সময়ের ধারাবাহিকতায় পরিবর্তন এসেছে : এহসান মাহমুদ
এহ্সান মাহমুদ তরুণ কবি ও কথাসাহিত্যিক। তিনি একাডেমিক পড়াশোনা করেছেন বিজ্ঞান, মানবিক ও ইংরেজি ভাষা সাহিত্যে। অংশ নিয়েছেন বাংলা একাডেমি পরিচালিত তরুণ লেখক প্রশিক্ষণ কোর্সে। ছাত্রজীবন থেকেই বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি করছেন তিনি। এপর্যন্ত তার উপন্যাস ‘একাত্তরের লাল মিয়া’ ২০১৫ সালে এবং কাব্যগ্রন্থ ‘আদিবাসী প্রেমিকার মুখ’ ২০১৭ সালে প্রকাশিত হয়।
তরুণের কথা’র প্রথম পর্বে জাগো নিউজের পক্ষ থেকে তার মুখোমুখি হয়েছেন কবি ও কথাসাহিত্যিক সালাহ উদ্দিন মাহমুদ।
জাগো নিউজ : নিজের সম্পর্কে কিছু বলুন—
এহ্সান মাহমুদ : নিজের সম্পর্কে কী বলবো! এককথায় বলতে পারি— আমি গল্প, কবিতা, উপন্যাস লিখি। এটা হচ্ছে গিয়ে আমার নিজের পরিচয়। আর এসবের বাইরে বলতে পারি পরিবারের কথা। আমার মা আছেন। দীর্ঘদিনের প্রেমিকাকে বিয়ে করেছি। স্ত্রী নাজমুন নাহার কচি স্কুলশিক্ষক। সম্প্রতি এক পুত্র জন্ম নিয়েছে আমাদের। পুত্রের নাম ওহি। নিজের লেখালিখি আর পরিবার— এই হচ্ছি এখনকার আমি।
জাগো নিউজ : আপনার প্রথম বই প্রকাশের অনুভূতিটা কেমন ছিলো?
এহসান মাহমুদ : প্রথম বই প্রকাশের অনুভূতি কেমন ছিল, সেটি সত্যি বলতে এখন ঠিক মনে নেই। ঠিক মনে নেই মানে হুবহু মনে নেই। তবে এটা বেশ মনে আছে বই যখন প্রেসে ছাপা হচ্ছিল, তখন প্রেসে গিয়ে বসে ছিলাম। ছাপাখানার মেশিন থেকে একটি একটি করে কাগজ যখন বের হয়ে আসছিল, তখন এক ধরনের ঘোর তৈরি হয়েছিল, মনে পড়ে। যখন বাঁধাইখানার লোকজন ফর্মা সেলাই করছিল; তখন মনে হচ্ছিল বাঁধাইশিল্পীরা বুঝি আমার স্বপ্ন সেলাই করে মালা গেঁথে দিচ্ছেন। আর নিজের নাম ছাপার অক্ষরে দেখার যে উত্তেজনা বা আগ্রহ সেটি বই প্রকাশের আগেই হয়েছিল। প্রথম বই প্রকাশের আগে দৈনিক সংবাদ, বাংলা একাডেমির উত্তরাধিকার পত্রিকায় নিজের লেখা প্রকাশিত হয়েছিল। তাই ছাপার অক্ষরে নিজের নাম দেখতে পাওয়ার যে অনুভূতি সেটি আগেই হয়ে গিয়েছিল।
তবে বই প্রকাশের অনুভূতির সাথে সে সবের তুলনা খুবই সামান্য মনে হয়। আর আমার প্রথম বই প্রকাশের কথা পরিবারের লোকজনের কাছে যেহেতু গোপন রাখতে হয়েছিল, তাই অনেকটা ভয়ে ভয়ে লুকিয়ে কাজ করতে হয়েছিল। অনেকটা বলতে পারেন, প্রেমিকার সাথে গোপনে দেখা করার মতো।
আমাদের পরিবারে লেখালেখি পছন্দ করেন এমন লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না। অবশ্য আমার বড় মামা যখন জানলেন যে, আমি লেখালেখি করি তখন তিনি মাঝে মাঝে আমার সাথে বিভিন্ন কবি-লেখকের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আলোচনা করতেন। মামা সবসময় কবি-লেখকদের ব্যক্তিগত জীবনের নানা পরাজয় এবং অর্থনৈতিক অস্বচ্ছলতার কথা বলে তাঁর কথা শেষ করতেন। মানে আমাদের সমাজে একটি বিষয় মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে যে, লেখক মানে হতদরিদ্র। তাঁদের পরনে থাকবে মলিন জামা, পায়ে বহু ব্যবহারে ক্ষয় হয়ে যাওয়া স্যান্ডেল। তাঁরা মোটামুটি পরজীবী ধরনের জীবন যাপন করবেন। তবে মজার বিষয় হলো, সেসব শুনতে শুনতে সেই সময় কল্পনা করতাম— আমি দেশজোড়া পরিচিতি পেয়েছি লেখালিখি করে। পাশাপাশি আমি জীবন যাপন করছি ইউরোপের বা আমেরিকার সম্পদশালী কোনো লেখকের মতো।
জাগো নিউজ : বাংলা সাহিত্যের কাছে আপনার প্রত্যাশা এবং প্রাপ্তির পার্থক্য কেমন?
এহসান মাহমুদ : দেখুন, বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস কিন্তু বেশ পুরনো। বিষয়টি গর্ব করার মতো। সেই ৬৫০ খ্রিষ্টাব্দ থেকেই বাংলা সাহিত্যের উপস্থিতি। যদিও এটি কাগুজে এবং গবেষণার ফলাফল। এর আগেও বাংলা সাহিত্য ছিল বলে আমার বিশ্বাস। তখনকার নিদর্শন রয়েছে। কিন্তু হতাশার কথা হচ্ছে, বাংলা ভাষা সবসময়ই শোষিত হয়ে এসেছে। সাহিত্য যেহেতু ভাষানির্ভর, তাই উৎকৃষ্ট সাহিত্যের জন্য ভাষার স্বাধীনতা জরুরি।

সেই প্রাচীন যুগের চর্যাপদ, মধ্যযুগের রামায়ণ, বৈষ্ণব পদাবলী, ইউসুফ-জোলেখা, রসুলবিজয়, মনসামঙ্গল, পদ্মাবতী— এসবই কিন্তু বাংলা সাহিত্যের ঐতিহ্য। আমি যখন লিখতে শুরু করেছি, তখন আমাকে সবসময় মনে রাখতে হবে যে, আমার রয়েছে এক সমৃদ্ধ উত্তরাধিকার। লুইপা, কাহ্নপা, বড়ু চন্ডীদাস, গোবিন্দ দাস, বিদ্যাপতি, কৃত্তিবাস ওঝা, আবদুল হাকিম, শেখ ফয়জুল্লাহ, আলাওল, লালন, কায়কোবাদ, প্যারিচাঁদ মিত্র, মধুসূদন, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জসীম উদদীন, শরৎচন্দ্র এঁদের ধারাবাহিকতায় আমি এসেছি। আমাকে ভুলে গেলে চলবে না জীবনানন্দ দাশ বলে একজন কবি বাংলা সাহিত্যের অগ্রযাত্রায় অংশ নিয়েছেন। তেমনি ভুলে গেলে চলবে না মানিক, তারাশঙ্কর এবং বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা। কথাসাহিত্যে সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহকে স্মরণ করতেই হবে।
যখন আমি পেছনে ফিরে আমাদের বাংলা সাহিত্যের এই সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের দিকে মুখ রাখি; তখন একটি আনন্দ খেলে যায় ভেতরে ভেতরে। পরক্ষণেই সেই আনন্দ বুদ্বুদ চুপসে যায় প্রাপ্তির দিকে তাকালে। আজকাল প্রায়ই শোনা যায় ‘বিশ্বসাহিত্য’ বা ‘বিশ্বসাহিত্যের বিচারে’ শব্দগুলো। অতি আগ্রহী কেউ কেউ বিশ্বসাহিত্যের বিচারে বাংলা সাহিত্যের বিচার করতে বসেছেন! যে বা যাঁরা এসব বলে বা লিখে নিজের জ্ঞান জাহির করতে এসেছেন তাঁদেরকে বলবো— নাইজেরিয়া বা উগান্ডার সাহিত্যকে আপনি যখন ‘বিশ্বসাহিত্য’ বলছেন তখন মনে রাখা দরকার লাতিন আমেরিকা বা মিশরে আপনার সাহিত্যকে ‘বিশ্বসাহিত্য’ বলে অভিহিত করছে কি না? আর না করে থাকলে, তার জন্য করণীয় কী ঠিক করে রেখেছেন?
প্রাপ্তির কথা বলতে- এখন পর্যন্ত বাংলা সাহিত্যের সামনে উদাহরণ সেই ১৯১৩ সাল। সেই রবীন্দ্রনাথ। সেই গীতাঞ্জলী। এরপরে কি বাংলা সাহিত্যে আর কেউ আসেননি? আমি তো মনে করি, নোবেল কমিটির ব্যর্থতা যে তাঁরা বিভূতিভূষণের মতো একজন লেখককে পুরস্কৃত করতে পারেননি। বিভূতির ‘দেবযান’ উপন্যাসের পাশে দাঁড়াতে পারে এমন উপন্যাস সারা বিশ্বেই কম। শরৎচন্দ্রের ‘শ্রীকান্ত’? যদি লাতিন আমেরিকান লেখক মার্কেজের ‘হানড্রেড ইয়ারস অব সলিচ্যুট’ নোবেলের জন্য মনোনীত হতে পারে, তবে ‘শ্রীকান্ত’ কেন নয়? হারুকি মুরাকামির লেখা নিয়ে যাঁদের উৎসাহ তাঁদের বলবো আমাদের ‘বনফুল’ পড়ে দেখবেন। আমাদের সতীনাথ পাঠ করবেন।
জাগো নিউজ : সমকালীন কথাসাহিত্য নিয়ে আপনার ভাবনা কী?
এহসান মাহমুদ : প্রথমে একটু পরিষ্কার করে নিলে ভালো হয়, ‘সমকালীন’ বলতে আমি কী বুঝবো? একটি হতে পারে— আমার সমকালে যাঁরা লিখছেন। যদি এই দৃষ্টিকোণ থেকে বলি, তবে বলবো যে, এই মুহূর্তে বিশ্বের যে অঞ্চলে যেমন মানেরই কথাসাহিত্য রচিত হোক না কেন আমি সাধ্যমতো চেষ্টা করি সংগ্রহ করে তা পাঠ করতে। যদি তা আমার আগ্রহের হয়। চেষ্টা করি নতুন নতুন গল্প-উপন্যাস পাঠ করতে। গল্প-উপন্যাসের বিভিন্ন আঙ্গিক সম্পর্কে এতে করে আমার একটি মোটামুটি ধারণা হয়েছে। কিছুদিন আগে অস্ট্রেলিয়ান লেখক পিটার জেমসের বই পড়েছি। এখন হাতে আছে লিবিয়ান এক সাংবাদিকের একটি বই, যেটি আরব বসন্তের উপর ভিত্তি করে লেখা হয়েছে।
এখন বিশ্বজুড়েই কেমন এক অস্তিত্বের সংকটে ভোগা মানুষের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। রাষ্ট্রের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই, নাগরিকের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সক্ষমতা অর্জনের লড়াই তো আছেই। এসবের পাশাপাশি মানসিক দ্বন্দ্ব ও টানাপোড়েনের গল্প-উপন্যাসও লিখিত হচ্ছে। এখনকার কথাসাহিত্যে এসব বেশি উঠে আসছে বলে আমার ধারণা। এখন কেবল নির্জলা একটি পারিবারের সহজ গল্প বা যাকে আমরা বলি নিটোল প্রেমের গল্প- এসব খুব বেশি লেখা হচ্ছে না। সময়ের ধারাবাহিকতায় এই পরিবর্তন এসেছে।
তবে যে ধরনের কথাসাহিত্যই রচিত হোক না কেন— শেষ পর্যন্ত তা সময়ের প্রতিনিধিত্ব করে কি না এটাই আসল কথা। সাহিত্য হলো গিয়ে কণ্ঠস্বর। যে লেখকের কণ্ঠ যতো মৌলিক এবং জোড়ালো তা পাঠকের কাছে ততো দ্রুত পৌঁছবে।
জাগো নিউজ : আপনার প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস ‘একাত্তরের লাল মিয়া’ সম্পর্কে বলুন—
এহসান মাহমুদ : ‘একাত্তরের লাল মিয়া’ আমার প্রথম উপন্যাস। এই উপন্যাসের প্রধান চরিত্র লাল মিয়া, একজন মুক্তিযোদ্ধা। এই উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে মাদারীপুর, বরিশাল এবং শরীয়তপুরের মুক্তিযোদ্ধাদের সাহসিকতাপূর্ণ বেশকয়েকটি সম্মুখযুদ্ধের ঘটনার উল্লেখ আছে। পাশাপাশি যুদ্ধফেরত একজন মুক্তিযোদ্ধার স্বাধীনতার প্রায় ৪০ বছর পরে জীবনযুদ্ধে পরাজিত হওয়ার এবং স্ত্রী-পুত্র হারানোর গভীর বেদনার বিবরণ রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন এবং করুণ বাস্তবতার ফলাফল মেলাতে যাওয়া একজন অসহায় মুক্তিযোদ্ধার জীবনসংগ্রামের পাশাপাশি স্বাধীনতা বিরোধীদের সম্পদশালী হওয়ার ঘটনা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
উপন্যাসটি প্রথমে দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় ধারবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছিল। বই হিসেবে প্রকাশিত হয়েছিল ২০১৫ সালে একুশে গ্রন্থমেলায় (প্ল্যাটফর্ম প্রকাশন)। উপন্যাসটি দৈনিকে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশের সুযোগে অনেকের নজরে এসেছিল। তাঁদের মধ্যে ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিক, চিত্রশিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী, কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, মঈনুল আহসান সাবের এবং জাকির তালুকদার অন্যতম। পরবর্তীতে কাইয়ুম চৌধুরী বই প্রকাশের সময়ে প্রচ্ছদ করে দিয়েছিলেন। আহমদ রফিক এবং সেলিনা হোসেন উপন্যাস পাঠ করে লিখিত প্রতিক্রিয়া দিয়েছিলেন।
জাগো নিউজ : ‘আদিবাসী প্রেমিকার মুখ’ কাব্যগ্রন্থের পরের পরিকল্পনা কী?
এহসান মাহমুদ : সত্যি বলতে কী- আমি পরিকল্পনা করে কাজ করতে পারি না। তাই এখনই ঠিক বলতে পারছি না। যেমন- ইচ্ছে ছিল ‘একাত্তরের লাল মিয়া’ প্রকাশের পরে বিভিন্ন সময়ে লেখা প্রবন্ধগুলো একত্র করে একটি বই করবো। এছাড়া একটি গল্পগ্রন্থ করার সব কাজ গুছিয়ে এনে, এমনকি প্রচ্ছদ করে ফেলার পরেও তা আর প্রকাশকের হাতে তুলে দেওয়া হয়নি। ভেবেছি, আরেকটু সময় নিয়ে দেখি!

আমি যে পরিকল্পনা করে কাজ করি না, তার বড় উদাহরণ হচ্ছে গিয়ে— ‘আদিবাসী প্রেমিকার মুখ’। কর্মস্থলের সুবাদে প্রায় বছর দুয়েকের মতো থাকতে হয়েছে চট্টগ্রামে। চট্টগ্রামে যাওয়ার পরেই একদিন এক আদিবাসী ছাত্রনেতার সাথে নানা বিষয়ে আলোচনা হলো। আলোচনায় উঠে এলো পাহাড়ের বর্তমান অবস্থা। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি, যাকে শান্তিচুক্তি হিসেবে প্রচার করা হয়েছে, পাহাড়ে আদিবাসীদের জমি দখল, আদিবাসী নারীদের নিরাপত্তাহীনতা, আদিবাসী শিশুদের শিক্ষার অন্তরায়সহ বিভিন্ন বিষয়। একটা পর্যায়ে আমাকে আগ্রহী করে তুললো সবুজ পাহাড়। এরপরে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক বই সংগ্রহ করতে শুরু করলাম। অনেকটা একাডেমিক পড়াশোনার মতো করে পাঠ করে চললাম পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক গ্রন্থসমূহ। পরামর্শ ও সহায়তা পেলাম কবি ও প্রাবন্ধিক আবুল মোমেনের, কবি ও সাংবাদিক বিশ্বজিৎ চৌধুরীর। বইয়ের খোঁজ-খবর দিয়ে সহায়তা করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক রাহমান নাসির উদ্দিন। এক্ষেত্রে অনেকটা সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে চট্টগ্রামের পুস্তক বিক্রয় প্রতিষ্ঠান বাতিঘর।
এরপরে আসা-যাওয়া শুরু হলো চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি। দুর্গম পাহাড়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে আমার কেবল অবাক হওয়ার পালা। যতো দেখি ততোই অবাক হই। মনে হলো, সবুজ পাহাড়ের অধিবাসীদের কান্না আমাদের কানে এসে পৌঁছায় না। সিদ্ধান্ত নেই একটি উপন্যাস লেখার। সে জন্য দেখা করি ও সাক্ষাৎকার গ্রহণ করি আদিবাসী নেতা সন্তু লারমার সঙ্গে। একইসঙ্গে নাম-ঠিকানা গোপন করার শর্তে সাক্ষাৎকার নিয়েছি প্রায় বিশজনের মতো শান্তিবাহিনীর সাবেক সদস্যদের। কথা বলেছি আদিবাসী তরুণ-তরুণী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের সঙ্গে। বুঝতে চেষ্টা করেছে তাদের স্বপ্নের ভাষা।
যখন পাহাড়ে আসা-যাওয়া করতাম, তখন আমার সাথে থাকতো নোটবুক। পাহাড়ে কাটানো দিনগুলোতে আমার রুটিন ছিল সারাদিন আদিবাসী পাড়াগুলোতে ঘুরে বেড়ানো আর সন্ধ্যার পরে খেয়ে নিজের কাগজ-কলম নিয়ে বসা। একটা সময়ে খেয়াল হলো, উপন্যাসের খসড়া সাজানো বা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করার পৃষ্ঠার ফাঁকে ফাঁকে আরও কিছু পংক্তি লেখা হয়ে যাচ্ছে! এভাবেই একসময় লেখা হয় ৪০টি কবিতা। যেগুলোর আলাদা কোনও নাম না দিয়ে ‘আদিবাসী প্রেমিকার মুখ’ নামেই একত্রিত করার সিদ্ধান্ত নেই। এভাবেই প্রকাশিত হয় ‘আদিবাসী প্রেমিকার মুখ’।
তাই এর পরে কী করবো- তা এখনই বলতে পারছি না। উপন্যাস লেখার কাজ এগিয়েছে কিছুটা। গল্পগুলোও নাড়াচাড়া করছি প্রতিনিয়ত। দেখি... সময়ই ভালো জানে।
জাগো নিউজ : শিল্প-সাহিত্যের এ কণ্টকাকীর্ণ পথচলায় আপনার অনুপ্রেরণা-
এহসান মাহমুদ : শুধু শিল্প-সাহিত্যের মাধ্যমই নয়। আমার ধারণা জগতটাই কণ্টকাকীর্ণ। এখানে প্রত্যেকের চলার পথটুকু নিজেরই মসৃণ করে নিতে হয়। তাই নিজের ব্যর্থতাই আমার প্রেরণা। আর একান্তই যদি বলতে হয়- আমার পূর্বসুরী সাহিত্যিকগণই আমার প্রেরণা। আগেই একবার উল্লেখ করেছি, বাংলা সাহিত্যের পথচলা মোটামুটি দীর্ঘ। এই দীর্ঘ পথে অনেকেই এসেছেন। তাঁদের স্বাক্ষর রেখে গিয়েছেন। আমি এখন সাহিত্যের যেই মাধ্যমগুলোতে কাজ করার চেষ্টা করছি সেই মাধ্যমগুলোতে আরও অনেকেই করে গিয়েছেন। এখনও অনেকে করছেন। ভবিষ্যতেও করবেন। তবুও এই যে আমি এসেছি, নিজের জন্য এক ধরনের চ্যালেঞ্জ নিয়েই কিন্তু এসেছি। আর এসবই আমার অনুপ্রেরণা।
জাগো নিউজ : প্রচারবিমুখ থেকে সাহিত্যচর্চার সার্থকতা কতটুকু?
এহসান মাহমুদ : সত্যি বলতে কী- সকলেই প্রচার চায়। প্রচারকামী বলেই কিন্তু একজন লিখতে বসে। যদি সে প্রচারবিমুখ হতো তবে সে লিখতে আসতো না। তবে হ্যাঁ, একটি বিষয় আছে, সেটি হচ্ছে— নিমগ্নতা। সাহিত্যে নিমগ্ন হওয়া জরুরি। আমি বিশ্বাস করি, একজন লেখক যখন সাহিত্য সৃষ্টি করেন, তখন তাঁর মাথায় প্রচারের বিষয়টি থাকে না। তখন সে কেবল সৃষ্টির আনন্দে থাকেন। যখন সৃষ্টি হয়ে যায়, তখন প্রচারমাধ্যমে তুলে ধরেন।
জাগো নিউজ : আপনার লেখালেখির সাফল্যে অন্যের ঈর্ষা আপনাকে বিব্রত করে কি?
এহসান মাহমুদ : আমার প্রতি যেকোন ঈর্ষাকেই আমি উপভোগ করি। তাই লেখালেখির ঈর্ষাকেও আমি উপভোগ করি। আমার বিষয়টি এমন যে, আমার সুন্দর প্রেমিকা বা স্ত্রী কিংবা সাজানো সংসার দেখে অন্যের ঈর্ষায় আমি বিব্রত হই না। তেমনি লেখালেখির ক্ষেত্রেও।
এসইউ/পিআর