মেট্রোরেলের নিরাপত্তা নিরীক্ষা করে প্রতিবেদন চান হাইকোর্ট
পুরো মেট্রোরেল প্রকল্পের কাঠামোগত সক্ষমতা ও নিরাপত্তা নিরীক্ষার বিষয়ে বিস্তৃত তদন্ত করে এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। স্বাধীন উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে এ তদন্ত করতে হবে।
আদেশটি সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিবকে বাস্তবায়ন করার জন্য বলা হয়েছে। এ সংক্রান্ত বিষয়ে পরবর্তী শুনানি ও আদেশের জন্য আগামী ৩ ডিসেম্বর দিন ঠিক করেছেন আদালত।
একই সঙ্গে একটি রুলও দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত আবুল কালামের পরিবারকে পর্যাপ্ত এবং অবিলম্বে দুই কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব, ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান প্রকৌশলীসহ অন্য বিবাদীদের এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
পৃথক পৃথক তিনটি রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে বুধবার (২৯ অক্টোবর) হাইকোর্টের বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মো. আসিফ হাসানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। তিনটি আবেদনের ওপর একসঙ্গে আদেশ দেওয়া হয়। আদালতে শুনানিতে রিট আবেদনকারী তিনজনই ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মুহাম্মদ শফিকুর রহমান ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইকরামুল কবির।
এক বছর আগে মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ার পর গত রোববার (২৬ অক্টোবর) আবার একই ঘটনা ঘটে। এবার আবুল কালাম নামের পথচারী এক যুবকের মৃত্যু ঘটে। তার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে পাঁচ লাখ টাকা দেওয়ার ঘোষণা সেদিনই দিয়েছিল সরকার। সেই সঙ্গে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়।
আরও পড়ুন
১০ কোটি টাকা ও স্থায়ী চাকরির দাবি জানিয়ে লিগ্যাল নোটিশ
মেট্রোরেলে যান্ত্রিক ত্রুটি, প্রায় ১ ঘণ্টা যাত্রী পরিবহন বন্ধ
ব্যয়বহুল মেট্রোরেলে নিরাপত্তাঝুঁকি
ওই দুটি ঘটনার প্রেক্ষাপট ও কারণ উদ্ঘাটন এবং সংশ্লিষ্টদের গাফিলতি বা অবহেলা আছে কি না তা নিরূপণে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন করে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন গত সোমবার (২৭ অক্টোবর) একটি রিট আবেদন করেন।
ভুক্তভোগী পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে এবং পুরো মেট্রোরেল প্রকল্পের কাঠামোগত সক্ষমতা ও নিরাপত্তা নিরীক্ষা বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশনা চেয়ে একই দিন আরেকটি রিট আবেদন করেন ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্য তনু হাওলাদার। আবেদন দুটির শুনানি নিয়ে আদালত বুধবার আদেশের জন্য রেখেছিলেন।
এদিকে মেট্রোরেল দুর্ঘটনায় ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণ দিতে সংশ্লিষ্ট আইন সংশোধন এবং নিহত আবুল কালামের পরিবারকে ৫০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশনা চেয়ে আরেকটি আবেদন বুধবার করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমাইয়া বিনতে তানভীর। এটিও আজ একই সঙ্গে শুনানির জন্য বেঞ্চের সম্পূরক কার্যতালিকায় (কজলিস্টে) ছিল।
আদেশের পর আইনজীবী তানভীর আহমেদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, অবকাঠামোবিষয়ক প্রকৌশলী ও বেসরকারি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে স্বাধীন, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ওই কমিটি গঠন করতে হবে। মেট্রোরেল দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়ে বিস্তারিত বিধান অন্তর্ভুক্ত করে সংশ্লিষ্ট আইন সংশোধনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, সে বিষয়েও রুলে জানতে চাওয়া হয়েছে।
আইনজীবী সুমাইয়া বিনতে তানভীর জাগো নিউজকে বলেন, মেট্রোরেল আইন ২০১৫ সালে প্রণীত হয়েছিল। এই আইনের ২৫ ধারায় বলা আছে যে মেট্রোরেল পরিচালনার সময় দুর্ঘটনার ফলে যদি কোনো ব্যক্তি আঘাতপ্রাপ্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত হন বা আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মারা যান, তাহলে লাইসেন্সি তাকে বা ক্ষেত্রমতে তার পরিবারকে বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতি ও পরিমাণে ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকবেন। এই আইনের অধীনে ২০১৬ সালে মেট্রোরেল বিধিমালা হয়। তবে এতে ক্ষতিপূরণ বিষয়ে কোনো পদ্ধতি বা পরিমাণ উল্লেখ নেই। যে কারণে রিটে সংশ্লিষ্ট আইন সংশোধনের নির্দেশনাও চান তিনি।
এফএইচ/একিউএফ