কেমিক্যাল গোডাউনে অগ্নিকাণ্ড

জামাতার মরদেহ শনাক্ত করলেও পাচ্ছেন না মেয়ের সন্ধান

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:০১ পিএম, ১৫ অক্টোবর ২০২৫
মিরপুরে পোশাক কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিখোঁজ মারজিয়া সুলতানার বাবা মো. সুলতান/ছবি: জাগোনিউজ

মাত্র তিন মাস আগে পারিবারিকভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন ময়মনসিংহের মারজিয়া সুলতানা (১৯) ও জয় মিয়া (২০)। এরপর জীবিকার সন্ধানে এই নবদম্পতি পাড়ি জমান রাজধানীতে। সপ্তাহখানেক আগে মিরপুরের একটি পোশাক কারখানায় কাজে যোগ দেন তারা। গতকাল মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) সেই কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর থেকেই তাদের সন্ধান পাচ্ছিলেন না স্বজনরা। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে গিয়ে জয় মিয়ার মরদেহ শনাক্ত করেন তার শ্বশুর মো. সুলতান। কিন্তু জামাতার মরদেহ পেলেও মেয়ে মারজিয়ার সন্ধান মেলেনি বলে জানান তিনি।

বুধবার (১৫ অক্টোবর) এসব কথা জানান মারজিয়া সুলতানার বাবা মো. সুলতান। তিনি জানান, মিরপুরের রূপনগরে অগ্নিকবলিত গার্মেন্টসে হেলপার হিসেবে চাকরি করতেন মেয়ে মারজিয়া সুলতানা। একই প্রতিষ্ঠানে অপারেটর হিসেবে চাকরি করতেন জামাতা জয় মিয়া।

মো. সুলতানা বলেন, ‘মঙ্গলবার বেলা ১১টা ২ মিনিটে আমার জামাতা ফোন দিয়ে জানায় গার্মেন্টসে আগুন লেগেছে। এরপর ফোনের সংযোগ কেটে যায়। আর যোগাযোগ করতে পারি না। পরে ঢাকা মেডিকেলের মর্গে জয়ের লাশ শনাক্ত করতে পারি। কিন্তু এখনো আমার মেয়ের খোঁজ পাইনি।’

কান্নাবিজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘মাত্র তিন মাস আগে তাদের বিয়ে হয়েছে। কাজের জন্য ঢাকা এসেছিল। মাত্র সাতদিন আগে তারা একই গার্মেন্টসে চাকরিতে ঢুকেছিল। কিন্তু এভাবে তাদের জীবন দিতে হবে কে জানতো। আমার মেয়ে কি বেঁচে আছে নাকি মারা গেছে কীভাবে জানবো? কীভাবে খোঁজ পাবো আমার মেয়ের।’

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) বেলা ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে রাজধানীর মিরপুরের শিয়ালবাড়িতে পোশাককারখানা ও কসমিক ফার্মা নামের একটি কেমিক্যাল গোডাউনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ জনে। সবার মরদেহ পোশাককারখানার ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। ওই ভবনের নিচতলায় আগুনের তীব্রতা থাকায় এবং ছাদে ওঠার দরজা দুটি তালা দিয়ে বন্ধ থাকায় অনেকেই ভবন থেকে বের হতে পারেননি। ফলে ওই ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় আটকে আগুনে পুড়ে নিহত হয়েছেন তারা।

মঙ্গলবার রাতে অগ্নিনিয়ন্ত্রণ ও উদ্ধার বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী এসব তথ্য জানান।

ফায়ার সার্ভিসের এ কর্মকর্তা আরও জানান, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে এই অগ্নিকাণ্ডের ফলে যে বিস্ফোরণ হয়েছে, তাতে যে সাদা ধোঁয়া বা টক্সিক গ্যাস উৎপন্ন হয়েছিল তা অত্যন্ত বিষাক্ত। আগুন লাগার প্রথম দিকেই ফ্লাশওভার হয়েছিল এবং আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এই বিষাক্ত গ্যাসের কারণে আকস্মিকভাবেই হয়তো অনেকে সেন্সলেস হয়ে পড়েন, পরে তারা মারা যান।

কেআর/এমএমকে/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।