রিপাবলিকানদের প্রথম পছন্দ ট্রাম্প

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩:৪০ পিএম, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
ছবি সংগৃহীত

পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা আরও বাড়ছে। মামলা, আদালতে ছোটাছুটির পরেও রিপাবলিকান পার্টির মনোনয়নের দৌঁড়ে অনেকটাই এগিয়ে আছেন এই সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তিনি সর্বশেষ সাউথ ক্যারোলিনায় দলের প্রাইমারি ভোটে জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালিকে বড় ব্যবধানে হারিয়েছেন।

নানা অনিশ্চয়তা কাটিয়ে দলীয় মনোনয়নের দৌঁড়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বেশ সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। এর মধ্যেই তিনি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে নিজের জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী হয়ে হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন। বাইডেন, ইউ আর ফায়ারড! গেট আউট, গেট আউট! আগামী নভেম্বরে জো বাইডেনের চোখে চোখ রেখে এই কথাটা বলবেন এমন বিষয়ে চলতি মাসেই ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন ট্রাম্প।

সাউথ ক্যারোলিনায় দলের প্রাইমারি ভোটে নিকি হ্যালির বিরুদ্ধে বড় জয়ের পর রিপাবলিকানদের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে এক ধাপ এগিয়ে গেলেন তিনি। দ্বিতীয়বার তার প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে খোদ রিপাবলিকান দলের মধ্যেই ব্যাপক সন্দেহ ছিল।

কিন্তু এখন মনোনয়নের দৌঁড়ে তার সাথে রয়েছেন মাত্র একজন প্রার্থী। তবে ওই প্রার্থীও ট্রাম্পের চেয়ে বেশ পিছিয়ে আছেন। সাউথ ক্যারোলিনা নিকি হ্যালির নিজের রাজ্য হওয়ায় সেখানে ট্রাম্পের জয়টা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যদিও নিকি হ্যালি এখনই লড়াই ছাড়ছেন না।

তিনি অন্তত ‘সুপার টুইসডে’ পর্যন্ত প্রতিযোগিতায় থাকার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন। মার্চের ৫ তারিখ সেই বিশেষ দিন। এদিন ১৬টি রাজ্যের রিপাবলিকানরা তাদের রায় জানাবেন।

সাউথ ক্যারোলিনার জয় উদযাপন করার সময় ট্রাম্প নিকি হ্যালির কথা একবারও উল্লেখ করেননি। তার নজর নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনের দিকে। হোয়াইট হাউজে তারই উত্তরসূরি বাইডেনের সঙ্গে একটি ‘রি-ম্যাচ’ বা পুনঃলড়াইয়ের সম্ভাবনা এখন প্রবল।

শনিবারের ফলাফলের পরে দলের ঐক্যের প্রশংসা করেছেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, এমন মনোভাব আগে কখনও ছিল না। আমি রিপাবলিকান পার্টিকে এতটা ঐক্যবদ্ধ কখনও দেখিনি। এই দৌঁড়ে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টের সামনে প্রতিবন্ধকতাও কম নয়।

সপ্তাহ খানেক আগেই তাকে প্রায় সাড়ে ৩৫ কোটি ডলার জরিমানা করেছেন দেশটির একজন বিচারক। তবে সুদসহ এই অংক দাঁড়াতে পারে ৪৫ কোটি ডলারে। সম্পত্তির মূল্য সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের তহবিলে এই জরিমানা দিতে হবে তাকে।

নিউইয়র্কের কোনো ব্যাংক থেকে পরবর্তী তিন বছরের জন্য ঋণ নেওয়ার বিষয়েও তার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন বিচারক আর্থার এনগোরন। পাশাপাশি ট্রাম্প তার কোম্পানির পরিচালকও থাকতে পারবেন না বলে আদেশ দেওয়া হয়েছে।

এই রায়কে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, তিনি এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন। ট্রাম্পের পাশাপাশি তার দুই ছেলে ডোনাল্ড জুনিয়র আর এরিককেও ৪০ লাখ ডলার করে জরিমানা দিতে হবে।

দুই বছরের জন্য তাদের নিউইয়র্কে ব্যবসা করার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এই জরিমানা বাদেও একটি মানহানির মামলায় লেখক ই জন ক্যারলকে প্রায় সাড়ে আট কোটি ডলার জরিমানা দিতে হবে ট্রাম্পকে। এ পর্যন্ত মোট পাঁচটি মামলার মুখোমুখি হতে হয়েছে তাকে।

এর মধ্যে সরকারি গোপন নথি নিজের কাছে রাখা এবং ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গায় উস্কানি দেওয়ার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা চলছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের আইনি ঝামেলা যতই বাড়তে থাকুক না কেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য রিপাবলিকান প্রার্থীদের মধ্যে তার জনপ্রিয়তা একটুও কমেনি।

গত এপ্রিলে ট্রাম্প যখন প্রথমবারের মতো অভিযুক্ত হলেন তারপর থেকেই তার পক্ষে সমর্থন বেড়েছে। যদিও ট্রাম্পই হলেন ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত হওয়া প্রথম সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট। প্রথমবার গ্রেফতার হওয়া ও আদালতে হাজিরা দেওয়ার পর থেকে ট্রাম্পই পরিণত হয়েছেন রিপাবলিকান ভোটারদের প্রথম পছন্দে।

যুক্তরাষ্ট্রে ইপসসের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা ক্লিফোর্ড ইয়ং মনে করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার সমর্থকদের মধ্যে যে একাত্মতাবোধ তা ভাঙা কঠিন হবে। রিপাবলিকান ভোটারদের ৪০ থেকে ৪৫ ভাগই ট্রাম্প সমর্থক এবং তারা ট্রাম্পের চোখ দিয়েই দুনিয়া দেখে। তারা বিশ্বাস করে ট্রাম্পের প্রতি অন্যায় করা হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

এ বছরের শুরু থেকেই ট্রাম্পকে একদিকে প্রচারাভিযানের সময়সূচি এবং আরেকদিকে আদালতে হাজিরা দেওয়া- দুটি বিষয়ই সামাল দিতে হচ্ছে। দোষী সাব্যস্ত হলে বা দণ্ডিত হলেও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে না দাঁড়ানোর ঘোষণা আগেই দিয়ে রেখেছেন এই রিপাবলিকান।

আপাতত যা দেখা যাচ্ছে তা হলো, ট্রাম্প জনসমর্থনের দিক থেকে বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাইডেনের চেয়ে কিছুটা এগিয়েই আছেন। দ্য ইকোনমিস্টের সর্বশেষ জরিপ বলছে, এখন ৪৬ শতাংশ জনমত ট্রাম্পের পক্ষে। আর বাইডেনকে চান ৪৪ শতাংশ মার্কিনি।

জরিপে দেখা যাচ্ছে, গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে জনপ্রিয়তায় বর্তমান প্রেসিডেন্টকে ছাপিয়ে যেতে শুরু করেন ট্রাম্প।
এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে বাইডেনের ফিটনেস নিয়ে আলোচনা অনেক দূর গড়িয়েছে। সাইকেল চালাতে গিয়ে পড়ে যাওয়া কিংবা বিমানে উঠতে গিয়ে হোঁচট খাওয়ার ঘটনাগুলো তার শারীরিক সক্ষমতার ব্যাপারে খুব একটা ভালো ধারণা দেয় না।

বিপাকে আছেন স্মৃতি বিভ্রমের ঘটনা নিয়েও। কয়েকবার গণমাধ্যমের সামনে কথা বলতে গিয়ে বিভিন্ন বিষয় ভুলে গেছেন বা ভুল বলেছেন এমন ঘটনা ঘটেছে। এমনকি সপ্তাহ দুয়েক আগে নিজের স্মৃতিশক্তি নিয়ে সমালোচনার মুখে ক্ষোভ প্রকাশও করেছেন তিনি। সংবাদ সম্মেলন ডেকে বলেছেন, আমার স্মৃতিশক্তি ঠিক আছে।

স্পেশাল কাউন্সিল রবার্ট হার অতি গোপনীয় নথি রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়ে বাইডেনের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ গঠন করবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু তার তদন্ত প্রতিবেদনে বেশ কিছু কঠোর সমালোচনাও রয়েছে যেখানে বলা হয়েছে যে প্রেসিডেন্টের স্মৃতিশক্তিতে উল্লেখযোগ্য সীমাবদ্ধতা রয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে নথিগুলো সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না করার অভিযোগ আনাটা মুশকিল কারণ, বিচারের সময় বাইডেন বিচারকের সামনে নিজেকে একজন সহানুভূতিশীল, সদালাপী এবং দুর্বল স্মৃতিশক্তি সম্পন্ন বয়স্ক মানুষ হিসেবে উপস্থাপন করবেন, আমাদের সামনেও তিনি যেটি করেছেন। এর প্রতিক্রিয়ায় বাইডেন বলেছেন, বয়স হওয়া সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য তিনিই সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তি।

আরও পড়ুন: 

এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে ৭৭ বছর বয়সী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ৮১ বছর বয়সী জো বাইডেন কতটা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারবেন সেই প্রশ্নই বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে।

টিটিএন

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।