‘মারধরে’ করোনা রোগীর মৃত্যু, হাসপাতাল কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭:৪৭ পিএম, ৩১ জুলাই ২০২১

রাজধানীর উত্তরায় শিন জিন জাপান হাসপাতালে এক করোনা রোগীকে আইসিইউ থেকে বের করে এনে মারধর করে হাত ভেঙে দেয়ার পর মারা যাওয়ার অভিযোগে ওই হাসপাতালের কর্মকর্তা এবং কর্মচারীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হয়েছে। মামলায় হাসপাতালের অজ্ঞাতনামা বিভিন্ন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার এজাহারটি ঢাকা মহানগর হাকিম রাজেশ চৌধুরি গ্রহণ করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ৯ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেন।

শনিবার (৩১ জুলাই) রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ইয়াসিন গাজী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, বুধবার (২৮ জুলাই) জ্যোতি কাস্তা নামে এক ব্যক্তি তার জামাই মারা যাওয়ার ঘটনায় উত্তরা পশ্চিম থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, গত ১৮ জুলাই মামলার বাদীর মেয়ে লাবনীর স্বামী সবুজ পিরিস শ্বাসকষ্ট জনিত কারণে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয় এবং স্কয়ার হাসপাতালে কোভিড-১৯ টেস্ট করা হয়। এতে রেজাল্ট পজিটিভ আসে। তবে স্কয়ার হাসপাতালের আইসিইউতে সিট খালি না থাকায় সবুজ পিরিসকে ইউনাইটেড এবং পরে এপোলো হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সেখানেও আইসিইউ খালি নেই বলে জানতে পারেন।

পরে বাদী আইসিইউর জন্য ঘুরাঘুরি করতে থাকলে অজ্ঞাত দালালদের মাধ্যমে উত্তরা পশ্চিম থানাধীন ১১ নম্বর সেক্টরের গরীবে নেওয়াজ এভিনিউয়ে শিন জিন জাপান হাসপাতালে আইসিইউ খালি আছে বলে জানতে পারেন। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে সবুজকে শিন জিন জাপান হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে হাসপাতালে কর্তৃপক্ষ প্রতিদিন আইসিইউ বেড বাবদ ভাড়া ৩৫ হাজার টাকা এবং ওষুধ ও অন্যান্য খরচ বহন করতে হবে বলে জানানো হয়। এই অতিরিক্ত খরচের বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অবগত করে কিছু টাকা কম নিতে বললে তারা দুর্ব্যবহার করেন।

পরে সবুজকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নানা অজুহাতে চিকিৎসার জন্য অতিরিক্ত অর্থ দিতে বাধ্য করে। এছাড়া শিন জিন জাপান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সঠিক চিকিৎসা না করে সবুজের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটান।

মামলা অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, গত ২১ জুলাই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বাদীকে জানান, জরুরি ভিত্তিতে অসুস্থ সবুজকে এভাস্টিন ইনজেকশন দিতে হবে এবং এজন্য ৮০ হাজার ৮০০ টাকা লাগবে। এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে ধানমন্ডি থেকে এই ইনজেকশন সংগ্রহ করে জমা দেয়া হয়। এই ইনজেকশন দেয়ার পর থেকে সবুজ অসংলগ্ন আচরণ করতে থাকেন। এ বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও তারা কোনো গুরুত্ব দেয়নি।

এরপর গত ২৩ জুলাই রাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বাদীকে ফোন দিয়ে জানান, সবুজ আইসিইউতে কর্মরত নার্স ও ওয়ার্ড বয়কে চাকু দিয়ে আঘাত করেছে। তারপর বাদী হাসপাতালে গিয়ে দেখেন তার জামাই সবুজকে হাসপাতালের আইসিইউ কক্ষের সম্মুখে ফাঁকা জায়গায় বেডের সঙ্গে হাত-পা বাঁধা এবং তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষত ও কালো দাগযুক্ত আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

পরে বাদী জানতে পারেন, হাসপাতালের অজ্ঞাত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তার মেয়ের জামাইকে আইসিইউ থেকে বের করে এনে এলোপাতাড়ি মারধর করেন। এতে তার ডান হাতের হাড় ভেঙে যায়। এছাড়া বাম হাতের কব্জি খুলে যায় এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম হয়। পরে গত ২৬ জুলাই সবুজ গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ ঘটনায় রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় জ্যোতি কস্তা বাদী হয়ে পেনাল কোড ৩০২ ধারায় মামলা দায়ের করেন।

জেএ/জেডএইচ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।