করোনা আতঙ্ক: মনের উপর চাপ না পড়ুক
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বাড়ছেই। এদিকে লকডাউনে যার যার ঘরে বন্দি সবাই। পৃথিবীর এই স্থবিরতা না চাইতেই মনের উপর চাপ ফেলছে। আশঙ্কা আর ভয় তৈরি হচ্ছে। যা ক্রমশ অবসাদে পরিণত হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনামুক্ত থাকতে মন ভালো রাখা জরুরি। অবসাদ ও অ্যাংজাইটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে। সুতরাং সুস্থ থাকার একমাত্র পথ মন ভালো রাখা।
এই সময় অনেকে বাড়ি থেকে অফিসের কাজ করছেন ঠিকই আবার অনেকের সে উপায়ও নেই। বেসরকারি চাকরিজীবীদের আশঙ্কাও বাড়ছে। একটা অজানা অসুখের সঙ্গে লড়াই এমনিতেই ভয় ধরাচ্ছে। তার উপর আবার এই অসুখের কোনো ওষুধ এখনও নেই। তাই ভয়টাও বেশি। তবে সব ঘটনার মধ্যেই ইতিবাচক দিক খুঁজে নিতে পারলে সমস্যা হবে না।
যারা বাড়িতে সময় দিতে পারতেন না, তারা এই সময়টাকে উপভোগ করার চেষ্টা করুন। ভেঙে পড়লে চলবে না। প্রাণে বাঁচলে তবেই তো চাকরি থাকবে বা নতুন চাকরি হবে, এভাবে ভাবতে পারেন। নেতিবাচক চিন্তা মনের নানা সমস্যা ডেকে আনে, তাই এই চিন্তা-ভাবনা থেকে জোর করে বেরিয়ে আসতে হবে।
দিনভর অলসভাবে বিশ্রামে থাকলে মন একটা সময় মনে চাপ পড়বেই। তাই সকালে উঠেই ছাদে বা বারান্দায় গিয়ে ১০-১৫ মিনিট হাঁটুন বা গাছের পরিচর্যা করুন। প্রকৃতিকে অনুভব করার চেষ্টা করুন।
প্রতিবেশী প্রাণি কাক, শালিখ, চড়ুই বা কুকুর, বেড়ালকে কিছু খেতে দিন। মন ভালো হবে।
বাড়ির কাজে সবাই মিলে হাত লাগান। শিশুকেও তার সাধ্য অনুযায়ী কিছু কাজের দায়িত্ব দিন।
লকডাউনের একটা ভালো দিক হলো পরনির্ভরশীলতা ছেড়ে সাবলম্বী হওয়া। ভেবে দেখুন, এক দিন গৃহকর্মী না এলে আমরা নাস্তানাবুদ হতাম। এখন কিন্তু নিজেদের কাজে অভ্যস্ত হয়ে গেছি।
কাজ করুন ভালোবেসে, বিরক্তি নিয়ে কাজ করলে কাজ আর মন দুই খারাপ হবে।
অনেকের বাবা-মা কাছে না থাকায় দুশ্চিন্তা করছেন। চিন্তা করে সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। তাই নিয়ম করে দু’বেলা বাবা-মা বা নিকট জনের সঙ্গে ফোনে কথা বলে নিন। তারা প্রকৃত কোনো সমস্যায় পড়লে স্থানীয় থানায় ফোন করে যোগাযোগ করুন।
আমাদের দ্রুতগতির জীবনে অনেক বন্ধুবান্ধব বা আত্মীদেরর সঙ্গে যোগাযোগ একপ্রকার বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। এই অবসরে সম্পর্কগুলো ঝালিয়ে নিন। ফোনে আড্ডা দেওয়ায় কোনো নিষেধ নেই।
শিশুদের আঁকা, গান শেখানোর পাশাপাশি ক্লাসিক বই পড়ে শোনান। ওদেরও গল্প বলতে বলুন।
নিজেদের কোনো ভুলে যাওয়া শখ, যেমন: গান বাজনাই হোক বা গল্প-কবিতা লেখার অভ্যাস হোত, তা ঝালিয়ে নিলে মন ভালো থাকবে।
আগে গল্পের বই পড়ার সময় পাওয়া যেত না, এই অবসরে বইয়ের তাক থেকে বই পড়লে মন ভালো হবে।
টিভিতে খবর না দেখে কার্টুন বা বেড়ানোর চ্যানেল দেখুন। তবে দিনের মধ্যে স্ক্রিন টাইম যেন দু’-তিন ঘণ্টার বেশি না হয় খেয়াল রাখবেন।
এই সুযোগে রান্নার অভ্যাস ঝালিয়ে নিন। যা পাওয়া যাচ্ছে সেই সব সহজলভ্য উপকরণ দিয়ে নতুন পদ রান্নার চেষ্টা করুন।
করোনাভাইরাস নিয়ে সচেতন থাকা ভালো, কিন্তু দিনভর পৃথিবীর কোথায় কত জন মারা পড়ছে সেই পরিসংখ্যান নিয়ে ব্যতিব্যস্ত হবেন না।
আনন্দবাজার/এইচএন/এমকেএইচ