সাভারের চামড়া শিল্পনগরী বেপজার কাছে হস্তান্তরের পরিকল্পনা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:৩৪ পিএম, ০৯ নভেম্বর ২০২৫
সাভারের চামড়া শিল্পনগরীকে বেপজার কাছে হস্তান্তরের পরিকল্পনা করেছে সরকার

প্রকল্প শেষ হলেও এখনো সাভার চামড়া শিল্পনগরীর সমস্যা শেষ হয়নি। নানান প্রতিবন্ধকতার জন্য বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) গড়িমসি ও দীর্ঘসূত্রতার অভিযোগ করে আসছিলেন উদ্যোক্তারা। এ অবস্থায় বিসিকের নিয়ন্ত্রণে থাকা সাভারের চামড়া শিল্পনগরীকে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষের (বেপজা) কাছে হস্তান্তরের পরিকল্পনা করেছে সরকার।

শিল্প মন্ত্রণালয় ও বেপজা সূত্রে জানা গেছে, শিল্প মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি শিল্পনগরী হস্তান্তরে রোডম্যাপ তৈরির কাজ করছে। কমিটিকে এক মাসের মধ্যে বিস্তারিত সুপারিশ জমা দিতে বলা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হস্তান্তরের লক্ষ্য হলো সমন্বয়হীনতা দূর করা, পরিবেশগত ব্যবস্থাপনার উন্নতি ঘটানো এবং রপ্তানিতে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়ানো। এ বিষয়ে বেপজার অভিজ্ঞতা রয়েছে।

গত সপ্তাহে ঢাকার আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) প্রধান কার্যালয়ে এ বিষয়ে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় চামড়া শিল্পনগরী কীভাবে বেপজার কাছে হস্তান্তর করা যেতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিনিয়োগ কাঠামো একীভূত করা, পরিবেশগত মাননিয়ন্ত্রণ জোরদার এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির বৃহত্তর লক্ষ্যের অংশ হিসেবে এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। ঢাকা, কুমিল্লা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন জোনে সেন্ট্রাল এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট (সিইটিপি) ব্যবস্থাপনায় বেপজার সাফল্য রয়েছে।

কমিটির এক সদস্য গণমাধ্যমকে জানান, একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা কমিটি করা হচ্ছে। এই কমিটি বিস্তৃতভাবে সাভারের ট্যানারি শিল্পনগরীকে বেপজার অধীনে নেওয়ার ভালো-মন্দ দিকগুলো তুলে ধরবে। নিয়মকানুন, পরিচালনা, প্রশাসনিক, অপারেশনাল, লিগ্যাল ও ফিন্যান্সিয়াল- এসব নিয়ে আমরা কাজ করবো।

আরও পড়ুন
মিরসরাইয়ে ১১ কোটি ডলারের বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান হবে ৭৬০০ জনের 
কারখানাগুলোকে আরএসসির চিঠি বিষয়ে সাড়া না দেওয়ার নির্দেশ বিজিএমইএর 

তিনি জানান, কমিটির প্রতিবেদন শিল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। এরপর কোন মন্ত্রণালয়ের অধীনে যাবে, সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সরকার বেপজাকে এই দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক। এটিকে কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে চামড়া খাতের পুনরুজ্জীবন সম্ভব। আমরা কাজ অনেক এগিয়ে নিয়ে এসেছি। চলতি মাসেই আমাদের সুপারিশ তুলে ধরবো শিল্প মন্ত্রণালয়ের কাছে। কমিটিতে বিসিক, বেপজা, ব্যবসায়ী প্রতিনিধিসহ সব অংশীজন আছেন।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) এক গবেষণায় দেখা গেছে, সাভার শিল্পনগরীতে একটি কার্যকর কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার (সিইটিপি) না থাকায় চামড়া ও পাদুকা প্রস্তুতকারকরা প্রায়ই স্থানীয় কোম্পানিগুলো থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করে না। ফলে বাংলাদেশ তার রপ্তানি সম্ভাবনা পুরোটা কাজে লাগাতে পারছে না, উল্টো কাঁচামাল আমদানিতে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হচ্ছে।

জানা গেছে, প্রায় দুই মাস আগে এই শিল্পনগরীকে বিসিক থেকে বেপজায় হস্তান্তরের রোডম্যাপ চূড়ান্ত করতে শিল্প মন্ত্রণালয়ে একটি ফলোআপ বৈঠক হয়েছিল। শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভায় বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরীও উপস্থিত ছিলেন। সভায় চামড়া রপ্তানি বাড়াতে অপরিহার্য লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপ (এলডব্লিউজি) সনদের প্রয়োজনীয়তা পূরণে সিইটিপি দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।

ওই সভায় বিডাপ্রধান আশিক চৌধুরী বলেন, রপ্তানিকারক ও জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় যে সংস্থা সিইটিপি পরিচালনায় সবচেয়ে বেশি সক্ষম, তাদেরই এটি চালানো উচিত।

পরিবেশ দূষণ রোধে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বিসিক ২০০৩ সালে সাভারে ট্যানারি শিল্পনগরী গড়ার প্রকল্প হাতে নেয়। এ প্রকল্পের আওতায় পয়ঃনিষ্কাশন শোধনাগার (এসটিপি), কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি) ও ডাম্পিং ইয়ার্ড নির্মাণের কথা ছিল। প্রকল্পটি ২০০৫ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে এই প্রকল্পের মেয়াদ ১২ বার বাড়ানো হয় এবং ব্যয় ১৭৫ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ১ হাজার ১৫ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। ২০২১ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকল্পটি সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।

এনএইচ/কেএসআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।