নির্বাচনে ‘পেশিশক্তি, পক্ষপাত ও ভুয়া তথ্য’ নিয়ে ইসির বার্তা
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারা পেশিশক্তি দেখাবে, পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করবে এবং ভুয়া তথ্য ছড়াবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বার্তা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
রোববার (১৬ নভেম্বর) নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে দ্বিতীয় দিনের প্রথম ধাপে ছয়টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ এমন বার্তা দেন।
এদিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত প্রথম ধাপের সংলাপে অংশ নেওয়া দলগুলো হলো—গণফোরাম, গণফ্রন্ট, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি–বিএসপি ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি। অর্ধশতাধিক নিবন্ধিত দলের মধ্যে বৃহস্পতিবার ও রোববার মিলিয়ে ২৪টি দলের সঙ্গে সংলাপ করলো ইসি।
নির্বাচন কমিশনার সানাউল্লাহ বলেন, যারা পেশীশক্তি দেখাবে, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে—এটাই ইসির বার্তা। এ ব্যাপারে কোনো ব্যত্যয় হবে না। যারা অপপ্রচার ছড়াবে তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। নির্বাচনী দায়িত্ব পালনকালে যে কর্মকর্তারা পক্ষপাতদুষ্ট হবেন তাদেরও ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে।
ইসির এখতিয়ারের মধ্যে আইনি সংস্কারের পাশাপাশি বাস্তবায়নের জন্য কাজ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, বিগত দিনগুলোতেও নির্বাচনী সংস্কৃতিতে নানান ধরনের দুর্বলতা ছিল, তবে নির্বাচনে ছিল উৎসবের আমেজ। কিন্তু ওভার অ্যা পিরিয়ড অব টাইম এই সংস্কৃতিটাই নষ্ট হয়ে গেছে। দুঃখজনজন হলেও মানুষ নির্বাচনবিমুখ হয়েছে।
‘ফলশ্রুতিতে জোরপূর্বক কেন্দ্র দখল, সিল মারা, না হয় প্রকাশ্যে বলা ‘এই মার্কা ও দল ছাড়া কারও নির্বাচনে আসার দরকার নেই’—এটি আমাদের কালচারাল ডেমেজ করে দিয়েছে। এটিকে আমাদের আন-ডু করতে হবে।’
ইসি সানাউল্লাহ বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থাকে আরও ভালো জায়গায় নিতে হবে, এটি আমাদের কালেকটিভ রেসপনসিবিলিটি। এটি করতে না পারলে জাতির বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। সব দলের কাছে আহ্বান—আসুন, আমরা ভালো সংস্কৃতির পুনঃপ্রতিষ্ঠা করি। এজন্য সহাবস্থান ও সহনশীল মনোভাব দরকার, সহযোগিতা দরকার।
আত্মসমালোচনার জায়গা থেকে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ইসির ভুলের শেষ নেই। আশ্বস্ত করছি—এসব ভুলের যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে লক্ষ্যে কাজ করছি।
‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপ ১৮ নভেম্বর উদ্বোধনের কথা তুলে ধরে আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, বৈশ্বিকভাবে এটি সহজ পদ্ধতি নয়। এ অভিজ্ঞতাটাও খুব সহজ নয়। সর্বশেষ ভারতে ৪ কোটি প্রবাসীর মধ্যে ১ লাখ ১৯ হাজার নিবন্ধন করেছিল। মালয়েশিয়ায় ১৮ লাখ প্রবাসীর মধ্যে নিবন্ধন করাতে পেরেছিল ৫৫ হাজার।
‘আমাদের ধারণা, সমমানের স্ট্যান্ডার্ডের মধ্যে আমরা সবাইকে ছাড়িয়ে যাবো আশা করছি। দলগুলোও যেন নিজেদের মধ্যে প্রচারণা চালায়। এ ভোটের গোপনীয়তা রক্ষা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে।’
গোপনীয়তা ভঙ্গ করলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে সতর্ক করে তিনি আরও বলেন, কোনোভাবেই যেন গোপনীয়তা ভঙ্গ করা না হয়। কেউ যেন এভাবে ব্যবহার না করি—প্রবাস থেকে অমুক রাজনৈতিক দলের পক্ষে ভোটের জোয়ার উঠেছে। তাহলে স্থানীয় নির্বাচন প্রভাবিত হবে, ভবিষ্যতে প্রবাস থেকে ভোট ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ভুয়া তথ্য রোধে সবার সহযোগিতা চেয়ে এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, এখন থেকেই মিস ইনফরমেশন চালাচালি শুরু হয়ে গেছে। তফসিল ঘোষণার পর হয়তো ইসি এসবের দায়-দায়িত্ব নিয়ে নেবে। কিন্তু ৬০-৬৫ দিন ব্যান্ডউইথ বা ওয়েবসাইট ডাউন করে এর সমাধান হবে না। তাতে বরং ব্যবসা-বাণিজ্য ও যোগাযোগ ব্যাহত হবে।
ভুয়া বা অপতথ্য রোধ এবং সঠিক তথ্যের প্রবাহ নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা কাজ করবে বলে জানান তিনি।
ইসি সানাউল্লাহ বলেন, অন্ধের মতো কোনো অপতথ্য ছড়ানো বা শেয়ার করা যাবে না। অপতথ্য ছড়ালে মাফ পাওয়া যাবে না। ইসির পক্ষে এ পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ও জাতির ক্রান্তিলগ্নে যা করণীয় আমরা করবো।
এক্ষেত্রে তিনি ভালো নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা কামনা করেন।
এমওএস/এমকেআর/এমএস