মানবতাবিরোধী অপরাধ

সাতক্ষীরার ৪ জনের বিরুদ্ধে সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন ৮ মার্চ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:২৮ পিএম, ৩০ জানুয়ারি ২০২৩

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাতক্ষীরার আশাশুনি ও কালিগঞ্জ উপজেলার আকবর আলী শেখসহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এর মাধ্যমে আসামিদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচারকাজ শুরু হলো।

একই সঙ্গে মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে আগামী ৮ মার্চ সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ঠিক করেছেন আদালত। ওইদিন ওপেনিং স্ট্যাটমেন্ট সূচনা বক্তব্য উপস্থাপনের মাধ্যমে আসামিদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হবে।

সোমবার (৩০ জানুয়ারি) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি আবু আহমেদ জমাদার ও বিচারপতি কেএম হাফিজুল আলম।

আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন প্রসিকিউটর মো. সাহিদুর রহমান। তার সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন। অন্যদিকে আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী গাজী এমএইচ তামিম।

রেজিয়া সুলতানা চমন জাগো নিউজকে বলেন, এ মামলার আসামি চারজন। এদের মধ্যে আকবর আলী শেখ ও আব্দুল হামিদ খান কারাগারে। বাকি দুজন পলাতক।

তিনি বলেন, এ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে সাক্ষ্যগ্রহণের বিষয়ে শুনানির জন্য আগামী ৮ মার্চ পরবর্তী দিন ঠিক করেছেন আদালত।

গত বছরের জুন মাসে চার আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র জমা দেয় রাষ্ট্রপক্ষ। পরে এ মামলার অভিযোগ গঠন শুনানি শুরু হয়। এরপর রাষ্ট্রপক্ষ তাদের আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানি শেষ করে। অন্যদিকে আসামিপক্ষ সময় আবেদন করায় এ বিষয়ে শুনানির জন্য ৩০ জানুয়ারি দিন ঠিক করেন আদালত। সে অনুযায়ী আজ নির্ধারিত দিনে অভিযোগ গঠন হয়।

২০২১ সালের ২৫ অক্টোবর এ মামলার তদন্ত শেষ করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। ২০২১ সালের ২৫ অক্টোবর ধানমন্ডির তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির প্রধান সানাউল হক এ তথ্য জানান। এটি ছিল তদন্ত সংস্থার ৭৯তম প্রতিবেদন।

তখন সংস্থাটি জানায়, সাতক্ষীরা আকবর আলী শেখসহ চারজনের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ করা হয়েছে। চার আসামির মধ্যে আকবর আলী ছাড়া অন্যরা পলাতক।

এর মধ্যে গত ৩১ জুলাই সন্ধ্যায় ৭টার দিকে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার পূর্ব নলতা থেকে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত আব্দুল হামিদ খানকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার আব্দুল হামিদ খান (৭৯) কালিগঞ্জের নলতা ইউনিয়নের পূর্ব নলতা গ্রামের মৃত নেছার উদ্দিন খানের ছেলে।

চার আসামির বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগ এনে তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে।

অভিযোগ-১ এ বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর আনুমানিক সময় ৪টার সময় রহমতুল্লা মোড়ল, তার ছেলে গোলাম মোস্তফা মোড়লকে সঙ্গে করে সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ থানাধীন নলতা হাটে বাজার করতে যান।

এসময় মুক্তিযোদ্ধা আনছারুল মাহমুদ নলতা হাটে সাতক্ষীরা-কালিগঞ্জ সড়কের একটি বাসে পাকিস্তানি সেনা থাকার সন্দেহে গ্রেনেড ছুড়ে। কিন্তু তাতে কেউ হতাহত হয়নি। গ্রেনেড ছোড়ার প্রতিশোধ নিতে বিকেল ৫টার দিকে আসামিরা পাকিস্তানি আর্মির সঙ্গে ইন্দ্রনগর মাদরাসায় একত্র হয়ে নলতা হাটে আক্রমণ করে। এসময় রাজাকাররা স্বরাব্দীপুর গ্রামের মাদার আলী গাজীকে গুলি করে হত্যা করে।

এ ঘটনায় রাজাকারদের গুলিতে ইন্দ্রনগর গ্রামের আব্দুল রহমান ওরফে মেদু মোড়ল ও রহমতুল্লাহ মোড়ল গুরুতর আহত হন। ২৬ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টায় নিজ বাড়িতে রহমতুল্লাহ মোড়লের মৃত্যু হয়।

অভিযোগ-২ এ বলা হয়, ১৯৭১ সালে ৬ মে আনুমানিক ১২টার সময় সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ থানার ইন্দ্রনগর মাদরাসার রাজাকার ক্যাম্প থেকে আসামিরাসহ পাকিস্তানি সেনারা দেবহাটার হাদিপুর গ্রামের ঘোষবাড়িতে হামলা করে।

সেখান থেকে নরেন্দ্রনাথ ঘোষকে আটক করে বাড়ির পেছনে নিয়ে গুলি হত্যা করে মরদেহ পুকুরে ফেলে দেয়। এরপর তারা শরৎচন্দ্র ঘোষ, গোপীনাথ ঘোষ, হেমনাথ ঘোষ এবং ওয়াজেদ আলী বিশ্বাসকে আটক করে বাড়ির দক্ষিণ দিকে ডোবায় নিয়ে সারিবদ্ধভাবে হত্যা করে মরদেহ পানিতে ফেলে রাখে।

সেখানে নরেন্দ্রনাথ ঘোষের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বাধা দিতে গেলে আসামিরা তাকে আটক করে নির্যাতন করে। ঘোষ বাড়ির মালামাল লুট করে এবং অগ্নিসংযোগ করে। মামলার তদন্ত করেন শাহজাহান কবীর। এ মামলায় ১৯ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।

এফএইচ/এমকেআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।