ব্রিটিশ পাউন্ডের এমন দুর্দশা কেন?

যুক্তরাজ্যের নতুন অর্থমন্ত্রী কোয়াসি কোয়ার্টেং জোর দিয়ে বলেছেন, মুদ্রা বিনিময়ের সাম্প্রতিক গতিবিধি তাকে তার অবস্থান থেকে নড়াতে পারবে না। গত ২৩ সেপ্টেম্বর অর্ধ-শতাব্দীর মধ্যে দেশটিতে সবচেয়ে বড় ট্যাক্স ছাড়ের ঘোষণা দেওয়ার পর হাউজ অব কমনসে তিনি বলেছেন, বাজারগুলো নিজেদের মতো করেই প্রতিক্রিয়া দেখাবে।
তবে কোয়াসির এই দৃঢ়চেতা মনোভাব এখন কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন। ২৬ সেপ্টেম্বর মার্কিন ডলারের বিপরীতে ব্রিটিশ পাউন্ডের দর কমেছে। একপর্যায়ে তা ১ দশমিক ০৪ ডলারেরও নিচে নেমে গিয়েছিল। আর এশিয়ান ট্রেডিং আওয়ারে পাউন্ডের দর প্রায় এক শতাংশ কমে স্থির হয়েছে ১ দশমিক ০৭ ডলারে।
ব্রিটিশ মুদ্রার ইতিহাসে সর্বনিম্ন দর রেকর্ড হয়েছিল ১৯৮৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি লন্ডনে। সেদিন স্থানীয় সময় বিকেল ৪টায় পাউন্ডের দর দাঁড়িয়েছিল ১ দশমিক ০৪২ ডলার। তবে গত শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রী ট্যাক্স ছাড় ঘোষণার দুদিন যেতে না যেতেই রেকর্ড সর্বনিম্ন দামের কাছাকাছি দরপতন হয়েছে পাউন্ডের।
১৯৮৫ সালের মতো এ বছরও পাউন্ডের দরপতনের বেশিরভাগই মূলত ডলারের শক্তিবৃদ্ধিকে প্রতিফলিত করে। ২০২২ সালে মার্কিন মুদ্রার বিপরীতে প্রায় ২০ শতাংশ দাম হারিয়েছে পাউন্ড। এটি অবশ্য ইউরোর ১৫ শতাংশ পতনের চেয়ে খুব বেশি নয় এবং জাপানি ইয়েনের পতনের সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ। কিন্তু শুধু ডলার নয়, গত সপ্তাহে বিশ্বের বেশিরভাগ মুদ্রার বিপরীতেই দাম হারিয়েছে পাউন্ড।
ব্রিটিশ মুদ্রার দরপতনের সঙ্গে যোগ হয়েছে সরকারি বন্ডের ক্রমবর্ধমান দেনা। পাঁচ বছর মেয়াদী ব্রিটিশ বন্ডের দেনা আগস্টের শুরুতে ছিল ১ দশমিক ৫ শতাংশ, তা এখন বেড়ে ৪ দশমিক ৫ শতাংশের ওপরে উঠেছে, বিশেষ করে গত দু’দিনে বেড়েছে প্রায় এক শতাংশ পয়েন্ট।
ক্রমবর্ধমান দেনা ও পতনশীল মুদ্রার সংমিশ্রণ যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি এবং এর সম্পদের ওপর আস্থা সংকট তৈরি করেছে। সরকার ট্যাক্স কমানোর ফলে ভবিষ্যতে ক্রমবর্ধমান বাজেট ঘাটতি এবং উচ্চতর সরকারি ঋণ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। দেশটিতে এরই মধ্যে বছরের প্রথম প্রান্তিকে চলতি হিসাব ঘাটতি জিডিপির ৮ দশমিক ৩ শতাংশে পৌঁছেছে, যা আধুনিক ইতিহাসে গভীরতম। ক্রমবর্ধমান চলতি হিসাবের ঘাটতি এমন একটি বিষয়, যা প্রায়ই উন্নয়নশীল অর্থনীতিতে বিনিয়োগকারীদের চিন্তিত করে তোলে।
কিন্তু যুক্তরাজ্যের কথা আলাদা। এমন একটি দেশ মুদ্রা সংকটে পড়বে, তা অনেকের কাছেই অস্বাভাবিক মনে হতে পারে। কারণ, এর বিনিময় হার নমনীয়, অর্থাৎ অন্য মুদ্রার সঙ্গে কোনো যোগসূত্র নেই। যুক্তরাজ্যের আর্থিক বাজার গভীর ও পরিশীলিত। বিদেশি মুদ্রায় দেশটির ঋণ ন্যূনতম এবং এর কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকার থেকে স্বাধীন।
এরপরও ব্রিটিশ মুদ্রার দরপতন হওয়ার সবচেয়ে সহজ ব্যাখ্যা হলো, বিনিয়োগকারীরা বিশ্বাস করেন না যে, সরকারের ট্যাক্স কমানোর সিদ্ধান্ত বাস্তবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পথে নিয়ে যাবে। পরিবর্তে, উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির আশঙ্কা করছেন তারা।
ব্যাংক অব আমেরিকার মুদ্রা বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাজ্যের পরিবর্তিত আর্থিক অবস্থান এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তের দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব বিনিয়োগকারীদের পাউন্ডের বিষয়ে গভীরভাবে পুনর্বিবেচনার পথে পরিচালিত করেছে। আগামী বছরগুলোতে এটি ব্রিটিশ পাউন্ডকে আরও দুর্বল করে তুলতে পারে।
সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট
কেএএ/