ইউরোপীয় ইউনিয়নে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ১৭.৬১ শতাংশ

ইব্রাহীম হুসাইন অভি
ইব্রাহীম হুসাইন অভি ইব্রাহীম হুসাইন অভি
প্রকাশিত: ০৮:২১ এএম, ২৫ জুলাই ২০২৫
জাগো নিউজ গ্রাফিক্স

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে নতুন শুল্কহার আরোপের ফলে চাপের মুখে পড়েছে পোশাক রপ্তানি। তবে ২৭টি দেশের সমন্বয়ে গঠিত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি দেখাচ্ছে।

২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে মে—এই পাঁচ মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি ১৭ দশমিক ৬১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। আগের বছরের একই সময়ে এ রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৮ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলার।

তবে মে মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে পোশাক রপ্তানি কমেছে। ৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৬১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১ দশমিক ৭২ বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ তুরস্কও একই মাসে ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ রপ্তানি হ্রাসের মুখে পড়েছে, যেখানে তাদের রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৭০ মিলিয়ন ডলারে।

আরও পড়ুন

অন্যদিকে, ভিয়েতনাম ইউরোপের বাজারে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। দেশটি মে মাসে ১৫ দশমিক ৬৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে ৩৫০ মিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে।

পোশাক রপ্তানিকারকরা বলছেন, মে মাসের রপ্তানিতে পতন কিছুটা অস্থায়ী হতে পারে, তবে প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর পারফরম্যান্স পর্যবেক্ষণ করে দ্রুত কার্যকর কৌশল গ্রহণ করা এখন অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে, মূল্য সংযোজিত পণ্য, শ্রম অধিকার, টেকসই উৎপাদন এবং বাজার বৈচিত্র্যকরণের দিকে মনোযোগ দিলে আবারও প্রবৃদ্ধির গতি ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

ইউরোস্ট্যাটের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিশ্বব্যাপী পোশাক আমদানির পরিমাণ ১১ দশমিক ৯০ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৯ দশমিক ৭১ বিলিয়ন ডলারে। এই বিবেচনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। তবে দামে ১ দশমিক ৩৩ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ১৭.৬১ শতাংশ

বাংলাদেশের রপ্তানি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ১৫ দশমিক ০৮ শতাংশ পরিমাণে বৃদ্ধি এবং ২ দশমিক ২০ শতাংশ দামে বৃদ্ধি পরিলক্ষিত হয়েছে। এতে বোঝা যায়, ইউরোপীয় বাজারে বাংলাদেশের পোশাক খাত মূল্য, পরিমাণ এবং মোট আয়ে একত্রে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।

বাংলাদেশের পাশাপাশি অন্যান্য প্রধান পোশাক রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যেও উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। চীন ২০ দশমিক ৮৬ শতাংশ রপ্তানি বৃদ্ধির মাধ্যমে ১০ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পোশাক ইউরোপে রপ্তানি করেছে, যেখানে ইউনিট দাম ৬ দশমিক ৬৯ শতাংশ বেড়েছে।

আরও পড়ুন

ভারত, পাকিস্তান ও কম্বোডিয়ার রপ্তানিও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ভারত ১৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ বৃদ্ধি করে ২ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলার, পাকিস্তান ১৯ দশমিক ০৯ শতাংশ বৃদ্ধি করে ১ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার এবং কম্বোডিয়া ২৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ বৃদ্ধি করে ১ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলারের পোশাক ইউরোপে রপ্তানি করেছে।

অন্যদিকে, জানুয়ারি থেকে মে মাসে তুরস্কের রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রবণতা দেখা গেছে। দেশটির রপ্তানি ৬ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে এবং ৩ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করতে পেরেছে। বিপরীতে ভিয়েতনাম ১৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে এবং ১ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যেখানে ইউনিট দাম বেড়েছে ৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ।

বিশ্লেষকদের মতে, এ প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে স্পষ্ট হচ্ছে যে ইউরোপীয় বাজারে বাংলাদেশের পোশাক পণ্যের চাহিদা এখনো শক্ত অবস্থানে রয়েছে এবং মূল্য ও পরিমাণে ভারসাম্যপূর্ণ অগ্রগতি দেশের বৈদেশিক আয় বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল জাগো নিউজকে বলেন, বাংলাদেশ ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি প্রদর্শন করছে, যেখানে চীন এখনো শীর্ষ অবস্থানে আছে এবং ভিয়েতনামও ভালো করছে। তবে শুধু ইইউ বা যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে নতুন বাজার অনুসন্ধানের প্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়া অত্যন্ত জরুরি।

আরও পড়ুন

মহিউদ্দিন রুবেল আরও বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশের মোট রপ্তানির প্রায় অর্ধেকই ইউরোপের বাজারে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে শুল্ক সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ অব্যাহত থাকায় ইইউ বাজারের গুরুত্ব আরও বেড়েছে। এই বাজারে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান ধরে রাখতে হলে আমাদের এ বাজারকে অগ্রাধিকার দিয়ে ধারাবাহিকভাবে কাজ চালিয়ে যেতে হবে।’

ইউরোপীয় ইউনিয়নে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ১৭.৬১ শতাংশ

 

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে নতুন শুল্কহার এবং ট্রাম্প প্রশাসনের উত্থাপিত বিভিন্ন ইস্যুর কারণে আমরা এখন কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। এই প্রেক্ষাপটে ইউরোপীয় ইউনিয়নে রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি নিঃসন্দেহে উৎসাহজনক। তবে এটিই শেষ নয়—আমাদের আরও গুরুত্ব দিতে হবে শ্রমিক অধিকার, পরিবেশগত দায়বদ্ধতা এবং টেকসই উৎপাদনসহ বিভিন্ন বিষয়ে। কারণ এসব ইস্যুকেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখন রপ্তানির জন্য গুরুত্বপূর্ণ পূর্বশর্ত হিসেবে বিবেচনা করছে।’

আরও পড়ুন

ড. জাহিদ হোসেন আরও বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের রপ্তানি প্রবলভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল, যা দীর্ঘমেয়াদে ঝুঁকিপূর্ণ। তাই এই দুই অঞ্চলের বাইরে নতুন বাজার অনুসন্ধান ও বাজার বৈচিত্র্যকরণ এখন সময়ের দাবি। একইসঙ্গে আমাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে মূল্য সংযোজিত (ভ্যালু অ্যাডেড) এবং নন-কটন পণ্যের উৎপাদন ও রপ্তানিকে। কারণ ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হলে শুধু প্রচলিত পণ্যে নয়, উদ্ভাবন ও বৈচিত্র্যের দিকেও মনোযোগ দিতে হবে।’

যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন আগামী ১ আগস্ট থেকে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ ‘রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ’ বা পাল্টা শুল্ক কার্যকর করতে যাচ্ছে।

প্রথমে এই শুল্কহার ৩৭ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছিল, যা ঘোষণার পর ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রাখা হয়। এ সময়ে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা ও কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে শুল্কহার কিছুটা কমিয়ে ৩৫ শতাংশে নামানো হয়।

আইএইচও/এমএমএআর/এমএফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।