সাগর-রুনি হত্যা
১৩ বছরে অদৃশ্য অনেক সাক্ষী, এবার আসবে বিচার পরিচালনার প্রতিবেদন

সাগর-রুনি হত্যা মামলার আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির বলেছেন, ১৩ বছরে অনেক সাক্ষী ডিসঅ্যাপিয়ার অর্থাৎ অদৃশ্য হয়ে গেছে। এসব কিছুর পরেও আমরা আলো দেখছি। হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্ত কর্মকর্তারা একটি গ্রহণযোগ্য এবং সত্যিকার অর্থেই বিচার পরিচালনার মতো প্রতিবেদন দাখিল করবেন, এটি আমরা আশা করি।
মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সুপ্রিম কোর্টের সামনে ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
শিশির মনির বলেন, ১৩ বছরেও সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করতে পারেনি। আমরা মনে করি, এটি রাষ্ট্রীয় লেভেলে একটি বড় ধরনের ব্যর্থতার ফল। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার আসার পর হাইকোর্ট বিভাগের আদেশে একটি উচ্চতর টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। উচ্চতর টাস্কফোর্স ৪ এপ্রিলের মধ্যে তাদের তদন্তের সারবত্তা পেশ করবে। এসময়ের মধ্যে তদন্তকারী (টাস্কফোর্স) কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন, পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং সাইন্টিফিক ও ফরেন যেগুলো এভিডেন্স আছে সেগুলো এক্সামিন হচ্ছে।
সাগর রুনির এ আইনজীবী বলেন, যতটুকু জানতে পেরেছি, বেশকিছু ডেভেলপমেন্ট হাতে এসেছে। সময়ের ব্যবধানে ডেভেলপমেন্টগুলো নিয়ে হাইকোর্টে পেশ করা হবে। এ মামলাটি সঠিকভাবে পরিচালনা করতে দেওয়া হয়নি এই মর্মেও তদন্ত রিপোর্টে কিছু তথ্য-উপাত্ত এসেছে।
তিনি বলেন, অতীতে ইনভেস্টিগেশন প্রসেসকে সঠিকভাবে আইনি পদ্ধতিতে চলতে দেওয়া হয়নি। দক্ষ জনশক্তি এবং ইচ্ছার অভাবে সময় মতো তদন্ত সম্পন্ন করা যায়নি। ১৩ বছর পরে আজ এসে প্রশ্ন দাঁড়িয়েছে চ্যালেঞ্জিং জব। কারণ ১৩ বছরে অনেক সাক্ষী অদৃশ্য হয়ে গেছে। এসব কিছুর পরেও আমরা আলো দেখছি।
গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলায় বাদীপক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনিরকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন
- ২ মার্চ তদন্ত প্রতিবেদন না দিলে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি
- সাগর-রুনি হত্যা মামলার চার্জশিট ২ মার্চের আগে দাখিলের দাবি
- ফের পেছালো সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন
পরে গত ২৩ অক্টোবর সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্তে চার সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এতে পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধান মো. তওফিক মাহবুব চৌধুরীকে আহ্বায়ক করা হয়।
টাস্কফোর্সের অন্য তিন সদস্য হলেন- পুলিশ সদরদপ্তর ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ থেকে অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক পদমর্যাদার একজন করে দুজন এবং র্যাব থেকে পরিচালক পদমর্যাদার একজন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা পরিপত্রে বলা হয়েছে, টাস্কফোর্সকে এ হত্যা মামলার তদন্ত ছয় মাসের মধ্যে শেষ করে হাইকোর্টে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় এই সাংবাদিক দম্পতি নৃশংসভাবে খুন হন। এ হত্যার ঘটনায় রুনির ভাই নওশের আলম বাদী হয়ে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন। প্রথমে এই মামলা তদন্ত করছিল শেরেবাংলা নগর থানার পুলিশ। চার দিন পর মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়।
তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার ৬২ দিনের মাথায় ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল হাইকোর্টে ব্যর্থতা স্বীকার করে ডিবি। এরপর আদালত র্যাবকে মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দেন। তখন থেকে মামলাটির তদন্ত করছে র্যাব। এ নিয়ে এই মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন জমার তারিখ ১১৪ বার পিছিয়েছে।
এদিকে তদন্তের জন্য মামলাটি র্যাবের কাছে পাঠানোর এই আদেশ সংশোধন চেয়ে ৩০ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্রসচিবের পক্ষে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়। শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট মামলাটির তদন্তে বিভিন্ন সংস্থার অভিজ্ঞদের সমন্বয়ে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্স গঠনের নির্দেশ দেন।
এফএইচ/এমএএইচ/এএসএম