‘দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশিদের নিরাপত্তা সংকট রয়েছে’
দক্ষিণ আফ্রিকায় নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ থাকলেও সরকার তা দক্ষভাবে মোকাবিলা করছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত (অনাবাসিক) দক্ষিণ আফ্রিকার হাইকমিশনার প্রফেসর অনিল সুকলাল।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিক্যাব)-এর সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশিরা নিয়মিত সেখানে হামলার শিকার হন- এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি স্বীকার করে বলেন, ‘আমরা স্বীকার করি, আমাদের দেশে (দক্ষিণ আফ্রিকা) নিরাপত্তা সম্পর্কিত কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে; হোক তা ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কিংবা সামষ্টিক নিরাপত্তা। তবে সরকার এসব বিষয় পদ্ধতিগতভাবে মোকাবিলা করছে।’
প্রফেসর সুকলাল বলেন, ‘হ্যাঁ, সময় সময় নির্দিষ্ট কিছু সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে সহিংসতা চালানো হয়। বাংলাদেশি, পাকিস্তানি, ইথিওপীয়, সোমালি, জিম্বাবুয়ের নাগরিকদের ওপর এমন ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব ঘটনা সাধারণত একটি ক্ষুদ্রগোষ্ঠীর উসকানিতে ঘটে এবং সরকার অত্যন্ত কার্যকরভাবে এসব মোকাবিলা করে থাকে। বিষয়গুলো কখনোই নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়নি।’
দক্ষিণ আফ্রিকার হাইকমিশনার বলেন, এ ধরনের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে আমরা অত্যন্ত সচেতন। যখন একটি দেশে বিপুল সংখ্যক অভিবাসী আসে, তখন তা কিছু জটিলতা তৈরি করেই। তবে পরিস্থিতি কখনোই এমন হয়নি যে, সরকার তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি।’
হাইকমিশনার আরও বলেন, তাদের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো এসব বিষয়ে ভালোভাবেই অবগত। দক্ষিণ আফ্রিকার নিরাপত্তা বাহিনী এ বিষয়ে সচেতন এবং সক্রিয়।
উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘চীনা দূতাবাস আমাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও নিরাপত্তা সংস্থার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে। আমি মনে করি, বাংলাদেশি দূতাবাসেরও উচিত একইভাবে আরও সক্রিয় হওয়া। এতে করে বাংলাদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সহজ হবে।’
হাইকমিশনার জানান, বর্তমানে দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রায় চার লাখ বাংলাদেশি বসবাস করছেন। এ জনগোষ্ঠী শুধু সংখ্যা নয়, বরং দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘যখন একটি দেশে বিপুল সংখ্যক অভিবাসী আসে, তখন কিছু চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়। কিন্তু পরিস্থিতি কখনোই এমন হয়নি যে সরকার তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। আমরা সচেতন এবং প্রস্তুত।’
প্রফেসর সুকলালের মতে, এ ধরনের বড় অভিবাসী জনগোষ্ঠী সঠিকভাবে যুক্ত হলে তা দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও গভীর করতে পারে।
হাইকমিশনার বলেন, ‘আমার মনে হয়, দুই দেশের সম্পর্ক দৃশ্যমানতার অভাবে ভুগছে। আমরা একে অপরের বাজার সম্পর্কে জানি না বলেই ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই আমাদের সম্পর্কের দৃশ্যমানতা বাড়ানো জরুরি।’
তিনি মনে করেন, বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যকার সম্পর্ক এখনো সম্ভাব্য পর্যায়ে পৌঁছায়নি, বিশেষ করে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে।
তিনি জানান, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ ছাড়াও শিক্ষা, সংস্কৃতি, খেলাধুলা এবং ওষুধশিল্পে যৌথভাবে কাজ করতে আগ্রহী দক্ষিণ আফ্রিকা। এ ক্ষেত্রে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতাগুলো যৌথভাবে দূর করার ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।
ভিসা ও দূতাবাস প্রসঙ্গে কথা বলেন তিনি। বর্তমানে বাংলাদেশে দক্ষিণ আফ্রিকার কোনো দূতাবাস নেই। তবে হাইকমিশনার বলেন, ‘ঢাকায় আবেদন সংগ্রহ করে দিল্লির ভিএফএসের মাধ্যমে তা প্রক্রিয়ার জন্য একটি সমঝোতা হচ্ছে। এটি হলে অনেকটাই সহজ হবে।’
তিনি আরও জানান, দক্ষিণ আফ্রিকা ও বাংলাদেশের মধ্যে পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত আলোচনা (এফওসি) পুনরায় চালু করা জরুরি। আশা করা হচ্ছে, এ বছরের অক্টোবর বা নভেম্বরের মধ্যে এটি অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের জন্য পরামর্শ দিয়ে হাইকমিশনার বলেন, এফওসিতে অংশ নিতে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের সময় বাংলাদেশি প্রতিনিধিদলকে সঙ্গে করে একটি ছোট ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল নেওয়ার পরামর্শ দেন, যাতে উভয় দেশের ব্যবসায়িক চেম্বারের মধ্যে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর সম্ভব হয়।
যৌথ উদ্যোগ ও খাতভিত্তিক সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশের কৃষিখাতে দক্ষতা রয়েছে, আর দক্ষিণ আফ্রিকার আছে বিপুল পরিমাণ জমি। কৃষিখাতে যৌথ উদ্যোগে কাজ করা যেতে পারে। একই সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকার খনিজ ও খনিশিল্পেও বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতার সুযোগ রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আপনারা এই অঞ্চলে একটি বড় বাজার। দক্ষিণ আফ্রিকাকে সাব-সাহারান আফ্রিকার কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। আমাদের অবকাঠামো রয়েছে।’
মানবসম্পদ, শিক্ষার্থী, গবেষক, সাংবাদিক ও থিঙ্কট্যাংকদের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ বাড়ানোর ওপর জোর দেন হাইকমিশনার।
তিনি জানান, ১৯৯৫ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রিটোরিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশন চালু হয়। উভয় দেশই কমনওয়েলথ অব নেশনসের সদস্য হওয়ায় কূটনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হয়েছে।
নেলসন ম্যান্ডেলার নেতৃত্বে গঠিত গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও উন্নয়নমুখী দৃষ্টিভঙ্গি এই সম্পর্কের ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
ডিক্যাবের সাধারণ সম্পাদক আরিফুজ্জামান মামুনের সঞ্চালনায় মতবিনিময় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের সভাপতি এ কে এম মঈনুদ্দিন।
জেপিআই/বিএ/এমএস