে আসা) এই অনিশ্চয়তার জন্ম দিয়েছে। ব্রিটেন তার নিজের দেশের বড় বড় সেক্টরের কিছু কিছু কোম্পানিকে সহযোগিতা করেছে, যারা মহামারির সময় প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে স্বল্পসুদের সুফল ভোগ করেছে। শেয়ার বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক কোম্পানিই ফুলে ফেঁপে উঠেছে। তবে উত্তর ইউরোপেও শেয়ার বাজার বেশ চাঙ্গা ছিল। ড্যানিশ বাজারে বড় দশটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে তিনটির পুঁজিবাজার দখল, মহামারিতেও অর্থনীতিকে সুরক্ষিত রেখেছে।

সর্বশেষ সূচক হলো সরকারের ঋণ। সব ক্ষেত্রে বলা যায়, সরকারের ছোট ঋণের থেকে বড় ঋণ বেড়ে যাওয়া আরো খারাপ প্রভাব বিস্তার করেছে। এটা জনসাধারণকে বড় পরিসরের কর আরোপের দিকে ঠেলে দেয় এবং ভবিষ্যতের আয় কমে যাওয়ার দিকে ধাবিত করে। তবে এই মহামারিতে সব দেশের ঋণ নেওয়ার পরিমাণ একই রকম ভাবে বাড়েনি। আমেরিকা, ব্রিটেন, কানাডা ও অন্যান্য দেশে এরকম ঋণ রয়েছে। সুইডিশ সরকারের ঋণ বেড়েছে। তবে তা জিডিপির শতকরা ৬ শতাংশ। তবে মূল ব্যাপার হলো এই দেশটিতে কঠোর লকডাউন ছিল না। প্রয়োজনের তুলনায় সরকার কম আর্থিক সাহায্য দিয়েছে।

অর্থনীতিকে সচল করার কার্যক্রম ২০২২ পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। তবে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের ছড়িয়ে পড়া এই প্রত্যাশিত গতিকে কতটুকু অব্যাহত রাখবে তা দেখার বিষয়। সামগ্রিক ছবিটি অনেকগুলো বিষয়ের আড়ালে রয়েছে। অর্থনৈতিকভাবে ভেঙে পড়েছে এমন দেশকে তুলে আনতে ওইসিডি চেষ্টা করছে। উদাহরণস্বরূপ ২০২২ সাল নাগাদ ইতালি শতকরা ৪.৬ শতাংশ অর্থনৈতিকভাবে এগোবে। এদিক থেকে অন্যান্যদের তা গড়ে হবে শতকরা ৩.৯ ভাগ।

তবে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোকে অনেক দূর যেতে হবে। ওইসিডি আশা রাখছে যে, পরবর্তী বছরের শেষের দিকে প্রথম তিনটি দেশে করোনা-পূর্ববর্তী পর্যায়ে যেমন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ছিল, এর চেয়ে ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে। এর মধ্যে অর্থনৈতিকভাবে সব চেয়ে বেশি ভেঙে পড়া দেশগুলো করোনার আগে যতটা ছিল, এর চেয়ে ১ শতাংশ এগিয়ে থাকবে। তবে এর পাশাপাশি মহামারির অন্যান্য প্রভাবও বজায় থাকবে।

করোনা মহামারিতেও অবাক করা সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ। গত এক দশকে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অভাবনীয় পরিবর্তনের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ঈর্ষনীয় অবস্থান অর্জন করেছে এবং মাথাপিছু আয়ের ক্ষেত্রে ভারতকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে।

পোশাক রপ্তানি খাত থেকেই মূলত বাংলাদেশের এই বড় সাফল্য অর্জন। বাংলাদেশের মোট রপ্তানির প্রায় ৮০ শতাংশই আসে এই খাত থেকে। এছাড়া বিদেশ থেকে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স জিডিপির ৬ শতাংশের বেশি।

সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট

খায়রুন নাহার/টিটিএন/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।