শীতের অবসাদ কাটানোর সহজ উপায়
বছরের বিশেষ সময়ে কোনো স্পষ্ট কারণ ছাড়া হঠাৎ মন খারাপ ঘিরে ধরতে পারে। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত বা বসন্ত-প্রতিটি ঋতুর মাঝেই বিষণ্ণতা লুকিয়ে থাকতে পারে। তবে সবাই তা অনুভব করতে পারেন না। শীতকালীন পরিবর্তিত আবহাওয়া, কম সূর্যালোক এবং দৈনন্দিন রুটিনের কারণে মনেও প্রভাব পড়ে, ফলে হঠাৎ মন খারাপ হতে পারে।
মনোবিদরা বলছেন, শীতকালীন এই মন খারাপের বিশেষ একটি নাম আছে-‘উইন্টার ব্লুজ’। শুধু বয়স্করাই নয়, তরুণ প্রজন্মও এখন এর শিকার হচ্ছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় একে সিজন্যাল অ্যাফেক্টিভ ডিজঅর্ডার বা স্যাড বলা হয়।
‘স্যাড’ কী?
এটি এক ধরনের ঋতুকালীন অবসাদ, যাকে সিজনাল অ্যাফেক্টিভ ডিজঅর্ডার বা উইন্টার ব্লুজও বলা হয়। খালি চোখে শীত রঙিন মনে হলেও, এই ঋতুর প্রভাবে অনেকের মন ধূসর হয়ে ওঠে। পিকনিক, বেড়ানো, বিয়েবাড়ি, খাওয়া-দাওয়া বা নতুন বছরের আয়োজন থাকা সত্ত্বেও মনের কোণে কেন মেঘ জমে, তা অনেক সময় স্পষ্টভাবে বোঝা যায় না।

মনোবিদরা জানান, ঋতুকালীন মনখারাপ বা স্যাড মূলত শীতপ্রধান দেশে প্রথম শনাক্ত করা হয়েছিল। ডিসেম্বর-জানুয়ারির সময় দিন ছোট হয়ে আসে, প্রবল ঠান্ডা, ঝিরঝিরে বৃষ্টি বা তুষারপাতে বাইরে বের হওয়া প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। স্বাভাবিক দৈনন্দিন কাজকর্মও বাধাগ্রস্ত হয়। এই কারণে মানসিকভাবে অবসাদ দেখা দিতে পারে।
আমেরিকান ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথ-এর তথ্য অনুযায়ী, উইন্টার ব্লুজ বা ঋতুকালীন মনখারাপ সাধারণত শরতের শেষ থেকে শুরু হয় এবং শীত জুড়ে চলতে থাকে। বসন্ত এলে ধীরে ধীরে এই অবসাদ কমতে শুরু করে।চিকিৎসকরা জানান, শীতের সময়ে দিন ছোট হয়ে আসে এবং সূর্য ওঠেই না প্রায়ই। ফলে দেহের নিজস্ব ছন্দ বা সার্কাডিয়ান রিদম ব্যাহত হয়। এই পরিবর্তনই মনমেজাজকে প্রভাবিত করে এবং কিছু মানুষের মধ্যে বিষণ্ণতা বা হতাশার অনুভূতি বাড়িয়ে তোলে।
তবে শুধু শীতপ্রধান দেশেই নয়, দীর্ঘ সময় সূর্যালোকের অভাব যে কোনো স্থানে মানুষের মনের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। ফলে মন খারাপ এবং বিষণ্ণতার অনুভূতি তৈরি হয়।
স্যাডের লক্ষণ
সিজন্যাল অ্যাফেক্টিভ ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শরীরে মেলাটোনিন প্রায়ই স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মাত্রায় উৎপন্ন হয়, যা অতিরিক্ত ঘুম বা অলসতার অনুভূতি তৈরি করতে পারে। একই সময়ে শীত বা কম সূর্যালোকের কারণে সেরোটোনিনের মাত্রা কমে যেতে পারে, যা সরাসরি বিষণ্ণতা, হতাশা এবং মন খারাপের সঙ্গে যুক্ত।
এছাড়া স্বাভাবিক দৈনন্দিন কাজকর্মে আগ্রহ বা আনন্দ হারিয়ে ফেলা, অনেক সময় অপরাধবোধ বা নিজের মূল্যহীনতার ভাব দেখা দিতে পারে। দিন জুড়ে শক্তি কমে যাওয়ায় অলসতা অনুভূত হয় এবং ঘুমের মধ্যে অস্বস্তি থাকে। কিছু ক্ষেত্রে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় ঘুমিয়ে থাকে এবং সকালে ঘুম থেকে ওঠতেও কষ্ট হয়।
কার্বোহাইড্রেটের প্রতি আকাঙ্ক্ষা বেড়ে যেতে পারে, যা অনেক সময় ওজন বৃদ্ধির সঙ্গে যুক্ত হয়। পাশাপাশি কাজে মনোযোগ দিতে অসুবিধা এবং যৌন ইচ্ছার কমে যাওয়া লক্ষ্য করা যায়। ফলে ব্যক্তি শারীরিকভাবে সুস্থ থাকলেও মানসিকভাবে ক্লান্তি ও হতাশায় ভুগতে থাকে।

স্যাড দূরে রাখার উপায়
১. ঠান্ডা থাকলেও অল্প সময়ের জন্য বারান্দা বা ছাদে বের হয়ে ঘুরে আসা যেতে পারে। জানালার ধারে বসেও কিছুটা সময় কাটানো যেতে পারে। দিনে সূর্যের আলোতে কিছু সময় কাটালে মন ভালো হওয়ার অনুভূতি বাড়তে পারে এবং শীতকালীন বিষণ্ণতা কিছুটা কমে আসে।
২. শীতের সময়ে অনেকেই শরীরচর্চা করতে অনীহা বোধ করেন। এর ফলে শরীরের হরমোনের ক্ষরণ ও কার্যকারিতা প্রভাবিত হয়। হরমোনের এই হেরফেরই মনখারাপের তীব্রতা বাড়াতে পারে। তাই শীতকালে নিজেকে সতেজ রাখতে এবং মন ভালো রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম করা খুবই জরুরি।
৩. পরিবার, বন্ধু বা প্রিয় মানুষের সঙ্গ মনখারাপকে অনেকটাই দূরে সরিয়ে দেয়। প্রিয়জনের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলাও মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। অনেক সময় কথা বলার এই যোগাযোগই হয়ে উঠতে পারে কার্যকর ‘থেরাপি’। যদি কাউকে ভরসা করে মনের কথা বলা সম্ভব না হয়, তবে অনুভূতিগুলো লিখে রাখাও মন হালকা করতে পারে।
৪. সিজনাল ডিপ্রেশন বা ঋতুকালীন মনখারাপ ঠেকাতে অনেক সময় চিকিৎসকরা ভিটামিন ডি নেওয়ার পরামর্শ দেন। ভিটামিন ডি শরীরে পর্যাপ্ত থাকলে মনমেজাজ ভালো রাখতে সাহায্য করে এবং শীতকালে বিষণ্ণতা কমিয়ে মনকে সতেজ রাখে।
৫. এই সমস্যা মেডিটেশনের মাধ্যমে মুক্তি পেতে পারেন। তাই শীতের সময়ে চেষ্টা করুন সঠিক নিয়মে মেডিটেশন করার।
সূত্র: বিবিসি, ভেরি ওয়েল মাইন্ড
আরও পড়ুন:
ত্বক থেকে হার্ট, সবকিছুর জন্য উপকারী এক সুপারফুড
শীতে পিরিয়ডের সময় যেসব ফল না খাওয়াই ভালো
এসএকেওয়াই/