জীবন তুচ্ছ মনে হয় মীমের, কী করবে সে

লাইফস্টাইল ডেস্ক
লাইফস্টাইল ডেস্ক লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১:৪২ এএম, ১০ অক্টোবর ২০২৫
সামাজিক তুলনা তরুণদের মানসিক চাপের অন্যতম বড় কারণ। ছবি এআই

ফেসবুক খুললেই দেখা যায় সবাই ঘুরে বেড়াচ্ছে দুনিয়ার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। আলো ঝলমলে রেস্তোরাঁয় খেতে যাচ্ছে, নতুন ফোন কিনছে, ক্যারিয়ারে পাচ্ছে সাফল্য! এসব দেখে নিজের জীবন তুচ্ছ মনে হয় মীমের। এখন কী করবে সে? পড়াশোনা শেষ করে সে কি পারবে ওদের মতো হতে? এই অস্থিরতা চেপে বসেছে তার মনের ভেতর!

হৃদয়ের সমস্যাটাও অনেকটা মীমের মতো। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে সে, অথচ পড়ালেখায় মনোযোগ ধরে রাখতে পারছে না। দিনের বেশিরভাগ সময় তার কাটে ফেসবুকে। রাতে ঘুমাতে যায় অনেক দেরিতে, সকালে ঘুম ভাঙতেই চায় না। পড়াশোনার আগ্রহ হারিয়ে গেছে তার। বন্ধুদের সঙ্গেও মিশতে ইচ্ছে করে না। মন খারাপের কোনো কারণ নেই, সবসময় তবু একটা মনভারি ভাব ঘিরে রাখে তাকে। কেবলই মনে হয়, ‘অন্য সবাই এগিয়ে গেছে, শুধু আমি পিছিয়ে!’ সে আসলে বিষন্নতায় ভুগছে।

মীম কিংবা হৃদয়ের এই অনুভূতি এখনকার তরুণ সমাজের সাধারণ গল্প। প্রযুক্তি তাদের যেমন জ্ঞান ও যোগাযোগের নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে, তেমনি অদৃশ্য এক চাপও তৈরি করেছে — সর্বদা সফল হতে হবে, অন্যের চেয়ে এগিয়ে থাকতে হবে। আধুনিক জীবনের এই অস্থির প্রতিযোগিতা তরুণদের মানসিক ভারসাম্যকে হুমকির মুখে ফেলছে। অন্যের মতো ‘সফল’ হতে চাওয়ার প্রবণতা ও সামাজিক চাপ আর সোশ্যাল কমপেরিজন এখন তরুণদের মানসিক চাপের অন্যতম বড় কারণ। এসব চাপ তরুণদের মনোরোগ সৃষ্টি করছে।

আধুনিক জীবনের অস্থির প্রতিযোগিতা তরুণদের মানসিক ভারসাম্যকে হুমকির মুখে ফেলছে।

মানসিক চাপ, বিষন্নতা — এসব এখন আর ছোটখাটো কোনো বিষয় নয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অতি-ব্যবহার, অনিশ্চিত ভবিষ্যতের ভয়, পরিবার ও সমাজের চাপ, সব মিলিয়ে তরুণদের মানসিক শক্তি ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ছে। বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য-সমস্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে।

২০২৪ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ৫৫ দশমিক ৯ শতাংশ মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। এর মধ্যে নারীরা তুলনামূলক বেশি, প্রায় ৬২ দশমিক ৮ শতাংশ। একই গবেষণায় দেখা গেছে, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন আরও বেশি, প্রায় ৫৬ দশমিক ৮ শতাংশ। আঁচল ফাউন্ডেশনের এক জরিপ বলছে, ২০২৪ সালে দেশে ৩১০ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন, যাদের মধ্যে ৬৫ দশমিক ৭ শতাংশের বয়স ১৩ থেকে ১৯ বছর।

হৃদয় নামের ওই তরুণের গল্পের পরের অংশটি হচ্ছে, একজন মনোচিকিৎসকের সাহায্য নিয়েছিলেন তিনি। তার কাছ থেকে শিখেছেন, কীভাবে নেগেটিভ চিন্তা থেকে বিরত থাকা যায়। সে এখন আর নেতিবাচক চিন্তাকে পাত্তা দেয় না, নিজেকে অন্যদের সঙ্গে তুলনা করে না। তার আত্মবিশ্বাস ফিরেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এখন আর হৃদয়ের মনের ওপর চাপ ফেলে না। কারণ সে এখন বাস্তব জীবনে বেশি সময় ব্যয় করে। পড়ালেখার পাশাপাশি পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটায়, বই পড়ে, মাঝে মাঝে ক্রিকেট খেলে, সময় পেলে বন্ধুদের সঙ্গে প্রকৃতি দেখতে বেরিয়ে পড়ে।

*মীম ও হৃদয় ছদ্মনাম

লিখেছেন: মাহমুদা ইসলাম মীম, সাইকোলজিস্ট, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

এএমপি/আরএমডি/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।