সবসময় বসই সঠিক,অফিসে টিকে থাকবেন যেভাবে
কখনো কি এমন বসের সঙ্গে কাজ করেছেন, যিনি মনে করেন সবসময় তিনি সঠিক, এমনকি তিনি ভুল করেলেও। অন্যের পরামর্শ বা দক্ষতাকে তারা মানেন না। প্রতিষ্ঠান বা কাজের পরিবেশকে নিজেদের ব্যক্তিগত রাজ্য মনে করেন।
এই আচরণ শুধু অফিসে নয়, বাড়ি বা পরিচিত পরিসরেও দেখা যায়। উচ্চপদস্থদের মধ্যে প্রায়ই ‘বস ইজ অলওয়েজ রাইট’ মানসিকতা লক্ষ্য করা যায়। তারা বিশ্বাস করেন, তারা কখনো ভুল হতে পারেন না।
মনস্তাত্ত্বিক ভাষায় এই আচরণের নাম গড’স সিনড্রোম। এটি কোনো শারীরিক রোগ নয়, তবে মানসিক ও আচরণগত সমস্যা হিসেবে দেখা হয়। এই ধরনের মানুষরা নিজেদেরকে ত্রুটিহীন মনে করেন, অন্যদের উপরে স্থাপন করেন এবং জবাবদিহিতার বাইরে থাকেন।
নেতৃত্বে আত্মবিশ্বাস অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস কখনো বিপজ্জনক এবং ধ্বংসাত্মকও হতে পারে।
পেশাজীবনে অন্তত একবার এই রোগে আক্রান্ত ঊর্ধ্বতন বা সহকর্মীর প্রভাবে সমস্যায় পড়েননি এমন মানুষ কমই আছেন।
মনোবিদরা বলেন, নেতৃত্ব প্রদানকারী মানুষের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই আত্মবিশ্বাস থাকা জরুরি। এটি তাদের চরিত্রের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিন্তু যখন এই আত্মবিশ্বাস অতিরিক্ত মাত্রায় পৌঁছে যায়, তখন তা বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়ায়। কিছু ক্ষেত্রে এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি নিজেকে প্রায় ঈশ্বরের সমতুল্য মনে করেন।

বিশ শতকের গোড়ার দিকে মনোবিদ আর্নেস্ট জন্স প্রথম এই ধরনের মানসিক রোগকে চিহ্নিত করে ‘গড’স কমপ্লেক্স’ নামে। পরবর্তীকালে এই ধারণা থেকে উদ্ভূত হয় গড’স সিনড্রোম, যা আধুনিক সময়ে আমাদের কর্মক্ষেত্র ও পারিপার্শ্বিক জীবনে দেখা যায়।
গড’স সিনড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সাধারণ বৈশিষ্ট্য
গড’স সিনড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তি শুধু নিজের প্রতি বিশ্বাসই রাখেন না, বরং আশেপাশের মানুষদের নিয়ন্ত্রণ করার প্রবণতাও তাদের মধ্যে দেখা যায়। মনোবিদরা বলছেন, এই ধরনের ব্যক্তিদের কয়েকটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো:
১. তারা বিশ্বাস করেন, তাদের অজানা কিছু নেই। এই মনোভাবের কারণে তারা অন্যদের মতামত বা অভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব দেন না।
২. সাধারণত অধস্তনদের কথা বা সমস্যায় মনোযোগ দিতে চান না।
৩. ভালো কিছু ঘটলে নিজেই ক্রেডিট নেন, খারাপ হলে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপান।
৪. বিশ্বাস করেন, তাদের মতো দক্ষ কেউ আর নেই।
৫. ভয়ংকর পরিবেশ তৈরি করে রাখেন, যেখানে কথা বলতে গেলে দশবার ভাবতে হয়।
৬. নিজেও যে ভুল করতে পারে, তা মেনে নিতে নারাজ।
৭. এমন মানুষদের সঙ্গে মেলামেশা করতে পছন্দ করেন, যারা তাদের ইশারায় চলে।
পেশাক্ষেত্রে সমস্যা,‘গড’স সিনড্রোম’ এর প্রভাব
কর্মক্ষেত্রে সাধারণত যোগ্যতার নিরিখে ঊর্ধ্বতন ও অধঃস্তন থাকে। কেউ বস বা কর্মকর্তা হিসেবেই স্বীকৃত হন। কিন্তু হাতে-কলমে কাজ করতে হয় সবার।
যদি কোনো ঊর্ধ্বতন ব্যক্তি ‘গড’স সিনড্রোম’-এ আক্রান্ত হন, তাহলে বড়-ছোটের মধ্যে অনাবশ্যক ভেদাভেদ তৈরি হয়। এতে কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ নষ্ট হয়, অধঃস্তনদের মধ্যে হীনমন্যতা কাজ করে, এমন কি দক্ষ কর্মীরা কাজ ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। এই ধরনের নেতার আচরণ পুরো টিমের মনোবল ও উৎপাদনশীলতাকে প্রভাবিত করে।
গড’স সিনড্রোম মোকাবিলার কৌশল
১. আক্রমণাত্মকভাবে নয়, দৃঢ়ভাবে তথ্য এবং প্রমাণের ভিত্তিতে যোগাযোগ করুন।
২. সিদ্ধান্ত এবং আলোচনার বিষয়গুলো নথিভুক্ত রাখুন, যাতে দোষারোপ থেকে নিজেকে রক্ষা করা যায়।
৩. অন্যদের সঙ্গে সমর্থন জোট গড়ে তুলুন, যাতে বিচ্ছিন্ন না হন।
৪. কখনো কখনো বিষাক্ত পরিবেশ থেকে দূরে থাকা বুদ্ধিমানের কাজ; বেতন বা পদমর্যাদার চেয়ে নিজের শান্তিকে অগ্রাধিকার দিন।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, ভেরিওয়েল মাইন্ড ও অন্যান্য
আরও পড়ুন:
শীতের অবসাদ কাটানোর সহজ উপায়
যে কারণে মানুষ সম্পর্কে জড়ায়
এসএকেওয়াই/এমএস