বদিউল আলম মজুমদার

নির্বাচন সঠিক না হলে জনগণের সম্মতির শাসন প্রতিষ্ঠিত হয় না

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:৩২ পিএম, ০২ ডিসেম্বর ২০২৫
গোলটেবিল বৈঠকে ড. বদিউল আলম মজুমদার/ছবি: জাগো নিউজ

নির্বাচন সঠিক না হলে জনগণের সম্মতির শাসন প্রতিষ্ঠিত হয় না বলে মন্তব্য করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) প্রধান নির্বাহী ড. বদিউল আলম মজুমদার।

তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পর মানুষের মধ্যে এই আশাবাদ সৃষ্টি হয়েছে যে, আর কোনো কর্তৃত্ববাদী শাসনের পুনরুত্থান যেন না ঘটে, নির্বাচন ব্যবস্থা যেন পরিশুদ্ধ হয়, গণতন্ত্র যেন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায় এবং সর্বোপরি সাম্য-মানবিক মর্যাদা-ন্যায়বিচার ভিত্তিক একটি বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার মধ্যদিয়ে রাষ্ট্রে যেন সুশাসন কায়েম হয়। নির্বাচন সঠিক না হলে জনগণের সম্মতির শাসন প্রতিষ্ঠিত হয় না। একটি প্রতিনিধিত্বশীল কার্যকর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই।

মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সুজন আয়োজিত ‘সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক উত্তরণ: নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।

বৈঠকে ড. বদিউল আলম বলেন, গণতান্ত্রিক উত্তরণ তথা একটি টেকসই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য সুষ্ঠু নির্বাচন পূর্বশর্ত হলেও তা যথেষ্ট নয়। আমাদের অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায় যে, সুষ্ঠু নির্বাচন তথাকথিত ‘একদিনের গণতন্ত্র’ ভোট প্রদানের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারলেও গণতান্ত্রিক উত্তরণ ঘটে না। নির্বাচন যদিও গণতন্ত্রের প্রাথমিক এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ, এটি এককভাবে গণতান্ত্রিক যাত্রাপথকে সুদৃঢ় করতে পারে না। বস্তুত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে একটি শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করিয়ে টেকসই করতে হলে ‘ডেমোক্রেটিক ডেফিসিট’ বা গণতন্ত্রের ঘাটতি দূর করা আবশ্যক। যার জন্য কতগুলো সুদূরপ্রসারী সংস্কার জরুরি।

তিনি বলেন, সংস্কারের উদ্দেশ্য হবে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথে বিরাজমান প্রতিবন্ধকতাগুলো চিহ্নিত ও দূরীকরণের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। একই সঙ্গে কাঠামোর পরিবর্তনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের ভীত সুদৃঢ় করা, যেন আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থা কার্যকারিতা অর্জন করে এবং গণতান্ত্রিক উত্তোলনের পথ প্রশস্ত হয়। তবে এর জন্য রাজনৈতিক সংস্কৃতির আমূল পরিবর্তনও প্রয়োজন হবে।

সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে সাত প্রতিবন্ধকতা

ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির গভীর বিশ্লেষণ থেকে আমরা বাংলাদেশের সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথে মোটা দাগে সাতটি প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করেছি। প্রতিবন্ধকতাগুলো হলো— নির্বাচনি অঙ্গনে দুর্বৃত্তায়ন, রাজনৈতিক অঙ্গনে দুর্বৃত্তায়ন, নির্বাচনে টাকার অশুভ খেলা, নির্বাচন কমিশনের অকার্যকারিতা, নাগরিক সমাজের নিষ্ক্রিয়তা, নির্বাচনকালীন সরকারের পক্ষপাতদুষ্ট, ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ এবং ভারসাম্যহীনতা।

তিনি বলেন, শেষ দুটি প্রতিবন্ধকতা দূর হলে অবশ্য গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথ সুগম হবে। জটিল এবং ক্রমবর্ধমান এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করার ওপর নির্ভর করবে ভবিষ্যতে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন, শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণ। আর এসবের জন্য প্রয়োজন কতগুলো গভীর আইনি, প্রাতিষ্ঠানিক এবং কাঠামোগত সংস্কার।

তিনি আরও বলেন, জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর ও সরকারের পক্ষ থেকে ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সাংবিধানিক সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫’ জারির মাধ্যমে এসব সংস্কারের লক্ষ্যে এরই মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ গৃহীত হয়েছে। তবে কাঙ্ক্ষিত সংস্কারগুলো বাস্তবায়িত হলেই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত হবে না। এর জন্য আরও প্রয়োজন হবে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চা, গত কয়েক দশকে যার চরম অবক্ষয় ঘটেছে আমাদের দেশে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে অবক্ষয় ঘটেছে। রাজনীতি এখন বহুলাংশে ব্যবসায় পরিণত হয়েছে।

তিনি বলেন, রাজনীতির ব্যবসায়ীকরণের ফলে রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা এখন নীতি-আদর্শের পরিবর্তে অর্থ ও পেশিশক্তির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। রাজনীতিবিদরা একে অপরের আদর্শিক প্রতিদ্বন্দ্বী না হয়ে ‘মর্টাল এনিমি’ বা ‘মরণশীল শত্রু’তে পরিণত হয়েছে। যুক্তি-তর্ক ও নীতি-আদর্শের পারিবর্তে কালো টাকা, হুন্ডা-গুন্ডা ও সহিংসতা পরিণত হয়েছে রাজনীতির ভাষায়। এ থেকে উৎপত্তি হয় ছলে-বলে-কলে-কৌশলে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নিশ্চিহ্ন করার রাজনীতি, যা সমাজকে চরমভাবে বিভাজিত করে ফেলেছে।

সুজনের প্রধান নির্বাহী বলেন, ক্ষমতাসীনরা তাদের বৈধ সরকারি ক্ষমতা অবৈধভাবে ব্যবহার করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন-পীড়ন করে। তাই টেকসই গণতন্ত্রের জন্য সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পাশাপাশি রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন।

বৈঠকে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

এনএস/ইএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।