পরিবারের ৪ জনের পাসপোর্ট জমা

র‌্যাব হেফাজত থেকে মুক্ত পি কে হালদারের সহযোগীর দুই মেয়ে

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:৫৭ পিএম, ২৫ আগস্ট ২০২২

ব্যাংক ও আর্থিক কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্ত প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদারের অন্যতম সহযোগী পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের (পিএলএফএসএল) সাবেক পরিচালক মো. খবির উদ্দিনের দুই মেয়ে বুধবার (২৪ আগস্ট) রাতে মুক্তি পেয়েছেন। তারা হলেন শারমিন আহমেদ ও তানিয়া আহমেদ।

দুই মেয়ের পরিবারের চার সদস্যের পাসপোর্ট ও দুই সদস্যের জাতীয় পরিচয়পত্র জমা দেওয়ার পর তাদের র‍্যাব হেফাজত থেকে মুক্তি দেওয়া হয় বলে হাইকোর্টে জানানো হয়।

বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) হাইকোর্টের বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের একক (কোম্পানি কোর্ট)বেঞ্চকে দুই মেয়ের আইনজীবী মো. আবু তালেব এ তথ্য জানান।

শারমিন ও তানিয়ার আইনজীবী মো. আবু তালেব জাগো নিউজকে বলেন, ১১ সদস্যের মধ্যে দুই বোনসহ পরিবারের ছয় সদস্যের পাসপোর্ট ও দুই সদস্যের জাতীয় পরিচয়পত্র র‍্যাবের কাছে জমা দেওয়ার পর বুধবার রাতেই দুই বোনকে র‍্যাব হেফাজত থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। অন্য তিনজন সরাসরি খবির উদ্দিনের পরিবারের সদস্য নয়, দূর সম্পর্কের আত্মীয় বলে আদালতকে জানানো হয়। আদালত এ বিষয়ে আগামী সোমবার (২৯আগস্ট) লিখিতভাবে জানাতে বলেছেন।

এর আগে গত ৭ মার্চ হাইকোর্টের একই বেঞ্চ আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিংয়ের ঋণখেলাপি ৬৪ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে তলব করেছিল। তাদের মধ্যে যারা হাজির না হবে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির কথাও বলেছিলেন আদালত। ওই তালিকায় শারমিন ও তানিয়া ছিলেন। তারাসহ ৩০ ব্যক্তি হাজির না হওয়ায় গত ১৯ এপ্রিল তাদের গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়।

এর মধ্যে বুধবার (২৪ আগস্ট) ভোরে রাজধানীর ধানমন্ডি ও শ্যামলী থেকে মো. খবির উদ্দিনের দুই মেয়ে শারমিন আহমেদ ও তানিয়া আহমেদকে গ্রেফতার করে র‍্যাব-৩। এরপর দুপুরে তাদের হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট কোম্পানি কোর্টে হাজির করে র‍্যাব। এরপর আদালত তাদের শর্ত সাপেক্ষে মুক্তির নির্দেশ দেন। তাদের দুই বোনের পাসপোর্টও আদালতে জমা দেওয়া হয়।

শর্তের মধ্যে পরিচালক খবিরউদ্দীনের দুই মেয়েসহ পরিবারের ১১ সদস্যের পাসপোর্ট অথবা যাদের পাসপোর্ট নেই তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি কার্ড) জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। ১১ জনের পাসপোর্ট বা জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি কার্ড) জমা দেওয়ার পাশাপাশি ৩০ দিনের মধ্যে পরিবারের সদস্যদের পাচার করা অর্থ ১৯৬ কোটি টাকার মধ্যে ৫ শতাংশ জমা দিতে নির্দেশ দেন আদালত। এ ঋণের ৫ শতাংশ অর্থ ৩০ দিনের মধ্যে জমা দিয়ে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। এরপর তাদের র‍্যাব হেফাজতে নিয়ে যাওয়া হয়।

গ্রেফতার দুই মেয়ে শারমিন আহমেদ ও তানিয়া আহমেদ ছাড়া পরিবারে অন্য ৯ সদস্য হলেন খায়রুল হাসান, কোহিনূর মাতবর, মাসুদ মাতবর, মো. আব্দুস সোবহান, আতাউর রহমান, শিরিণ আহমেদ, সোনিয়া আহমেদ, শহিদুজ্জামান ও আশরাফ খান। আদালতে এদিন দুই মেয়ের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আবু তালেব। পিপলস লিজিংয়ের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মেজবাহুর রহমান।

২০১৯ সালের ১৪ জুলাই পিপলস লিজিং অবসায়নের জন্য আদালতে মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই দিনই মামলার শুনানি শেষে অবসায়নের পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেন আদালত। এছাড়া অবসায়ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক পদমর্যাদার একজনকে অবসায়ক নিয়োগ দিতে বলা হয়।

পরে সাময়িক অবসায়ক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক আসাদুজ্জামান খানকে নিয়োগ দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এর আগে বুধবার (২৪আগস্ট) র‍্যাবের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পি কে হালদারের অন্যতম সহযোগী খবির উদ্দিন পিএলএফএসএলের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত পরিচালক ছিলেন। এসময় তিনি প্রায় ২০০ কোটি টাকা পরিবারের বিভিন্ন সদস্যের নামে-বেনামে ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেন। পরে ২০১০ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে এ পদ থেকে তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার দুই নারী বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে আত্মসাতের উদ্দেশ্যে ঋণ গ্রহণের সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য দিয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদে তারা বলেন, বাবা খবির উদ্দিনের মাধ্যমে ঋণ নিয়েছেন তারা। প্রায় দেড় যুগ ধরে কানাডায় আছেন শারমিন ও তানিয়া।

র‍্যাব জানায়, তাদের মধ্যে শারমিন ৩১ কোটি ও তানিয়া ৩৩ কোটি টাকা পিপলস লিজিংয়ের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছেন। তারা গত ২৮ জুলাই বাংলাদেশে আসেন এবং বুধবার কানাডার উদ্দেশে দেশত্যাগের পরিকল্পনা করছিলেন।

গত মে মাসে পি কে হালদার ও তার পাঁচ সহযোগীকে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে গ্রেফতার করে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)।

এফএইচ/এমআইএইচএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।