বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন
মোহাম্মদপুরে ট্রাকচালক হত্যায় হাসিনাসহ ৩৪ জনের নামে অভিযোগপত্র
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে গুলিতে ট্রাকচালক মো. হোসেন নিহত হওয়ার অভিযোগে করা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক নির্দেশনা ও পরিকল্পনার মাধ্যমে সহিংসতা ঘটানোর অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আকরামুজ্জামান গত ২৩ নভেম্বর ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্রটি জমা দেন। এতে দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪, ১৪৩, ১৪৭, ১৪৮, ১৪৯, ১০৯, ১২০-খ, ৩২৪, ৩২৬, ৩০৭ ও ১১৪ ধারায় অভিযোগ আনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
মামলার অন্য আসামিদের মধ্যে আছেন সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, হাসান মাহমুদ ও জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক সংসদ সদস্য সাদেক খান, সাবেক কাউন্সিলর আসিফ আহম্মেদ, তারেকুজ্জামান তারেক, সলিম উল্লাহ সেলু এবং নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান।
মামলার তথ্য অনুযায়ী, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকালে ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই রাজধানীতে কারফিউ জারি ছিল। ওইদিন গাবতলী থেকে বাসায় ফেরার পথে মোহাম্মদপুরের চাঁদ উদ্যান এলাকায় হঠাৎ গুলিবর্ষণে ট্রাকচালক মো. হোসেন (২৫) নিহত এবং সাজ্জাদ হোসেন জিহাদ ও শাহিন নামের দুজন আহত হন। এ ঘটনায় পরদিন হোসেনের মা রীনা বেগম মোহাম্মদপুর থানায় হত্যা মামলা করেন।
আরও পড়ুন
ছাত্রদল নেতার বাড়িতে লুটপাট: শেখ হাসিনা, মহীউদ্দীনসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র
প্লট দুর্নীতি মামলা: পদ ব্যবহার করে প্লট বরাদ্দ, হাসিনার ক্ষমতার অপব্যবহার প্রমাণিত
সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা
পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে- শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, হাসান মাহমুদ, জাহাঙ্গীর কবির নানকসহ সাবেক সরকারের শীর্ষ নেতারা জনসম্মুখে উসকানিমূলক বক্তব্য এবং আন্দোলন দমন করতে দলীয় ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বলপ্রয়োগের নির্দেশ দেন।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, শীর্ষ নেতাদের এ নির্দেশনা অনুযায়ী মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা সমন্বিতভাবে সহিংসতায় অংশ নেয় এবং ওই হামলাতেই গুলিবিদ্ধ হয়ে হোসেন নিহত হন। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা পরিকল্পনা, অর্থের জোগান, উসকানি ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ড সংঘটনে ভূমিকা রেখেছেন বলে তদন্তে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
অভিযোগপত্রের বিষয়ে কথা হলে ফৌজদারি আইনজীবী রফিকুল ইসলাম বলেন, এতে যে ধারাগুলো আনা হয়েছে তা মূলত হত্যা, হত্যাচেষ্টা, দাঙ্গা, অস্ত্র ব্যবহার, উসকানি ও অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের গুরুতর অভিযোগকে নির্দেশ করে। ধারা ৩০২ ইচ্ছাকৃত হত্যা আর ৩০৭ হত্যাচেষ্টাকে শাস্তিযোগ্য করেছে। ১৪৩ থেকে ১৪৯ ধারাগুলো বেআইনি সমাবেশ ও দাঙ্গায় অংশগ্রহণের যৌথ দায় নির্ধারণ করে। ধারা ১০৯ ও ১২০-খ অপরাধে উসকানি ও ষড়যন্ত্রের বিষয়টি তুলে ধরে। এসব ধারা একসঙ্গে প্রমাণ করে। অপরাধটি ছিল পরিকল্পিত, সম্মিলিত এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
এমডিএএ/একিউএফ