সততার ওজন মাপা মেশিন

আবু সালেহ সায়াদাত
আবু সালেহ সায়াদাত আবু সালেহ সায়াদাত , নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১১:১১ পিএম, ১৬ জানুয়ারি ২০১৮

একটি স্ট্যান্ডওয়ালা ওজন মাপার ডিজিটাল মেশিন। তার উপরে বেঁধে রাখা আছে একটি ছোট টিনের বক্স। পাশে রাখা দুটি চেয়ার। এর পাশ দিয়েই হেঁটে যাচ্ছেন ব্যস্ত নগরবাসী। কেউ কেউ সেই ডিজিটাল মেশিনে ওজন মেপে নিচ্ছেন, আবার বক্সে টাকাও দিচ্ছেন। অন্যদের কেউ কেউ এই দৃশ্য বেশ আগ্রহ নিয়ে দাঁড়িয়ে দেখছেন।

সাধারণ পথচারীদের এই আগ্রহের কারণ এখানে কোনো দোকানদার বা সেবা প্রদানকারী নেই। মানে সেবা প্রদানের মানুষ নেই, তবে আছে ওজন মাপার ডিজিটাল মেশিনটি। আর উপরে রাখা সেই টিনের বক্সে লেখা আছে ‘টাকা নিজ দায়িত্বে বক্সে রেখে যাবেন’। রাজধানীতে চলতি পথে প্রতিটি রাস্তার অলিগলিতে দেখা মেলে ওজন মাপার যন্ত্রটির, বিনিময়ে সেই সেবাদানকারীকে ২ থেকে ৫ টাকা দিতে হয়। এটা তাদের একটা ব্যবসা। অল্প পুঁজি খাটিয়ে এভাবে এমন ডিজিটাল মেশিন নিয়ে রাজধানীর রাস্তায় বসে এই ব্যবসা পরিচালনা করেন অনেকই। কিন্তু এই ব্যবসাটির ব্যতিক্রমী রূপের দেখা মিলল রাজধানীর উত্তর বাড্ডা এলাকার ফুটওভার ব্রিজে। এখানেই রাখা আছে ডিজিটাল ওজন মাপার মেশিনটি।

পথচারীদের অনেকেই বেশ আগ্রহ নিয়ে নিজের ওজন মেপে নিজ উদ্যোগেই টাকা সেই বক্সে রেখে যাচ্ছেন। এখানে কোনো সেবা প্রদানকারী বা ওজন মাপার মেশিনটির মালিকের দেখা নেই। তবে ব্যবসা চলছে আপন গতিতেই।

dd

নানা কিসিমের মানুষে ভরা রাজধানী ঢাকা। তাই মনে অবিশ্বাস থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়। অবিশ্বাসের গাঁথুনি দিয়েই চলে বিশ্বাসের হৃদয় বিদ্ধ করার প্রতিযোগিতা। তবুও বেঁচে থাকার পাথেয় এই বিশ্বাসের ওপর ভর করেই চলে মানুষের পথচলা। এই পথে হেঁটেই মানুষ মানুষকে আপন জানে, আপন মানে।

এমনই এক বিশ্বাসের দোকানের দেখা পাওয়া গেল রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় ফুটওভার ব্রিজে। যেন বিশ্বাসের বাজার বসেছে সেথায়। অল্প দামেই সে বাজার থেকে বিশ্বাস নামের সদাই কিনতে পারছেন যে কেউই। ফুটওভার ব্রিজে দাঁড়িয়ে ব্রাশ বিক্রি করছিলেন মোনায়েম হক। ওজন মাপা মেশিন দিয়ে ব্যতিক্রমী এই উদ্যোগ দেখে মোনায়েম হক বলেন, আমি প্রায় চার ঘণ্টার বেশি সময় ধরে এখানে ব্রাশ বিক্রি করছি, কিন্তু এই ওজন মাপার মেশিনের মালিককে এখনও দেখতে পাইনি। আশেপাশের মানুষরা বলছে এটা এভাবেই মালিক ছাড়াই চলে। সকাল থেকেই দেখছি চলতি পথে অনেক মানুষ এই মেশিনে ওজন মেপে নিজেই ওই বক্সে টাকা রেখে যাচ্ছে। বিষয়টা এমন যে, দোকান আছে তবে দোকানদার নেই। দোকান থেকে ক্রেতারা তাদের প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে নিজ উদ্যোগে সেই দোকানে রাখা বক্সে টাকা দিয়ে যাচ্ছে। যদি কেউ অসৎ হয়ে টাকা না দিয়ে চলে যায়, তাহলেও তাকে ধরার কেউ নেই। ওজন মাপার মেশিনের টাকার বক্সের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার।

মোনায়েম হক বলেন, আমিও অনেক আগ্রহ নিয়ে এই বিষয়টা সকাল থেকে দেখছি। সাধারণত রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় ওজন মাপলে ২ টাকা করে দিতে হয়। কিন্তু এখানে দেখলাম অনেকেই ওজন মেপে খুশি হয়ে ১০, ২০, ৫০ টাকা দিয়ে যাচ্ছে। কারণ সাধরণভাবে এটা বলা যায় সততার ওজন মাপা মেশিন। সততা দেখিয়েই ওজন মেপে সবাই এখানে টাকা দিয়ে যাচ্ছে। আর যাদের সততা নেই তারা ওজন মেপে আশেপাশে তাকিয়ে চলে যাচ্ছে টাকা না দিয়েই।

dd

একজন পথচারী পাওয়া গেল তিনি ফুটওভার ব্রিজে রাখা এই মেশিনে দাঁড়িয়ে ওজন মেপে নিলেন। মিটারে তার ওজন দেখা গেল ৬৮ কেজি। ওজন মাপা শেষে তিনিও সেই বক্সে ৫ টাকা রেখে চলে যাচ্ছিলেন। সেই সময়ই কথা তার সঙ্গে। তিনি মকিদুর রহমান, পেশায় ব্যবসায়ী। তিনি বললেন, প্রতারক আর অসৎ লোকদের ভিড়ে রাজধানীতে সততা আর বিশ্বাস অনেকটাই হারিয়ে গেছে। তার মধ্যেই যিনি এখানে বিশ্বাস নিয়ে এই মেশিন বসিয়েছেন আয়োজনটা যতই ছোট হোক তবে সাহসী পদক্ষেপ এটি।

ওজন মাপা মেশিনের পাশে রাখা দুইটি চেয়ারে পথচারীদের কেউ কেউ এসে বসছেন, কেউবা নিজের শরীরের ওজন মেপে নিচ্ছেন সেখানে রাখা মেশিনটিতে। সেই মেশিনের উপরে বেঁধে রাখা বক্সে লেখা আছে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানের রাহিম। না থাকিলেও ওজন মাপা যাবে। টাকা নিজ দায়িত্ব বক্সে রেখে যাবেন।’ পাশে আবার ছোট করে লেখা আছে ‘মোবাইলে কথা বলা যায়’।

এএস/ওআর/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।