করোনার ধাক্কায় ডিএসসিসির ৫ প্রকল্পের কাজে ধীরগতি
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার মানুষের জীবনমান উন্নয়নে পাঁচটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বিগত কয়েক মাসে তেমন কোনো কাজ হয়নি প্রকল্পগুলোর। ফলে এসব উন্নয়ন প্রকল্প নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়ন নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়।
প্রকল্প পাঁচটি হলো- ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতায় কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ প্রকল্প, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক পুনর্বাসনসহ নর্দমা ও ফুটপাত উন্নয়ন প্রকল্প, মাতুয়াইল স্যানিটারি ল্যান্ডফিল্ড সম্প্রসারণ উন্নয়ন প্রকল্প এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন নবসংযুক্ত ডেমরা, মান্ডা, নাসিরাবাদ ও দক্ষিণগাঁও এলাকার সড়ক অবকাঠামো ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্প। এসব প্রকল্পের কাজের গতি কমে যাওয়ায় নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়ন শেষ করা সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এক কর্মকর্তা বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে ঠিকাদাররা কাজ করতে পারেননি। এর মধ্যে মেগা প্রকল্পে কিছু কাজ হলেও কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ প্রকল্পে কোনো কাজ হয়নি। তবে বর্তমানে আবার পুরোদমে কাজ শুরু হয়েছে। আশা করা যায় এসব প্রকল্পের কাজের গতি এখন স্বাভাবিকভাবে চলবে।
সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পটি (মেগা প্রকল্প) ২০১৯ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও মেয়াদ দুই বছর বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত। কিন্তু এক হাজার ২১৬ কোটি ৫৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটির কাজে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত অগ্রগতি হয়েছে ৫৭ শতাংশ।
এক হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে মাতুয়াইল স্যানেটারি ল্যান্ডফিল সম্প্রসারণসহ ভূমি উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে বর্তমান ল্যান্ডফিলের পার্শ্ববর্তী ৮২ একর জমি অধিগ্রহণ ও অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণকাজের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত। কিন্তু বর্তমানে প্রকল্পের অগ্রগতি ৮৭ শতাংশ।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন নবসংযুক্ত ডেমরা, মান্ডা, নাসিরাবাদ ও দক্ষিণগাঁও এলাকার সড়ক অবকাঠামো ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বাড়িয়ে ধরা হয়েছে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে ৭২ শতাংশ।
২৬৮ কোটি ৭৫ লাখ ৯৫ হাজার টাকা ব্যয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ প্রকল্প ২০২১ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ১৫ শতাংশ।
এছাড়া ৭৭৪ কোটি ৬৬ লাখ ৫৪ হাজার টাকা ব্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক পুনর্বাসনসহ নর্দমা ও ফুটপাত উন্নয়ন প্রকল্পের মেয়াদ ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হলেও গত জুন পর্যন্ত এ প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে ৫৫ শতাংশ।
এদিকে উন্নয়নকে গুরুত্ব দিয়ে গত অর্থবছরের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি বরাদ্দ দিয়ে ২০২০-২১ অর্থবছরে ছয় হাজার ১১৯ কোটি ৫৯ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। প্রতিষ্ঠার পর এটিই তাদের সর্বোচ্চ বাজেট। সম্প্রতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেন ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
উন্নয়নে গুরুত্ব দেয়া এবারের বাজেট উপস্থাপন বক্তব্যে ডিএসসিসি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, মহাপরিকল্পনার আওতায় আমরা প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে সামাজিক অনুষ্ঠান কেন্দ্র (কমিউনিটি সেন্টার) নির্মাণসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সংস্কার, ২০২১ সালের মধ্যে ৭৫টি ওয়ার্ডে একটি করে অন্তর্বর্তীকালীন বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্রসহ (সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন-এসটিএস) বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম ঢেলে সাজানো, দখল-দূষণ প্রতিরোধ করে নদ-নদী-জলাধারগুলোর পুনরুদ্ধার ও সৌন্দর্যবর্ধন করবো।
‘এছাড়া মশক নিধন ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনার আমূল পরিবর্তন, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণ, গণপরিবহন ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, ঐতিহাসিক স্থাপনাসমূহ রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে ঢাকার ঐতিহ্য সংরক্ষণ, গৃহকর না বাড়িয়ে রাজস্ব আহরণের পরিসীমা বৃদ্ধি ও উন্নয়ন কার্যক্রম বেগবান করা এবং প্রশাসনিক সংস্কারের মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি’— বলেন মেয়র।
এএস/এইচএ/পিআর