সংসদ ও গণভোটের তফসিলের অপেক্ষা, পর্যালোচনায় রোববার বসছে ইসি

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:০৯ পিএম, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫
ফাইল ছবি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল পর্যালোচনায় সভায় বসতে যাচ্ছে এ এম এম নাসির উদ্দিন নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

রোববার (৭ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় নির্বাচন কমিশনে এ সভা হবে। সভায় চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিব উপস্থিত থাকবেন। ভোটগ্রহণের সময় এক ঘণ্টা বাড়ানোসহ মনোনয়নপত্র জমা, বাছাই, প্রত্যহারের শেষ সময় ও ভোটের তারিখ নিয়ে পর্যালোচনা হবে এ সভায়। ভোটের কাজের সার্বিক বিষয়ে অগ্রগতির পাশাপাশি পোস্টাল ভোটিংয়ের ব্যালট পেপার আনা-নেওয়ার সময়ও চূড়ান্ত হবে।

ভোট প্রস্তুতির সবকিছু গুছিয়ে এনে তফসিলের আগে আইনশৃঙ্খলা সভা ও আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করেছে ইসি। প্রথা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির কাছে নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতির বিষয়ে অবহিত করতে ১০ ডিসেম্বর বঙ্গভবনে যাবেন নির্বাচন আয়োজনকারী সাংবিধানিক সংস্থাটির সদস্যরা। এরপরে কয়েকদিনের মধ্যে তফসিল ঘোষণা করবেন সিইসি।

ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে তফসিল ঘোষণা করার কথা রয়েছে। ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে একই দিনে সংসদ নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠিত হবে।

এরইমধ্যে ডিসি, ইউএনওসহ মাঠ প্রশাসন ও এসপি, ওসিসহ পুলিশে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে। তফসিল ঘোষণার পর পরিস্থিতি বিবেচনা করে রদবদলের দরকার হলে তাও করবে ইসি।

রোববারের কমিশন সভার সিদ্ধান্ত ও রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে সব ধরনের প্রস্তুতি অবহিত করে দুই ভোটের তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে জানায় ইসি।

নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, রোববারের কমিশন সভায় তফসিলের সময়সূচি নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে। এরপর মহামান্য রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তফসিল চূড়ান্ত করা হবে।

তিনি জানান, তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে কারা রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার হচ্ছেন তাও প্রজ্ঞাপন আকারে জানিয়ে দেওয়া হবে।

আইন-বিধি-নীতিমালায় নানা ধরনের সংস্কার চাওয়া হয়েছে এবার। আইন-বিধি অনুসরণে ও শতভাগ প্রতিপালনে ইসির শক্ত অবস্থান থাকবে এবং সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে প্রার্থী, দল, ভোটারসহ সব অংশীজনের সহযোগিতা চান তিনি।

সবশেষ ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি ভোট হয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের। এ বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগ নেয় অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তবর্তীকালীন সরকার।

গেল বছর নভেম্বরে এ এম এম নাসির উদ্দিন নেতৃত্বাধীন ইসি গঠনের পর ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের পথে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করে। এরমধ্যে গণভোটের বিষয়টিও যুক্ত হয়। দলগুলোর নানা অবস্থানের মধ্যে সরকারের তরফে দুই নির্বাচন একসঙ্গে করার ঘোষণা আসে।

প্রথমবারের মতো প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটারের জন্য পোস্টাল ভোটিংয়ের ব্যবস্থা নেওয়া হয়। প্রধান উপদেষ্টা ঘোষিত ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই হতে যাচ্ছে বহুল কাঙ্ক্ষিত ভোট। এরই ধারাবাহিকতায় নির্বাচন আয়োজনকারী সাংবিধানিক সংস্থাটি ভোটের তফসিল ঘোষণা করবে।

বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ নিবন্ধিত অর্ধশতাধিক দল রয়েছে। আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত থাকায় ভোটের বাইরে থাকতে হচ্ছে দলটিকে।

ইসির সভা ৭ ডিসেম্বর

নির্বাচন কমিশনের দশম সভা আগামী ৭ ডিসেম্বর রোববার, সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সভাপতিত্বে তার সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হবে।

এ সভায় তফসিলসহ দশটি বিষয় আলোচ্যসূচিতে রয়েছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য- তফসিলের আগের ও পরের কার্যক্রমসমূহ, গণভোট আয়োজনসহ ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতির সর্বশেষ অবস্থা, মাঠপর্যায়ে সর্বোচ্চ যোগাযোগ, মতবিনিময় ও সমন্বয় সংক্রান্ত বিষয় ইত্যাদি।

ভোটের দিনের আবহাওয়া ও তফসিলের ভাষণ প্রচার

ইসির আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এরইমধ্যে আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্যাদি তুলে ধরা হয়েছে। তফসিল ঘোষণা প্রচারে বিটিভি ও বেতারের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির পাশাপাশি পোস্টাল ভোটিং, সংসদ ও গণভোট সংক্রান্ত প্রচারণার বিষয়ে নির্দেশনাও দিযেছে ইসি।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিটিভির মহাপরিচালক মো. মাহবুবুল আলম জানান, ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে এখন সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব। এরইমধ্যে পোস্টাল ভোট বিডি অ্যাপের উদ্বোধন সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনে যেমন রেকর্ড করা যায়, তেমনি স্টুডিও রেডি রাখা সম্ভব। সরাসরি কিংবা রেকর্ডেড সম্প্রচার- ইসির যেমন নির্দেশনা তেমন ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হবে।

নির্বাচন আয়োজনের জন্য সম্ভাব্য সময়ে দেশের আবহাওয়া কেমন থাকবে সে নিয়েও চলছে বিস্তনর হিসাব-নিকাশ। ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে কেমন আবহাওয়া বিরাজ করবে জানতে চাইলে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মমিনুল ইসলাম শুক্রবার বলেন, শীতের সময়ে কুয়াশার দাপট থাকবে প্রথম সপ্তাহে। এরপর ধীরে ধীরে কমবে। ভোটের কাছাকাছি সময়ে আরও সুস্পষ্ট পূর্বাভাস জানানো যাবে।

তফসিলের আগে-পরে যত কাজ

১. ভোটার তালিকা, আইন-বিধি-নীতিমালা সংস্কার, সংলাপ, সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাস, নতুন দল নিবন্ধন।

চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ- ভোটার ১২ কোটি ৭৬ লাখের বেশি; ৩০০ সংসদীয় আসন সীমানা চূড়ান্ত; প্রায় ৪৩ হাজার ভোটকেন্দ্র চূড়ান্ত; ভোটের অন্তত ২৫ দিন আগে গেজেট প্রকাশ। চারটি নতুন দলের নিবন্ধন চূড়ান্ত।

২. ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে এবং ভোটের আগ পযন্ত চলমান, ৮২টি পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন।

৩. প্রার্থীদের জন্য মনোনয়নপত্র মুদ্রণ, এর সঙ্গে নির্বাচনি এলাকাভিত্তিক ছবি ছাড়া ভোটার তালিকার সিডি প্রস্তুত।

৪. ছবিসহ ও ছবি ছাড়া ভোটার তালিকার প্রয়োজনীয় সংখ্যক কপি মুদ্রণ।

৫. পোস্টাল ভোটিং নিয়ে প্রচারণা, নিবন্ধন, প্রবাসীদের জন্য ব্যালট পেপার মুদ্রণ, আনা-নেওয়াসহ সার্বিক কাযক্রম।

৬. বিদেশি পর্যবেক্ষক ও গণমাধ্যমের জন্য হেল্পডেস্ক করতে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ; নিয়মিত সংবাদ অবলোকন করে কমিশনকে জানাতে টিম গঠন; সামাজিক যোগযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন প্রচারমাধ্যমে নির্বাচনি প্রচার নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সভা; সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের জন্য কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে সভা পরিকল্পনা।

৭. নির্বাচনে ব্যবহৃত সব ফরম, প্যাকেট মুদ্রণ সম্পন্ন। ব্যালট বাক্স, লকসহ নির্বাচন দ্রব্যাদির মজুদ পরীক্ষা করে জেলা নির্বাচন অফিসারদের জানানো।

৮. মনোনয়নপত্র দাখিল সংশ্লিষ্ট প্রাথমিক পর্যায়ের বিভিন্ন ফরম (ফরম-১, ফরম ২, ফরম-৩), প্যাকেটসহ অন্যান্য দ্রব্যাদি মাঠ পর্যায়ে প্রেরণ। নির্বাচনি দ্রব্য-স্ট্যাম্প প্যাড, মার্কিং সিল, ব্রাস সিল, অফিসিয়াল সিল, গালা ইত্যাদি সংগ্রহ।

৯. ভোটের জন্য আগে সব ব্যালট বাক্স পুনরায় যাচাই ও ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত রাখা।

১০. ম্যানুয়েল মুদ্রণ শেষ করে রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কাছে পাঠানো।

১১. মাঠপর্যায় থেকে ভোটকেন্দ্রের তালিকা কমিশনের অনুমোদনের জন্য নির্দেশনা (তফসিল ঘোষণার ৭ দিনের মধ্যে পাঠাতে হবে)।

১২. বিভিন্ন প্রকার ম্যানুয়াল ও নির্দেশিকা মুদ্রণ; ভোটের ফল প্রদর্শন, প্রচার, ডিজিটাল মনিটর স্থাপন ও যন্ত্রপাতি সংযোজন (ভোটের ১৫ দিন আগে)।

১৩. আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক, ঋণখেলাপিদের সংগ্রহ তথ্য সংগ্রহ, ভোটকেন্দ্র থেকে পোস্ট অফিসের মাধ্যমে ভোট গণনার বিবরণী, ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ, ইলেকটোরাল ইনকোয়ারি গঠনসহ সংশ্লিষ্ট প্রস্তাবনা তৈরি।

১২. ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রাথমিক প্যানেল প্রস্তুতে নীতিমালা উপস্থাপন; প্যানেল প্রস্তুতে কর্মকর্তা-কর্মচারীর তালিকা সংগ্রহে নির্দেশনা।

১৩. তফসিল ঘোষণার পাশাপাশি রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা চূড়ান্তকরণ।

১৪. তফসিল ঘোষণার পর আচরণবিধি প্রতিপালন, মনোনয়নপত্র জমা থেকে ভোট পযন্ত আইন-বিধি অনুসরণে নির্দেশনা।

১৫. তফসিল ঘোষণার পর জনপ্রশাসন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়গুলোকে প্রয়োজনীয় চিঠি; সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটির দিনে এবং অফিস সময়ের পরে দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা।

১৬. প্রতীক বরাদ্দের পর ব্যালট পেপার মুদ্রণ ও ভোটের আগে নিরাপত্তাসহ কেন্দ্রে কেন্দ্রে নির্বাচনি সরঞ্জাম পৌঁছানো।

১৭. ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষ অনুসারে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নির্ধারণ করে রিটার্নিং অফিসারে কাছে তথ্য সংগ্রহ; ভোটের ১৫ দিন আগে নিয়োগ চূড়ান্ত ও প্রশিক্ষণ-সংক্রান্ত নির্দেশনা।

১৮. আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক প্রস্তাব ও সভার পরিকল্পনা; বিভিন্ন বাহিনী মোতায়েন, ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ ও বিভিন্ন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা পাঠানো সংক্রান্ত প্রস্তাব উপস্থাপন (তফসিল ঘোষণার পর কার্যক্রম গ্রহণ)।

১৯. প্রশিক্ষণ, প্রচার, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ পরিকল্পনা; আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, ম্যাজিস্ট্রেট, ইলেকটোরাল ইনকোয়ারি কমিটি ও জেলা পর্যায়ে প্রশিক্ষণ পরিকল্পনা প্রণয়ন; প্রশিক্ষণ।

২০. ভোটকে সামনে রেখে সার্বিক বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রজ্ঞাপন, সব ধরনের পরিপত্র জারি ও নির্দেশনা।

২১. ফল সংগ্রহ ও পরিস্থিতি প্রতিবেদন।

এমওএস/এএমএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।