ডিএসসিসি

৮ বছর বন্ধ থাকা চাঁনখারপুল মার্কেটের কাজ ১ বছরে শেষের আশা

মুসা আহমেদ
মুসা আহমেদ মুসা আহমেদ
প্রকাশিত: ০৩:০৮ পিএম, ১১ মে ২০২৫
লাখ লাখ টাকা লগ্নি করে বিপাকে আছেন ব্যবসায়ীরা/জাগো নিউজ

দীর্ঘ আট বছর বন্ধ থাকার পর পুরান ঢাকার চাঁনখারপুল মার্কেটের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের কাজ চলছে পুরোদমে। সব টাকা পরিশোধ করেও মার্কেটটিতে দোকান বুঝে পাননি বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তিরা। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর শুরু হওয়া নির্মাণকাজ যেন দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করা হয়, সে দাবি জানিয়েছেন তারা।

নির্মাণাধীন এ বহুতল মার্কেটের মালিক ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। সংস্থাটি বলছে, মার্কেটের বাকি কাজ আগামী এক বছরের মধ্যে শেষ হবে। মার্কেটটির নিচ থেকে ছয় তলা পর্যন্ত ৩২১টি দোকান বরাদ্দ দিয়েছে ডিএসসিসি। প্রতিটি দোকান বরাদ্দের বিপরীতে গ্রাহকদের কাছ থেকে মার্কেট সালামিসহ পুরো টাকা বুঝে নিয়েছে করপোরেশন। কিন্তু দীর্ঘ আট বছর মার্কেটের নির্মাণকাজ বন্ধ থাকায় হতাশ ছিলেন দোকানিরা।

চাঁনখারপুল মার্কেটে দোকান বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তিদের অভিযোগ, দোকান বরাদ্দ দিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রায় ৩০ কোটি টাকা নিয়েছে ডিএসসিসি। কিন্তু দীর্ঘ আট বছরেও নির্মাণকাজ শেষ করতে পারেনি সংস্থাটি। তাদের গাফিলতির কারণেই বছরের পর বছর মার্কেটটির নির্মাণকাজ বন্ধ ছিল।

শত শত গ্রাহক দুশ্চিন্তায় ছিলেন। এখন নতুন ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। দ্রুত গতিতে মার্কেটের নির্মাণকাজ চলছে। আশাকরি বছরখানেকের মধ্যে মার্কেটের অবকাঠামো নির্মাণ শেষ হবে।- ডিএসসিসির প্রকৌশল বিভাগের মার্কেট নির্মাণ সেলের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া

জানতে চাইলে ডিএসসিসির প্রকৌশল বিভাগের মার্কেট নির্মাণ সেলের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘ঠিকাদার নিয়োগ জটিলতার কারণে দীর্ঘদিন মার্কেটটির ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ বন্ধ ছিল। এ কারণে শত শত গ্রাহক দুশ্চিন্তায় ছিলেন। এখন নতুন ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। দ্রুত গতিতে মার্কেটের নির্মাণকাজ চলছে। আশাকরি বছরখানেকের মধ্যে মার্কেটের অবকাঠামো নির্মাণ শেষ হবে।’

৮ বছর বন্ধ থাকা চাঁনখারপুল মার্কেটের কাজ ১ বছরে শেষের আশা

তিনি বলেন, ‘ওই মার্কেটে আধুনিক সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা রাখা হয়েছে। এটি পুরান ঢাকার মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর মার্কেট হবে। ব্যবসা-বাণিজ্য জমে উঠবে।’

যে কারণে চাঁনখারপুল মার্কেট নির্মাণকাজ বন্ধ ছিল

ডিএসসিসির প্রকৌশল বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে চাঁনখারপুল মার্কেট নির্মাণের উদ্যোগ নেয় ডিএসসিসি। নকশা অনুযায়ী ১২ তলা ভিত্তির ওপর ছয় তলা ভবন হবে। এখানে ৩২১টি দোকান থাকবে। প্রতিটি দোকানের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে আয়তনভেদে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা। তখন মার্কেটটির নির্মাণব্যয় ধরা হয়েছিল ২৯ কোটি ৯৪ লাখ টাকা (৬ তলা পর্যন্ত)। দোকান সালামিসহ এ টাকা কয়েক কিস্তিতে গ্রহীতাদের কাছ থেকে নেয় ডিএসসিসি।

২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ওই মার্কেট ভবন নির্মাণের কার্যাদেশ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘দ্য বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েট লিমিটেড’। কার্যাদেশ অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ২ অক্টোবর এ মার্কেটের কাজ শুরু হয়। ২০১৯ সালের ১ অক্টোবরের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু বেজমেন্টের কাজ করেই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ১৩ কোটি টাকা বিল তুলে নেয়। এরপর হঠাৎ বাকি কাজ শেষ না করে চলে যায়। এতে টাকা বিনিয়োগ করে বিপাকে পড়েন দোকান বরাদ্দ পাওয়া ব্যবসায়ীরা।

৮ বছর বন্ধ থাকা চাঁনখারপুল মার্কেটের কাজ ১ বছরে শেষের আশা

মার্কেট নির্মাণ সেল সূত্র জানায়, ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চলে যাওয়ার পর মার্কেটের নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে যায়। তাদের বারবার চিঠি দিলেও অজ্ঞাত কারণে তারা কাজটি করেনি। পরে সিটি করপোরেশন তাদের সম্পূর্ণ কাজের মূল্যায়ন করে দেনা-পাওনার হিসাব মেটায়। এই হিসাব মেটাতেই প্রায় পাঁচ বছর লাগে। পরে ২০২৪ সালের জুনে চাঁনখারপুল মার্কেটের অবশিষ্ট নির্মাণকাজ শেষ করতে নতুন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেয় ডিএসসিসি। এখন তারা বেজমেন্টের ওপর থেকে নির্মাণকাজ শুরু করেছে।

প্রায় ১২ হাজার টাকা বর্গফুট হিসেবে দোকানের দাম নেওয়া হয়েছে। এতে ১০০ বর্গফুট দোকানের জন্য দিতে হয়েছে প্রায় ১২ লাখ টাকা। এই টাকা ব্যাংকে রাখলে বা অন্য কোনো খাতে কাজে লাগালে আজ প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যেত।–ব্যবসায়ী মকবুল হোসাইন

১৬ হাজার ১৮০ বর্গফুট জায়গার ওপর গড়ে উঠছে চাঁনখারপুল মার্কেট। সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, মার্কেটির চারপাশে টিন দিয়ে ঘেরা। ভেতরে মার্কেটটির ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণে কাজ করছেন শ্রমিকরা। আর বেজমেন্টের ওপর ইতোমধ্যে দুটি ফ্লোর নির্মাণ শেষ হয়েছে। এখন দ্বিতীয় তলার ছাদ ঢালাইয়ের কাজ চলছে। তবে মার্কেটের আয়তন বা ধরন অনুযায়ী নির্মাণকাজে ধীরগতি দেখা গেছে।

তৃতীয় তলায় লটারিতে দোকান বরাদ্দ পান যাত্রাবাড়ীর শহীদ ফারুক রোডের বাসিন্দা মকবুল হোসাইন। তিনি বলেন, ‘দোকান বরাদ্দ পেতে ডিএসসিসিতে যথাযথভাবে আবেদন করি। লটারিতে বরাদ্দ পেয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত মার্কেটটির নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। অথচ প্রায় ১২ হাজার টাকা বর্গফুট হিসেবে দোকানের দাম নেওয়া হয়েছে। এতে ১০০ বর্গফুট দোকানের জন্য দিতে হয়েছে প্রায় ১২ লাখ টাকা। এই টাকা ব্যাংকে রাখলে বা অন্য কোনো খাতে কাজে লাগালে আজ প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যেত।’

৮ বছর বন্ধ থাকা চাঁনখারপুল মার্কেটের কাজ ১ বছরে শেষের আশা

তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি মার্কেটটির নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে বলে শুনেছি। পরে নিজের চোখেও দেখে আসলাম। এখন অনেকটা ভালো লাগছে, যে অবশেষে নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে।’

বঙ্গবাজারে গার্মেন্টসের ব্যবসা করতেন বংশালের আবু সাঈদ। ২০২৩ সালে বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের সময় তার দোকানটি পুড়ে যায়। চাঁনখারপুল মার্কেটে তারও একটি দোকান রয়েছে। আলাপকালে আবু সাঈদ জানান, বঙ্গবাজারে ব্যবসার আয় দিয়েই চাঁনখারপুল মার্কেটে দোকান কিনেছিলেন। পরে বঙ্গবাজারের দোকান আগুনে পুড়লো। আবার চাঁনখারপুল মার্কেটের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণও হচ্ছিল না। এটা নিয়ে খুবই হতাশ ছিলাম। এখন নতুন ঠিকাদারের মাধ্যমে মার্কেটের কাজ শুরু হয়েছে দেখে শান্তি লাগছে। তবে নির্মাণকাজ ধীরগতিতে চলছে। আরও দ্রুত কাজটা শেষ করলে দোকানিরা উপকৃত হবেন।

৮ বছর বন্ধ থাকা চাঁনখারপুল মার্কেটের কাজ ১ বছরে শেষের আশা

এই মার্কেটের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের নাম কবির সিন্ডিকেট, সামস ইঞ্জিনিয়ারিং, মোস্তফা এন্টারপ্রাইজ (জেবি)। মোস্তফা এন্টারপ্রাইজের প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার জহিরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘গত নভেম্বর থেকে আমরা মার্কেটটির কাজ শুরু করি। এখন প্রতিদিন মার্কেটে ৪০ থেকে ৫০ জন শ্রমিক কাজ করছেন। কিছুদিনের মধ্যেই দ্বিতীয় তলার ছাদের ঢালাই দেওয়া হবে। এখন পর্যন্ত ছয় তলা মার্কেটের মোট কাজের ৩৫ শতাংশ (বেজমেন্টের কাজ আগেই হয়েছে) শেষ হয়েছে। আশাকরি সিটি করপোরেশন নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করতে পারবো।’

চাঁনখারপুল মার্কেটের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সৃজনী উপদেষ্টা লিমিটেড ও রিফ্লেকশন ডিজাইন স্টিডিউ। এর মধ্যে রিফ্লেকশন ডিজাইন স্টিডিউর ব্যবস্থাপনা পরিচালক পারভেজ আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘মার্কেটটি ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণে কাজের গতি ভালো। আশাকরি বছরখানের মধ্যে পুরো কাজ শেষ করা যাবে। তারপর দাপ্তরিক কাজ শেষ করে গ্রাহকদের দোকান বুঝিয়ে দেবে সিটি করপোরেশন।’

এমএমএ/এএসএ/এমএফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।