প্রবাস থেকে লাশ হয়ে ফেরা ৭১৪ নারীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে রিট

গত সাত বছরে সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশ থেকে মরদেহ ফিরেছে ৭১৪ নারীর। তাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে রিট হয়েছে হাইকোর্টে। রিটে সব প্রবাসী নারী-শ্রমিকদের দেখভাল ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের নির্দেশনাও চাওয়া হয়েছে। সাথে লাশ হয়ে ফেরা ৭১৪ অভিবাসী নারী শ্রমিকের পরিবারের জন্য পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে রিট করা হয়েছে।
পাশাপাশি অভিবাসী নারী শ্রমিকের মৃত্যুর কারণ তদন্ত, নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিতের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় জনস্বার্থে করা হয়েছে রিটটি।
দৈনিক পত্রিকায় লাশ হয়ে ফিরলেন ৭১৪ নারী শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন যুক্ত করে সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আঞ্জুমান আরা লিমা রিটের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন গণমাধ্যমকে।
গত ৩০ জানুয়ারি একটি জাতীয় দৈনিকে ‘লাশ হয়ে ফিরলেন ৭১৪ নারী’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। ওই প্রতিবেদন সংযুক্ত করে রিট আবেদনটি দায়ের করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: প্রবাসে নারীরা অন্য পেশায় যাবে, গৃহশ্রমে কেন?
প্রতিবেদনের একাংশে বলা হয়, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশ থেকে যত নারী কর্মীর মরদেহ দেশে এসেছে, তাদের অনেকের মৃত্যুর কারণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এর আগে সরকারের কাছ থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির তৈরি করা হিসাবে দেখা যায়, ২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে ৭১৪ জন বাংলাদেশি নারী শ্রমিক লাশ হয়ে ফিরেছেন। এর বড় অংশের ক্ষেত্রে মৃত্যুর কারণ দেখানো হয়েছে স্বাভাবিক মৃত্যু, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ।
হাইকোর্টের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে হতে পারে রিটটির শুনানি।
দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী ২০২০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত তিন বছরে ৪০৪ জন নারী শ্রমিকের লাশ দেশে এসেছে। তাদের মধ্যে ২২৭ জনের ক্ষেত্রে ‘স্বাভাবিক মৃত্যু’ লেখা ছিল।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের তথ্য বলছে, ২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সাত বছরে ৭১৪ নারী শ্রমিকের লাশ দেশে এসেছে। তাদের মধ্যে ‘স্বাভাবিক’ মৃত্যুর সনদ লেখা লাশের সংখ্যা ২৬২। আর ২০২০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৩ বছরে ৩১৯ নারী শ্রমিকের লাশ দেশে আসে। যাদের মধ্যে ২২০ জনের ক্ষেত্রে লেখা ছিল ‘স্বাভাবিক মৃত্যু’।
অন্যদিকে ব্র্যাকের গত সাত বছরের পরিসংখ্যান বলছে, এ সময়ে যেসব নারী শ্রমিকের লাশ দেশে এসেছে, তাদের মধ্যে ১৩৮ জনের মৃত্যুর কারণ লেখা ছিল ‘স্ট্রোক’। ১১৬ জনের ক্ষেত্রে ‘আত্মহত্যা’। ১০৮ জনের ক্ষেত্রে ‘দুর্ঘটনা’। ১৬ জনের ক্ষেত্রে ‘হত্যা’। এর বাইরে করোনা, ক্যানসার, অজানা রোগ বা কোনো কারণ উল্লেখ না করেই দেশে নারী শ্রমিকের লাশ পাঠানোর ঘটনা ঘটেছিল।
আরও পড়ুন: প্রবাসী নারী শ্রমিকদের আর্তনাদ কী শুনতে পাচ্ছেন?
এদিকে অভিবাসন নিয়ে কাজ করা রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিট (রামরু) ২০১৭ সাল থেকে দেশে আসা ৫৪৮ নারী শ্রমিকের মৃত্যুর কারণ ও করণীয় বিষয়ে একটি গবেষণা করেছে। ‘ডেথ অব ফিমেল মাইগ্রেন্ট ওয়ার্কার্স ইন ডেস্টিনেশন কান্ট্রিজ’ শিরোনামের সেই গবেষণায় সনদে থাকা মৃত্যুর কারণ বিশ্লেষণ করা হয়েছে। সে অনুযায়ী, ৬৯ শতাংশ নারী শ্রমিকের ‘স্বাভাবিক’ ও ৩১ শতাংশের ‘অস্বাভাবিক’ মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে বলে দাবি করা হয়েছে।
বিদেশে মারা যাওয়া শ্রমিকের লাশ দেশে আনার কাজটি প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মাধ্যমে হয়। লাশ দাফনের জন্য তারা বিমানবন্দরে পরিবারকে ৩৫ হাজার টাকা দেয়। পরে মারা যাওয়া শ্রমিকের পরিবারকে তিন লাখ টাকা আর্থিক অনুদান দেয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এফএইচ/এমএইচআর/জিকেএস/এমআইএইচএস