মানবতাবিরোধী অপরাধ
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মজিদকে কারাগারে পাঠালেন ট্রাইব্যুনাল

মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার শেখ মো. আব্দুল মজিদ ওরফে মজিদ মাওলানাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি আবু আহমেদ জমাদার ও বিচারপতি কেএম হাফিজুল আলম।
আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী। তার সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন।
এর আগে বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) পলাতক আসামি আবদুল মজিদকে গ্রেফতার করে র্যাব। আজ রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৩ এর পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন এ তথ্য জানান।
আরও পড়ুন>> পরিচয় লুকিয়ে মাদরাসা শিক্ষক বনে যান আব্দুল মজিদ
তিনি জানান, মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া চলাকালে ২০১৫ সালে আবদুল মজিদ নিজ এলাকা ছেড়ে ঢাকায় চলে আসেন এবং ফকিরাপুল এলাকায় কিছুদিন আত্মগোপনে থাকেন। পরে তার আত্মীয়ের সহযোগিতায় মাদারীপুরে গিয়ে আত্মগোপন করেন এবং একটি কামিল মাদরাসায় শিক্ষকতার চাকরি নেন।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতার এড়িয়ে চলতে মজিদ নিয়মিত বাসা পরিবর্তন করতেন। এসময় পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে তিনি অন্যের নিবন্ধন করা সিমকার্ড যুক্ত মুঠোফোন ব্যবহার করতেন। তিনি ও তার ছেলেমেয়েরা আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হওয়ায় প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণের জন্য তারা নিয়মিত তাকে টাকা দিতেন। আত্মগোপনে থাকাকালে তিনি সাধারণত জনসমাগমপূর্ণ স্থান, বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান ছাড়াও তার ব্যক্তিগত পরিচয় প্রকাশ পায়, এমন স্থান এড়িয়ে চলতেন।
এর আগে ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত হত্যা, গণহত্যা ও ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার শেখ মো. আব্দুল মজিদ ওরফে মজিদ মাওলানাসহ পাঁচ আসামির মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এই রায় ঘোষণা করেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. আমীর হোসেন ও মো. আবু আহমেদ জমাদার।
ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন প্রসিকিউটর মো. মোখলেছুর রহমান বাদল ও তার সঙ্গে ছিলেন সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নি। অপরদিকে আসামিদের পক্ষে ছিলেন রাষ্ট্রীয় খরচে ট্রাইব্যুনালের নিযুক্ত করা আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম।
মামলার অপর চার আসামি হলেন- মো. আব্দুল খালেক তালুকদার (৬৭), মো. কবির খান (৭০), আব্দুস সালাম বেগ (৬৮) ও নুরউদ্দিন (৭০)। তারা সবাই পলাতক।
এই মামলার মোট আসামি ছিলেন সাতজন। তাদের মধ্যে কারাগারে থাকা অবস্থায় মারা যান আহাম্মদ আলী (৭৮)। আর মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের সময় মারা যান আরেক আসামি আব্দুর রহমান (৭০)। ২০১৭ সালের ১৯ এপ্রিল আসামিদের বিচার শুরু করেন ট্রাইব্যুনাল। পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাসহ (আইও) ২৬ জন সাক্ষী তাদের জবানবন্দি পেশ করেন।
আরও পড়ুন>> ত্রিশালের মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মুকুল-আদিল কারাগারে
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহজাহান কবির ২০১৫ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ পর্যন্ত তদন্ত শেষ করেন। ২০১৬ সালের ১৬ মার্চ তিনি প্রসিকিউশনের কাছে প্রতিবেদন জমা দেন, এরপর ২২ মে প্রসিকিউশন ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন।
১৯৭১ সালের ২১ আগস্ট দুপুরে রাজাকার বাহিনী নিয়ে বাড়হা গ্রামের আব্দুল খালেককে গুলি করে হত্যার পর কংস নদীতে ভাসিয়ে দেওয়ার অভিযোগে শহীদ আব্দুল খালেকের ছোট ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাদির বাদী হয়ে ২০১৩ সালে চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরে তদন্তে আরও তিনজনের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ায় মোট আসামি হয় সাতজন।
আরও পড়ুন>> সাতক্ষীরার ৪ জনের বিরুদ্ধে সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন ৮ মার্চ
মামলায় আব্দুল কাদির অভিযোগ করেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি এবং রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে কর্মরত তার বড় ভাই আব্দুল হেকিম ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে অবস্থান করছিলেন। রাজাকাররা এ খবর জানতে পেরে তাদের বাড়িতে গিয়ে বড় ভাই আব্দুল খালেককে পিঠমোড়া করে বেঁধে বীর মুক্তিযোদ্ধা ভাইদের সন্ধান জানতে চান।
ভাইদের কোনো সন্ধান না দেওয়ায় তখন রাজাকার বাহিনী ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের ঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। পরে আগ্নেয়াস্ত্রের মুখে ভাই খালেককে ধরে নিয়ে গিয়ে জারিয়া রাজাকার ক্যাম্পে দুইদিন আটক রেখে অমানসিক নির্যাতন চালায়। পরদিন তাকে কংশ নদীর পাড়ে গুলি করে হত্যা করে নদীতে মরদেহ ভাসিয়ে দেয় রাজাকাররা।
এফএইচ/ইএ/জেআইএম