বিশ্ব পর্যটন দিবস

মানসিক সুস্থতায় ‘হাওয়া বদল’ কি আসলেই কাজ করে

লাইফস্টাইল ডেস্ক
লাইফস্টাইল ডেস্ক লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩:৩৬ পিএম, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বাংলার বিখ্যাত সব সাহিত্যে দেখা যায় - অসুস্থ কারো চিকিৎসায় ডাক্তার বলছেন তাকে ‘হাওয়া বদল’ করাতে। কিন্তু হাওয়া বদল জিনিসটা আসলে কী? হাওয়া বদল মানে হলো বেড়াতে যাওয়া, ভ্রমণে যাওয়া বা ভিন্ন কোনো পরিবেশের হাওয়া-বাতাস উপভোগ করা।

প্রতিদিনের ব্যস্ততা, অফিসের চাপ আর জীবনের নানা টানাপোড়েনে আমরা প্রায়ই মানসিকভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়ি। এমন সময় দৈনন্দিন জীবনের দায়িত্ব যেন অস্বাভাবিক চাপ মনে হয়। দীর্ঘদিন এমন মানসিক চাপে থাকলে মানুষ ধীরে ধীরে বিষণ্ন ও হতাশ হয়ে পড়ে।

এমন সময় মনকে নতুন করে সতেজ করার একটি কার্যকরী উপায় হলো ভ্রমণ। শুধু বিনোদনের জন্য নয়, গবেষণা বলছে ভ্রমণ আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় বড় ভূমিকা রাখে।

চলুন আজ (২৭ সেপ্টেম্বর) বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষ্যে জেনে নেওয়া যাক হাওয়া বদল কেন জরুরি-

১. ভ্রমণ ও মানসিক স্বস্তি

প্রকৃতির কাছাকাছি যাওয়া বা নতুন জায়গা দেখা মানসিক চাপ কমাতে সহায়তা করে। যখন আমরা পরিচিত পরিবেশের বাইরে যাই, তখন মস্তিষ্ক নতুন দৃশ্য, গন্ধ ও অভিজ্ঞতার সঙ্গে পরিচিত হয়। এতে স্ট্রেস হরমোন কর্টিসলের মাত্রা কমে যায় এবং সুখ হরমোন - ডোপামিন ও সেরোটোনিন - বাড়ে। ফলে মন শান্ত হয়, উদ্বেগ কমে আসে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাদের বিভিন্ন মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত রিপোর্টে উল্লেখ করেছে যে প্রকৃতির মাঝে সময় কাটালে মুড ভালো হয় এবং হরমোনের ভারসাম্য ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত হয়।

২. সম্পর্ক মজবুত করে

২০২০ সালে প্রকাশিত হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের একটি স্টাডিতে বলা হয়েছে - ভ্রমণের সময় পরিবার বা বন্ধুদের সঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলো সম্পর্কের বন্ধনকে দৃঢ় করে। একসঙ্গে নতুন অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়া পারস্পরিক বোঝাপড়া ও মানসিক সমর্থন বাড়ায়। এটি দাম্পত্য জীবনেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

মানসিক সুস্থতায় ‘হাওয়া বদল’ কি আসলেই কাজ করে

৩. সৃজনশীলতা ও কাজের আগ্রহ বাড়ায়

ভ্রমণ মস্তিষ্ককে নতুন চিন্তা ও ধারণার জন্য উন্মুক্ত করে। বিভিন্ন সংস্কৃতি, খাবার ও অভ্যাসের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। ফলে কাজের জায়গায় নতুনভাবে চিন্তা করার ক্ষমতা বাড়ে। অফিসে ফিরে মনোযোগ ও উৎপাদনশীলতাও বেড়ে যায়।

২০২১ সালে প্রকাশিত জার্নাল অব ট্রাভেল রিসার্চ-এর একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, ভ্রমণ মানুষকে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও সৃজনশীলতার জন্য উন্মুক্ত করে।

৪. উদ্বেগ ও বিষণ্নতা কমাতে ভূমিকা

২০১৯ সালে জার্নাল অব পজিটিভ সাইকোলজিতে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা যায়, যারা নিয়মিত ভ্রমণ করেন তাদের মানসিক স্বস্তি বেশি থাকে এবং উদ্বেগের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কম থাকে। একইভাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকৃতির মাঝে কাটানো সময় মানসিক সুস্থতার জন্য একটি কার্যকর থেরাপি।

অর্থাৎ, মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ভ্রমণ শুধু বিলাসিতা নয়, বরং প্রয়োজনীয়তা। তাই হয়তো যে সময় মানুষ মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে তেমন কিছুই জানতো না, তখনও ডাক্তাররা বলতেন রোগীকে হাওয়া বদল করাতে।

এ কারণে মাসে বা অন্তত বছরে কয়েকটি ছোট-বড় ভ্রমণের পরিকল্পনা রাখুন। দূরে না যেতে পারলেও শহরের বাইরে বা কাছের কোনো সবুজ পরিবেশে সময় কাটালে শরীর ও মন ভালো থাকবে।

সূত্র: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, জার্নাল অব পজিটিভ সাইকোলজি (২০১৯), জার্নাল অব ট্রাভেল রিসার্চ (২০২১), হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল স্টাডি (২০২০)

এএমপি/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।