সোশ্যাল মিডিয়ার মুখরোচক বিজ্ঞাপনে মজে বাড়ছে মানবপাচার

রায়হান আহমেদ
রায়হান আহমেদ রায়হান আহমেদ , নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭:০৪ পিএম, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫

ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিদেশে চাকরির লোভনীয় অফার দেখিয়ে প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে অসাধু রিক্রুটিং এজেন্সি ও দালাল চক্র। ‘নগদে ভিসা’, ‘কম খরচে সৌদি যাওয়া’, ‘উচ্চ বেতনে চাকরি’— এ ধরনের আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপনে প্রলুব্ধ হয়ে প্রতিদিনই বহু কর্মী এসব এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।

ক্ষেত্রবিশেষে এসব প্রলোভনমূলক বিজ্ঞাপনের ওপর বিশ্বাস করে কর্মীরা দেশ ছাড়লেও বিদেশে গিয়ে বাস্তবতা হয় সম্পূর্ণ ভিন্ন। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী চাকরি বা ইকামা তো দূরের কথা, পৌঁছানোর পর তারা জানতে পারেন— কোনো বৈধ নিয়োগপত্রই নেই। ফলে কেউ বাধ্য হয়ে অন্য কাজে যুক্ত হন, আর কাজ না পেলে অনেকেই অবৈধ অবস্থানের ঝুঁকিতে পড়েন।

ক্ষতিগ্রস্ত কর্মীদের অভিযোগ, বিজ্ঞাপনে দেখানো বেতন, কাজের ধরন ও সুযোগ–সুবিধার সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। কয়েক লাখ টাকা খরচ করে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে গেলেও অনেককে বেতন না দেওয়া, অতিরিক্ত সময় কাজ করানো এবং নিয়োগদাতার হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।

‘বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের সুযোগ নিয়ে এজেন্সি ও দালালরা নানা ধরনের প্রলোভন দেখাচ্ছে। অনলাইনে ফ্রি, ভিসা, ভালো চাকরির আশ্বাস দিয়ে মানুষকে বিদেশে পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে গন্তব্য দেশে পৌঁছে অনেকেই কোনো কাজ পাচ্ছেন না, বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন।’— ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক (মাইগ্রেশন অ্যান্ড ইয়ুথ প্ল্যাটফর্ম) শরিফুল হাসান

চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ক্রিয়েটিভ ইন্টারন্যাশনাল নামক একটি এজেন্সির বিজ্ঞাপন ও প্রলোভনমূলক ভিডিও দেখে সৌদি আরব যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলার মনির হোসেন। ৫ লাখ টাকা খরচ করে সৌদি পৌঁছানোর পর তিনি দেখেন পরিস্থিতি একেবারেই ভিন্ন। তিন মাস ধরে তিনি বেকার এবং এজেন্সিটি যে নির্দিষ্ট কাজ বা ইকামার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা কিছুই পূরণ করেনি।

সোশ্যাল মিডিয়ার মুখরোচক বিজ্ঞাপনে মজে বাড়ছে মানবপাচার

মনির হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, আমাকে বলা হয়েছিল আল-ফানার কোম্পানিতে কাজ দেওয়া হবে। আমি দেশে থাকতে স্ট্যাম্প করে এজেন্সিকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা দেওয়া হয়। সৌদি পৌঁছানোর পর আমার কাছ থেকে স্ট্যাম্প নিয়ে নেয় এজেন্সির লোকজন। পরে মিশরের এক নাগরিকের কাছে কাজের জন্য পাঠানো হয়, কিন্তু দশদিন কাজ করানোর পরও বেতন দেওয়া হয়নি। আমাকে এক বছরের ইকামা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল এজেন্সি, কিন্তু কেবল তিন মাসের ইকামা দিয়েছে। এখন ইকামা দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই, কাজও দেওয়া হয়নি, ফলে অবৈধ অবস্থায় আছি এবং যে কোনো সময় গ্রেফতার হতে পারি।

আরও পড়ুন
মানবপাচার দমন অধ্যাদেশ–২০২৫ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন
টেকনাফ দিয়ে মালয়েশিয়ায় পাচারকালে ১৮ নারী-পুরুষ উদ্ধার
‘বডি কন্ট্রাক্টে’ মানবপাচার, গোয়েন্দা তথ্যে দুই কর্মকর্তার নাম

তিনি বলেন, শুধু আমি না, এ এজেন্সি থেকে বহু মানুষ প্রতারিত হয়েছেন। আমার সঙ্গে যারা এসেছেন, কেউ কাজ পাননি এবং ইকামাও দেওয়া হয়নি। খাবারের জন্যও তাদের কাছে টাকা নেই। আমি এবং অন্যরা আত্মীয়স্বজনের সাহায্যে কোনোভাবে থাকছি। আমার পরিবার এরই মধ্যে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোতে (বিএমইটি) এজেন্সির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। আমি আমার ক্ষতিপূরণ চাই এবং নাহলে আমাকে ইকামা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক।

আরেক ভুক্তভোগী নরসিংদীর বাসিন্দা শাহ আলম বলেন, আমি চলতি বছরের মে মাসে সৌদি যাই এবং নভেম্বরে আমাকে বাধ্য হয়ে ফিরে আসতে হয়েছে। ফেসবুকে এ এজেন্সির বিজ্ঞাপন দেখে আমি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। বিজ্ঞাপনে চাকরির কন্ট্রাক্ট, স্যালারি ও ইকামা ঠিক থাকবে বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। অফিসে যাওয়ার পর বলা হয়েছিল, দুই বছরের কন্ট্রাক্ট, কোম্পানির ভিসা, ১৮০০ রিয়াল বেতনসহ ওভারটাইম সুবিধা পাবো। এ প্রতিশ্রুতির প্রলোভনে আমি ৫ লাখ টাকা দিয়ে সৌদি যাই। কিন্তু সৌদিতে পৌঁছানোর পর কোনো কাজ ছিল না। এজেন্সিটির সৌদি অফিসে আমাদের জেলখানার চেয়ে খারাপ অবস্থায় রাখা হয়, তবুও কোনো কাজের ব্যবস্থা করা হয়নি।

‘তথ্যপ্রযুক্তি সহজলভ্য হওয়ায় এজেন্সিগুলো মানুষকে সহজেই প্ররোচিত করার জন্য নানা ধরনের প্রতারণার কৌশল বেছে নিচ্ছে। এ ধরনের ঘটনা এড়াতে বিএমইটির উচিত সংশ্লিষ্ট এজেন্সিগুলোকে চিঠি দেওয়া এবং জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা।’— অভিবাসী ও শরণার্থী বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনীর

তিনি আরও বলেন, আমি ব্লেন্ডার ম্যান হিসেবে সৌদি যাই। কিন্তু কিছুদিন পর এজেন্সি আমাকে ক্লিনার হিসেবে রাস্তা পরিষ্কার করার কাজ দেয়, যা সিআইটি নামে একটি কোম্পানির মাধ্যমে করানো হয়। দেড় মাস কাজ করানোর পর মাত্র ১ হাজার টাকা বেতন দেওয়া হয়। পরে কাজ ও বেতনের বিষয়ে প্রশ্ন করলে এজেন্সি জানায়, দেশের কোনো হিসাব এখানে প্রযোজ্য হবে না। সামান্য এ ক্লিনারের কাজও শেষ হয়ে যায়। পরে ৫০ জন লোক মিলে সিআইটি কোম্পানিতে গেলে তারা জানায়, ‘আমরা তোমাদের ইকামা দেবো না, শুধু সাপ্লাই করছি।’ এরপর ক্রিয়েটিভ ইন্টারন্যাশনালে গেলে তারাও কাজের কোনো ব্যবস্থা করে দেয়নি।

সোশ্যাল মিডিয়ার মুখরোচক বিজ্ঞাপনে মজে বাড়ছে মানবপাচার

শাহ আলম বলেন, সৌদিতে প্রথমে তিন মাসের মধ্যে ইকামা দেওয়া হয় বিষয়টি জানতাম না। ক্রিয়েটিভ ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি কোনো কোম্পানিতে কাজের ব্যবস্থা করে দিতে পারেনি। ইকামা না থাকায় অনেকেই অবৈধ হয়ে পড়েন। একেকজন বিভিন্ন পথে চলে যান, কেউ কেউ পালিয়ে যান। হঠাৎ একদিন রাস্তার কাজের সময় পুলিশ ইকামা চায়, দিতে না পারায় জেলে নিয়ে যায়। শেষমেশ গত নভেম্বর মাসে আমাকে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেয়।

সৌদিফেরত এ ভুক্তভোগী বলেন, দেশে ফিরে আমি ক্রিয়েটিভ ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে যোগাযোগ করি, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। আমি অসহায় হয়ে পড়েছি। ঢাকা গিয়ে অভিযোগ জানানোর কোনো ব্যবস্থা নেই। আমি মামলা করার কথা জানালেও এজেন্সি কোনো গুরুত্ব দেয়নি।

আরেক ভুক্তভোগী বলেন, এই এজেন্সি ডেকে নিয়ে নিজেরাই ইন্টারভিউ নেয়। আসলে তারা সৌদিতে নিয়ে সাপ্লাই কোম্পানিতে ছেড়ে দেয়। আমাদের বলে, যে কোম্পানিতে পাঠানো হচ্ছে, তারা নিজেরাই ইকামা করে দেবে। অথচ তিন মাস পর অবৈধ হতে হয়। প্রতিবছর ছুটি দেবে, এমনভাবে প্রলোভন দেখায় মানুষ আশ্বস্ত হয়। আমি প্রতারিত হয়ে মামলা করবো বলার পর, তারা হুমকি দিয়ে বলে, ‘যা ইচ্ছা করেন’।

আরও পড়ুন
চাকরির স্বপ্ন দেখিয়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মুখে ঠেলে দিত চক্রটি
সীমান্তে মানুষ পারাপারে সহায়তাকারী ফিলিপের দুই সহযোগী আটক
পানি না পেয়ে পেট্রোল পান করে অসুস্থ ৪০ বাংলাদেশি, মৃত্যু ২

এ বিষয়ে জানতে ক্রিয়েটিভ ইন্টারন্যাশনালের ম্যানেজারের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

তবে যোগাযোগ করা হলে ক্রিয়েটিভ ইন্টারন্যাশনাল গ্রুপের রিক্রুটিং এজেন্সি ধাঁনসিড়ি ওভারসিজের চেয়ারম্যান গোলাম আজম জাগো নিউজকে বলেন, সৌদিতে বর্তমানে অধিকাংশ মানুষ সাপ্লাই কোম্পানিতে যায়। এ এজেন্সির শেয়ার তিনজন, বাকিদের সঙ্গে কথা বলুন।

সোশ্যাল মিডিয়ার মুখরোচক বিজ্ঞাপনে মজে বাড়ছে মানবপাচার

ফেসবুকে বাড়ছে ভুয়া বিজ্ঞাপন, প্রতারণার শিকার বিদেশগামী কর্মীরা
ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে বিদেশে চাকরির বিজ্ঞাপন উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি এজেন্সি নামে-বেনামে নানান পোস্টার ও বিজ্ঞাপন সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিচ্ছে। এসব বিজ্ঞাপন দেখে প্রতারিত হচ্ছেন বিদেশ গমনেচ্ছু অনেক কর্মী।

সম্প্রতি জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে এ ধরনের প্রতারণার একাধিক প্রমাণ পাওয়া গেছে। সংস্থাটির বহির্গমন শাখার পরিচালক (উপসচিব) মো. তাজিম-উর-রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‌‘আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এ ধরনের এজেন্সিকে ধরার চেষ্টা করছি। বিষয়টি এখন অত্যন্ত উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে। তবে বর্তমানে বিএমইটি থেকে একা কাজ করা চাপের। সামনে আরও কয়েকজনকে ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেওয়া হবে। তখন নিয়মিতভাবে এজেন্সিগুলোতে অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হবে। আশা করি, এতে শ্রমিকদের সঙ্গে প্রতারণা কিছুটা হলেও কমবে।’

প্রতারিত হয়ে অবৈধ হয়ে দেশে ফেরত
মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানরত কর্মীদের অভিযোগ অনুযায়ী, বিদেশে অবৈধ হয়ে পড়া শ্রমিকদের সিংহভাগই রিক্রুটিং এজেন্সির প্রতারণার শিকার। সাপ্লাই কোম্পানির নাম ব্যবহার করে, ভুয়া বিজ্ঞাপন দেখিয়ে কিংবা ফ্রি ভিসায় কাজ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসব এজেন্সি শ্রমিকদের বিদেশে নিয়ে যায়।

এভাবে যাওয়া অধিকাংশ কর্মী সেখানে গিয়ে কোনো কাজ পান না। শুরুতে তিন মাসের ইকামা দিয়ে বিদেশে নেওয়া হলেও পরে তা নবায়ন বা স্থায়ী ইকামা করে দেওয়া হয় না। ফলে তিন মাস পর শ্রমিকরা অবৈধ হয়ে পড়েন এবং তাদের কাছে কোনো বৈধ কাগজপত্র থাকে না। ফলে প্রতি মাসেই অসংখ্য শ্রমিক অবৈধ অবস্থায় আটক হয়ে কারাভোগের পর দেশে ফিরতে বাধ্য হন।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের তথ্যমতে, গত ১০ বছরে বিভিন্ন দেশে অবৈধ হয়ে আউটপাস নিয়ে দেশে ফিরেছেন ৬ লাখ ৭৩ হাজার ৫৭০ জন বাংলাদেশি। বৈধ পথে বিদেশে গিয়ে পরে অবৈধ হয়ে ফিরে আসা কর্মীদের সংখ্যা প্রতি বছরই বাড়ছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ সাপ্লাই কোম্পানি ও তথাকথিত ফ্রি ভিসায় গিয়ে অবৈধ অবস্থায় দেশে ফিরতে বাধ্য হয়েছে।

আরও পড়ুন
দেশে বসে মুক্তিপণ আদায়, চক্রের সদস্য গ্রেফতার
টেকনাফে গহিন পাহাড়ে বন্দি নারী-শিশুসহ উদ্ধার ৭, আটক ৩

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে ৪৫ হাজার ৯৮৪ জন বাংলাদেশি অবৈধ হয়ে বিদেশ থেকে শূন্য হাতে দেশে ফেরেন। ২০২১ সালে আউটপাস নিয়ে দেশে ফিরে আসেন ৭২ হাজার ৬০৯ জন কর্মী। ২০২২ সালে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৯৭ হাজার ৯১৩ জনে। ২০২৩ সালে ৮৬ হাজার ৬২১ জন এবং ২০২৪ সালে ৮৮ হাজার ৮৬৮ জন বৈধ অভিবাসী শ্রমিক অবৈধ হয়ে দেশে ফিরে এসেছেন।

ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক (মাইগ্রেশন অ্যান্ড ইয়ুথ প্ল্যাটফর্ম) শরিফুল হাসান জাগো নিউজকে বলেন, বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যবহারের সুযোগ নিয়ে এজেন্সি ও দালালরা নানা ধরনের প্রলোভন দেখাচ্ছে। অনলাইনে ফ্রি ভিসা, ভালো চাকরি, কম্পিউটার বা আইটি খাতে কাজের আশ্বাস দিয়ে মানুষকে বিদেশে পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে গন্তব্য দেশে পৌঁছে অনেকেই কোনো কাজ পাচ্ছেন না, বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন।

শরিফুল হাসান বলেন, সৌদি আরবে রাতারাতি অনেক কোম্পানি গড়ে উঠছে, যেগুলোর মূল কাজ শুধু শ্রমিক নেওয়া, অথচ সেখানে বাস্তব কোনো কাজ নেই। প্রতিবছর অবৈধ হয়ে ৫০ হাজার বা তার বেশি মানুষ দেশে ফিরে আসেন, যার মধ্যে অধিকাংশই সৌদি আরব থেকে ফেরত আসেন। অনেক ক্ষেত্রেই কর্মীরা জানেন না তারা কোথায় যাচ্ছেন বা চুক্তিপত্রে কী লেখা আছে, যাচাই-বাছাই ছাড়াই তারা বিদেশে যাচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, সবচেয়ে বেশি প্রতারণা হচ্ছে সৌদি আরবে। অথচ এসব প্রতারণার জন্য দায়ী এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না এবং এ বিষয়ে সরকারের পর্যাপ্ত মনিটরিংও নেই।

কর্মসংস্থান ও অভিবাসন বিশেষজ্ঞদের মতে, ফেসবুকভিত্তিক অনেক বিজ্ঞাপনই যাচাইহীন, যা মানব পাচারকারীদের নতুন কৌশল হিসেবে দেখা যাচ্ছে। তারা আকর্ষণীয় পোস্টের মাধ্যমে প্রথমে কর্মীদের ফাঁদে ফেলে এবং নানা প্রলোভন দেখিয়ে সহজেই তাদের আশ্বস্ত করে। পরে উচ্চ ফি আদায় করে বিদেশে পাঠালেও সেখানে কাজের ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ হয়।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এ ধরনের প্রতারণা রোধে বিএমইটি’র মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরিং জোরদার করা অত্যন্ত জরুরি।

অভিবাসী ও শরণার্থী বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনীর জাগো নিউজকে বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি সহজলভ্য হওয়ায় এজেন্সিগুলো প্রতারণার নানামুখী কৌশল বেছে নিচ্ছে, যাতে মানুষকে সহজেই প্ররোচিত করা যায়। এ ধরনের ঘটনা এড়াতে বিএমইটির উচিত সংশ্লিষ্ট এজেন্সিগুলোকে চিঠি দেওয়া এবং জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা।

তিনি আরও বলেন, ভুয়া বিজ্ঞাপন সম্পর্কে জনগণকে সতর্ক করতে প্রয়োজনে বিএমইটির নিজস্ব পেজ বা প্ল্যাটফর্‌ম ব্যবহার করা যেতে পারে। শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, কম্বোডিয়াসহ অন্যান্য দেশেও ভুয়া তথ্য দিয়ে প্রতারণার ঘটনা ঘটছে। এ ধরনের প্রতারণার ক্ষেত্রে দায়ীদের বিরুদ্ধে জরিমানাসহ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।

এছাড়া সামাজিক মাধ্যমে প্রলোভনমূলক বিজ্ঞাপন দেখে যোগাযোগ করা বা অর্থ লেনদেন থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন আসিফ মুনীর।

আরএএস/এমএএইচ/এমএফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।