সাড়ে ৪ ঘণ্টা জেরা

মার্কিন কংগ্রেসে প্রশ্নবানে জর্জরিত টিকটক সিইও

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩:০৮ পিএম, ২৪ মার্চ ২০২৩
ছবি: সংগৃহীত

টিকটকের প্রধান নির্বাহী শো জি চিউ মার্কিন কংগ্রেসের মুখোমুখি হয়েছিলেন গত বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ)। সেখানে প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা আইনপ্রণেতাদের একের পর এক প্রশ্নবানে জর্জরিত হন তিনি। এদিন চীনা অ্যাপটির বিরুদ্ধে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান সদস্যরা যেভাবে একাট্টা হয়েছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সেটি বেশ বিরল ঘটনা।

মার্কিন সিনেটাররা সম্প্রতি এমন একটি বিল উত্থাপন করেছেন, যেটি পাস হলে টিকটকসহ যেকোনো বিদেশি প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণ, এমনকি নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা পাবে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকার।

যুক্তরাষ্ট্রে কংগ্রেসের সামনে এর আগেও বিভিন্ন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীদের হাজির হতে হয়েছে এবং তাদের প্রত্যেকেই বেশ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিলেন। তবে টিকটকের ক্ষেত্রে শুনানিতে যেভাবে একের পর এক আক্রমণাত্মক প্রশ্ন ধেয়ে গেছে, সেটি আলাদাভাবে নজর কেড়েছে। ডেমোক্র্যাট-রিপাবলিকান কেউই ছাড় দেয়নি টিকটককে।

আরও পড়ুন>> গুপ্তচরবৃত্তির জন্য ব্যবহার করা হতে পারে টিকটক: এফবিআই

অ্যাপটির এক মুখপাত্র শুনানি শেষে বলেছেন, মার্কিন রাজনীতিবিদরা মূলত লোক দেখানোর জন্য এমনটি করেছে।

jagonews24

যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি কীসে
শুনানিতে টিকটক সিইও বারবার ‘প্রজেক্ট টেক্সাস’র কথা উল্লেখ করেন। এর অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের সব তথ্য সেদেশেই জমা রাখা হয় এবং এই প্রজেক্টের দেখাশোনার দায়িত্বেও রয়েছে মার্কিন কোম্পানি ওরাকল।

তবে প্রজেক্ট টেক্সাস এখনো পুরোপুরি কাজ করছে না। তাই এখন পর্যন্ত চীনের বাইটড্যান্স প্রকৌশলীদের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু তথ্যে প্রবেশাধিকার রয়েছে বলে নিশ্চিত করেন চিউ। তিনি বলেন, আমরা বৈশ্বিক আন্তঃকার্যক্ষমতার উপর নির্ভরশীল, তাই চীনের প্রকৌশলীদের এসব তথ্যে প্রবেশাধিকার রয়েছে।

আরও পড়ুন>> যুক্তরাষ্ট্রে ২০টির বেশি রাজ্যে সরকারি ডিভাইসে টিকটক নিষিদ্ধ

চিউয়ের এই স্বীকারোক্তি নিয়েই বারবার প্রশ্ন তুলতে থাকেন মার্কিন কংগ্রেসম্যানরা। তাদের যুক্তি, চীনের প্রকৌশলীরা যদি তথ্য পেয়ে থাকেন, তাহলে সেখান থেকে চীনা সরকার তথ্য না পাওয়ার কোনো কারণ নেই।

বাইটড্যান্স হলো টিকটক অ্যাপটির নির্মাতা একটি চীনা প্রযুক্তি কোম্পানি।

jagonews24

বাইটড্যান্সে চিউয়ের মালিকানা
শুনানিতে চিউয়ের আত্মপক্ষ সমর্থনে যে জায়গায় সবচেয়ে বেশি দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে, সেটি সম্ভবত বাইটড্যান্সের সঙ্গে টিকটকের দূরত্ব প্রমাণে।

যেভাবেই বলা হোক না কেন, চীনা কোম্পানিটিই টিকটকের মালিক। চিউ নিজেও একসময় বাইটড্যান্সের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা ছিলেন।

আরও পড়ুন>> টিকটকের বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছে কানাডা

শুরুতে চিউ বলতে চাননি, তিনি বাইটড্যান্সের মালিকানার অংশীদার ছিলেন কি না। তবে আইনপ্রনেতাদের চাপে একসময় তিনি স্বীকার করতে বাধ্য হন।

jagonews24

পাল্টা আক্রমণ
শুনানিতে চিউ অধিকাংশ সময় মার্কিন কংগ্রসকে পাল্টা আক্রমণ করা থেকে বিরত ছিলেন। তবে কিছু ক্ষেত্রে তিনি সেটি ভালোভাবেই করতে পেরেছেন।

ব্যবহারকারীদের তথ্য নিয়ে টিকটক কী করে, এমন প্রশ্নের মুখে একপর্যায়ে চিউ বলেন, সবার প্রতি সম্মান রেখেই বলছি, আমেরিকান কোম্পানিগুলোরও কিন্তু ডেটা সংরক্ষণের খুব ভালো রেকর্ড নেই... শুধু ফেসবুক আর কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার দিকেই দেখুন।

আরও পড়ুন>> টিকটকে সর্বোচ্চ ভিউয়ের বিশ্বরেকর্ড কার?

তার এই মন্তব্যের পেছনে অবশ্য যুক্তি রয়েছে। ফেসবুকে ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য একটি ব্রিটিশ রাজনৈতিক পরামর্শক কোম্পানি কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা ও আরেকটি থার্ড পার্টি অ্যাপ নিয়ে নেওয়ার বিষয়টি ২০১৮ সালে ব্যাপক আলোড়ন ফেলেছিল।

jagonews24

টিকটকের বিরুদ্ধে একজোট আইনপ্রণেতারা
শুরু থেকেই টিকটকের বিরুদ্ধে দু’দল এক হয়ে যেভাবে সমালোচনা করতে থাকে, তা বেশ বিরল। এ বিষয়ে রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান বাডি কার্টার বলেন, কংগ্রেস ইতিহাসের সবচেয়ে দ্বিদলীয় কমিটিতে স্বাগত।

আরেক রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান ড্যান ক্রেনশ বলেন, চিউ, আপনাকে ধন্যবাদ, রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের এক কাতারে নিয়ে আসার জন্য।

আরও পড়ুন>> যুক্তরাষ্ট্র কি টিকটকের ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ করতে পারবে?

যেসব রাজনীতিবিদ প্রায় কোনো কিছুতেই একমত হন না, সেই তারাই টিকটক যে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি, এ বিষয়ে পুরোপুরি একমত।

শুনানি শেষে টিকটক মুখপাত্র অভিযোগ করেছেন, তাদের অ্যাপ তথ্য সুরক্ষায় কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে, সে ব্যাপারে খুবই কম নজর দেওয়া হয়েছে। তার অভিযোগ, কমিটির সদস্যরা কেউই বলেননি, টিকটকে যে ৫০ লাখ ব্যবসা রয়েছে অথবা যে ১৫ কোটি মার্কিনি টিকটক পছন্দ করেন, তাদের কী হবে। এমন একটি প্ল্যাটফর্ম নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের প্রথম সংশোধনী (মতপ্রকাশের স্বাধীনতা) কীভাবে প্রয়োগ করা হবে?

সূত্র: বিবিসি বাংলা
কেএএ/

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।