হজের প্যাকেজ পুনরায় নির্ধারণে রিটের শুনানি আজ

হজের প্যাকেজ মূল্য কমিয়ে পুনরায় প্যাকেজ ঘোষণা করতে দায়ের করা রিট শুনানির জন্য মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) দিন ঠিক করেছেন হাইকোর্ট।
সোমবার (১৩ মার্চ) বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ শুনানির এ দিন ধার্য করেন।
অ্যাডভোকেট আশরাফ উজ জামান জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
আদালতে এদিন রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট গাজী মো. মহসীন ও অ্যাডভোকেট আশরাফ উজ জামান।
এর আগে রোববার (১২ মার্চ) হজের প্যাকেজ মূল্য কমিয়ে পুনরায় প্যাকেজ ঘোষণা করতে রিট দায়ের করা হয়। রিটে বাংলাদেশ বিমান ও সৌদি এয়ারলাইন্স ছাড়াও যেকোনো এয়ারলাইন্সে টিকিট কেটে হজে যাওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আশরাফ উজ জামান জনস্বার্থে এ রিট দায়ের করেন।
তারও আগে গত ৬ মার্চ হজ ব্যবস্থাপনায় খরচ কমাতে সরকারের সংশ্লিষ্ট ধর্ম মন্ত্রণালয়কে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়। নোটিশে চলতি মৌসুমে নির্ধারণ করা হজের খরচ ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা থেকে কমিয়ে ৪ লাখ টাকার মধ্যে পুনর্নির্ধারণ করতে অনুরোধ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন>> হজ প্যাকেজ ঘোষণা, এবার জনপ্রতি খরচ ৬ লাখ ৮৩ হাজার টাকা
ধর্ম মন্ত্রণালয়কে এ লিগ্যাল নোটিশ পাঠান সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও আল কোরআন স্ট্যাডি সেন্টার সুপ্রিম কোর্টের কো-অর্ডিনেটর অ্যাডভোকেট আশরাফ উজ জামান।
নোটিশ পাওয়ার সাতদিনের মধ্যে এ বিষয়ে ব্যবস্থা না নিলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানানো হয়। বিমান ভাড়া, বাড়ি ভাড়া ও মোয়াল্লিমের খরচ অস্বাভাবিক বাড়ানো হয়েছে দাবি করে এ লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয় বলে জানান আশরাফ উজ জামান।
তিনি জানান, সরকারি ব্যবস্থাপনায় চলতি মৌসুমে হজের খরচ ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার। আর কোরবানি ছাড়াই এবার সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রীদের জন্য সর্বনিম্ন প্যাকেজ নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা। এর আগের বছরে যা ছিল ৫ লাখ ২২ হাজার ৭৪৪ টাকা।
গত ১ ফেব্রুয়ারি হজ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত নির্বাহী কমিটির সভায় হজ প্যাকেজ চূড়ান্ত করা হয়। সভা শেষে কমিটির সভাপতি ও ধর্মবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান সাংবাদিকের হজ প্যাকেজ সম্পর্কে জানান। এ বিষয়ে স্মারক জারি করে ধর্ম মন্ত্রণালয়। সেখানে বিমান ভাড়া দেখানো হয়েছে ১ লাখ ৯৭ হাজার ৭৯৭ টাকা।
চলতি মৌসুমে বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ করতে সৌদি আরব যেতে পারবেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ লাখ ১২ হাজার ১৯৮ জন হজ পালনের অনুমতি পাবেন।
চলতি বছর সরকারিভাবে ঘোষিত হজ প্যাকেজ অনুযায়ী, হজযাত্রায় প্রত্যেক হজযাত্রীর ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা খরচ হবে। গত বছরের তুলনায় খরচ সর্বোচ্চ এক লাখ ৬১ হাজার ৮৬৮ টাকা বেড়েছে। গত বছর সরকারিভাবে হজে যেতে প্যাকেজ-১ এ পাঁচ লাখ ৮৬ হাজার ৩৪০ টাকা এবং প্যাকেজ-২ এ পাঁচ লাখ ২১ হাজার ১৫০ টাকা খরচ নির্ধারণ করা হয়েছিল।
গত ২ ফেব্রুয়ারি বেসরকারিভাবে এজেন্সিগুলোর মাধ্যমে হজ পালনে সর্বনিম্ন খরচ ধরা হয় ৬ লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা। এর বাইরে প্রত্যেক হাজিকে কোরবানি বাবদ নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দেওয়ার কথা বলা হয়। গত বছর বেসরকারিভাবে হজ পালনে খরচ হয়েছিল পাঁচ লাখ ২২ হাজার ৭৪৪ টাকা। এবার তা প্রায় দেড় লাখ টাকা বাড়ানো হয়।
আরও পড়ুন>> চলতি বছর হজে যাবেন ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮
লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো আইনজীবী বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ-সৌদি-বাংলাদেশ রুটে প্লেন ভাড়া ৭৬ হাজার টাকা থেকে এক লাখ ১০ হাজার টাকা। প্রতি বছর দুই দেশের সরকার হজযাত্রীদের সৌদি ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের টিকিট কিনতে বাধ্য করে। এ কারণে টিকিট কিনতে হজযাত্রীদের স্বাধীনতা খর্ব করা হয়। এছাড়াও মোয়াল্লেম খরচ বেশি ধরা হয়েছে, সৌদি ট্রাভেল খরচ ধরা হয়েছে, কিন্তু হাজিরা তো মাত্র নির্দিষ্ট কয়েকটি স্থানে মক্কা ও মদিনায় যান এবং হজ করে দেশে ফিরে আসেন। এছাড়া বাড়ি ভাড়া সৌদি আরবে না বাড়লেও এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বাড়ানো হয়েছে, তাই আমরা চাই এসব অনাকাঙ্ক্ষিত খরচ কমানো হোক।
এসব কারণসহ বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ করে নোটিশে চার লাখ টাকার মধ্যে হজ প্যাকেজ-২০২৩ সংশোধন, পরিবর্তন এবং পুনর্নির্ধারণ করতে অনুরোধ করা হয়। সাতদিনের মধ্যে পদক্ষেপ নিতে করতে ব্যর্থ হলে প্রয়োজনীয় পদক্ষপ নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে।
লিগ্যাল নোটিশের অনুলিপি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, সৌদি আরবের বাদশা, ওআইসি ইরানের প্রধানমন্ত্রী, ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কোঅপারেশন (ওআইসি), তুরস্কের রাষ্ট্রপতি, মালয়েশিয়া ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, কাতারের সরকারপ্রধানসহ বিশ্বের মুসলিম সব অ্যাম্বাসিতে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে বিমান ভাড়া কমানোসহ হজ প্যাকেজের মূল্য পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়ে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছে অ্যাসোসিয়েশন অব ট্র্যাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব)। নোটিশের পরও কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় রিটটি করা হয় বলে জানান আইনজীবী।
এফএইচ/ইএ/জিকেএস