ফোনে স্বামীর আর্তনাদ

আগুন আগুন বলার পর থেকে খুঁজে পাচ্ছি না

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:৩৭ পিএম, ১৪ অক্টোবর ২০২৫
মেশিন অপারেটর নাজমুল ইসলামের ছবি হাতে তার স্ত্রী। ছবি: জাগো নিউজ

রাজধানীর মিরপুরের শিয়ালবাড়িতে পোশাক কারখানা ও কসমিক ফার্মা নামের একটি কেমিক্যাল গোডাউনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহত বেড়ে ১৬ জনে দাঁড়িয়েছে। এ ঘটনায় দগ্ধ আরও বেশ কয়েকজন বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আগুনের ঘটনায় অনেকেই এখনো নিখোঁজ বলে দাবি করেন তাদের স্বজনরা।

নিখোঁজদের খোঁজে ঘটনাস্থল ও বিভিন্ন হাসপাতালে ছোটাছুটি করছেন স্বজনরা। অনেকেই আবার নিখোঁজ স্বজনের ছবি হাতে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। অনেকের মধ্যে ছবি হাতে স্বামী মেশিন অপারেটর নাজমুল ইসলামকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন তার স্ত্রী।

ঘটনাস্থলে কথা হলে নিখোঁজ নাজমুলের স্ত্রী জাগো নিউজকে বলেন, আগুন লাগার পরপরই তিনি (নাজমুল) আমাকে ফোন দেন। আগুন আগুন বলে আর্তনাদ করেন। এরপর ফোন কেটে গেলে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তাকে এখনো খুঁজে পাইনি।

তিনি বলেন, ‌‘ঢাকা মেডিকেল, ইবনে সিনা, ইসলামি মেডিকেলসহ আশপাশের সব হাসপাতাল খুঁজছি, কোথাও তাকে পাইনি। কারখানার মালিকের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছি, তিনি বলেছেন কেউ মারা যায়নি, সবাই আছেন। তবু আমি সব জায়গা খুঁজে খুঁজে এখানে এসেছি, কিন্তু এখনো নিখোঁজ।’

মেশিন অপারেটর নাজমুল ইসলামের স্ত্রীর মতোই ভাগনি মাহিরাকে (১৪) খুঁজতে দিগ্বিদিক

ছুটছেন মো. শফিকুল ইসলাম। মাঝে মাঝে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন তিনি।

আরও পড়ুন
মিরপুরে কেমিক্যাল গোডাউনে অগ্নিকাণ্ডে নিহত বেড়ে ১৬
এখনো নিখোঁজ অনেকে, স্বজনদের আহাজারি
মিরপুরে অগ্নিকাণ্ডে নিহতের ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টার শোক

কথা হলে শফিকুল ইসলাম বলেন, আমার ভাগনি মাহিরা। গার্মেন্টসের তিন তলায় কাজ করতো। তাকে খুঁজে পাচ্ছি না। আগুন লাগার পর থেকে আমরা তাকে খুঁজছি। আশপাশের হাসপাতালেও খোঁজ নিয়েছি। কোথাও খুঁজে পাইনি। ফায়ার সার্ভিসের সাথে কথা বলেছি তারা বলেছে ধৈর্য ধরতে।

শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ভাগনি মাহিরা গার্মেন্টসের তিন তলায় কাজ করতো। আগুন লাগার পর থেকে তাকে খুঁজছি। আশপাশের হাসপাতালেও খোঁজ নিয়েছি, কিন্তু কোথাও পাইনি। ফায়ার সার্ভিস থেকে বলেছে ধৈর্য ধরতে।’

একইভাবে নিখোঁজ নারগিস আক্তারকে খুঁজে ফিরছেন তার বড় বোন লাইজু বেগম। তিনি বলেন, ‘আমার বোন সকাল পৌনে ৮টার দিকে কাজে যায়। সকাল ১১টার দিকে খবর পাই আগুন লেগেছে। সেখানকার একজনের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি, কেউ ভেতর থেকে বের হতে পারেনি। এরপর থেকে আর কোনো খোঁজ পাইনি— এখনো জানি না আমার বোন কোথায়।’

সরেজমিনে দেখা যায়, শিয়ালবাড়ির ৩ নম্বর সড়কে অবস্থিত শাহ আলম কেমিক্যালের দোতলা গুদাম থেকেই আগুনের সূত্রপাত। টিনের ছাউনিযুক্ত গুদামটি রাস্তার দক্ষিণ পাশে, আর উত্তর পাশে একটি চারতলা তৈরি পোশাক কারখানা। গুদামে আগুন লাগার পর রাসায়নিক বিস্ফোরণে আগুন ছড়িয়ে পড়ে ওই পোশাক কারখানায়। দুই ভবনের মাঝখান দিয়ে গেছে ৩ নম্বর সড়ক।

এর আগে মঙ্গলবার বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের কাছে আগুন লাগার খবর পৌঁছায়। খবর পেয়ে প্রথম ইউনিট ১১টা ৫৬ মিনিটে ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। শুরুতে পাঁচটি ইউনিট কাজ শুরু করে, পরে আরও সাতটি ইউনিট যোগ দেয় আগুন নেভানোর কাজে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পোশাক কারখানায় বিস্ফোরণের পর মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাশের রাসায়নিক গুদামেও। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। উৎসুক জনতার ভিড় সামলাতে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। পরে তাদের সহায়তায় যোগ দেন পাশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, স্বেচ্ছাসেবক, পুলিশ, র‍্যাব ও বিজিবি সদস্যরা।

ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন) লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজুল ইসলাম বলেন, ‘গুদামে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হয়েছে।’

কেআর/এমএএইচ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।