হিংসা এড়ানোর ৯ উপায়
দৈনন্দিন জীবনে এমন পরিস্থিতি আসে যেখানে রাগ, হতাশা বা দ্বন্দ্বের ফলে হিংসার জন্ম হয়। ছোটখাটো বিবাদ থেকে শুরু করে বড় সামাজিক সংঘর্ষ – সব ক্ষেত্রেই হিংসার উপস্থিতি আছে।
তবে এটি বলাই যায়, হিংসা কোনো সমস্যার সমাধান নয়; বরং আরেক নতুন সমস্যা। এর মাধ্যমে জটিলতা আরও বেড়ে যায়। তাই জীবনকে শান্তিপূর্ণ ও স্বাস্থ্যকর রাখতে হলে আমাদের হিংসা রোধে সচেতন হওয়া জরুরি।
হিংসা কেন হয়?
মূলত ক্ষোভ, প্রতিশোধ, অহঙ্কার বা স্বার্থপরতা থেকে হিংসা জন্ম নেয়। কেউ কেউ অন্যের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার জন্য হিংসা করে, আবার কেউ কেউ নিরাপত্তার কারণে বা অজ্ঞতার কারণে হিংসার পথে যায়। কিন্তু এই পথের শেষ দিকে থাকে দুঃখ, সম্পর্কের অবনতি এবং মানসিক চাপ। তাই হিংসা রোধ করা জীবনের জন্য অপরিহার্য।
যা করবেন
১. মানসিক শান্তির চর্চা করুন
প্রতিদিন অন্তত কিছু সময় নিজের জন্য রাখুন। এই সময়ে মেডিটেশন, প্রার্থনা বা নিঃশ্বাসের ব্যায়াম করুন। মানসিক শান্তি থাকলে ক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়। রাগের মুহূর্তে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। কিন্তু শান্ত মন প্রয়োজনীয় সমাধান খুঁজে বের করতে সাহায্য করে।
২. সমঝোতা গড়ে তুলুন
অনেক সময় মানুষ অন্যকে ভুল বুঝে হিংসায় জয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে সহমর্মিতা এবং সমঝোতা একটি বুদ্ধিমানের সিদ্ধান্ত হতে পারে। অন্যের দৃষ্টিকোণ বোঝার চেষ্টা করুন, বোঝাপড়ার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করুন।
৩. ঝগড়া এড়াতে শিখুন
প্রতিদিনের জীবনে ছোট ছোট দ্বন্দ্ব এড়ানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন। কোন পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে, কিছু সময় বিরতি নিন। ঠাণ্ডা মাথায় কথা বললে হিংসার প্রবণতা কমে যায়।
৪. ইতিবাচক যোগাযোগ ব্যবহার করুন
অভিমান, আক্রমণাত্মক ভাষা এবং তীক্ষ্ণ মন্তব্য হিংসাকে প্রলুব্ধ করে। বরং শান্ত, সৌজন্যপূর্ণ এবং ইতিবাচক ভাষায় কথা বলুন। কথার মধ্য দিয়ে সমাধান খুঁজুন।
৫. নিয়মিত শারীরিক কসরত করা
শরীর ও মনকে সুস্থ রাখা হিংসার প্রবণতা কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস মানসিক চাপ হ্রাস করে। সুস্থ দেহে সুস্থ মন বজায় থাকে, আর রাগ ও হিংসা কম হয়।

৬. ধর্মীয় আদেশ মেনে চলা
ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন, ধর্মীয় বই পড়া, বা নিয়মিত প্রার্থনা হিংসা নিয়ন্ত্রণের শক্তিশালী হাতিয়ার। ধর্মীয় শিক্ষা সহানুভূতি, ক্ষমা এবং শান্তির মূল্য শেখায়। যে ব্যক্তি নিয়মিত ধর্মীয় চর্চায় মনোনিবেশ করে, তার মধ্যে ধৈর্য, বিনয় এবং সহমর্মিতা বাড়ে, যা হিংসা রোধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
৭. সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সচেতনতা বৃদ্ধি করুন
শিক্ষা ও সচেতনতা হিংসা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ। নিজের চারপাশের মানুষকে, বিশেষ করে শিশুদের, অহিংসার মানসিকতা শেখানো উচিত। স্কুল, কলেজ, কর্মক্ষেত্রে এবং পরিবারে ছোট উদ্যোগ যেমন- শান্তিপূর্ণ কথা, কমিউনিটি কার্যক্রম অনেকটাই পরিবর্তন আনতে পারে।
৮. হিংসার পরিবর্তে সৃজনশীলতা চর্চা করুন
রাগ বা হতাশা অনুভব করলে সৃজনশীল কাজে মনোযোগ বাড়াতে পারেন। লেখা, আঁকা, গান, ব্যায়াম বা বাগান এসব কাজে মন শান্ত হয় এবং হিংসার প্রবণতা কমে।
৯. দৈনন্দিন জীবনে ছোট ছোট সহায়তা
প্রতিদিনের ছোট কাজও সমাজে শান্তি ছড়াতে পারে। কেউ সমস্যায় পড়লে সাহায্য করা, হাসি-উৎসাহ দিয়ে অন্যকে প্রেরণা দেওয়া। এই ছোটো পদক্ষেপগুলো মিলিয়ে বৃহত্তর শান্তির ভিত্তি তৈরি হয়।
হিংসা রোধ করা কেবল নৈতিক বা সামাজিক বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য, সম্পর্ক এবং জীবনের গুণগত মানেও প্রভাব ফেলে। তাই নিজেকে নিয়ে সন্তুষ্ট হলে অন্যের প্রতি হিংসা তৈরি হবেনা।
তথ্যসূত্র: ইউনাইটেড নেশনস, ফ্রাস্ট্রেশন–অ্যাগ্রেশন হাইপোথেসিস, ননভায়োলেন্ট কমিউনিকেশন, ভায়োলেন্স এগেইনস্ট উইমেন অ্যান্ড মেন্টাল ডিজঅর্ডার
মামুনূর রহমান হৃদয়/এএমপি/জেআইএম