ঈদ পরবর্তী করোনা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন সরকার
সম্প্রতি দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা কমে এলেও স্বস্তিতে নেই সরকার। করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু রোধে সরকারি নির্দেশে অব্যাহত লকডাউন এবং আন্তঃজেলা পরিবহন বন্ধ থাকা সত্ত্বেও ঈদের আগের কয়েকদিনে লাখ লাখ মানুষ শহর থেকে গ্রামে গেছেন। প্রধানমন্ত্রী, রোগতত্ত্ব ও স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা যদিও এই ঈদে গ্রামে না গিয়ে নিজ নিজ অবস্থানে থেকে যাওয়ার আহ্বান করেছিলেন। তবে তাতে তেমন সাড়া দেননি সাধারণ মানুষ।
যাত্রাপথে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করেই প্রাইভেটকার, বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, ট্রাক এমনকি ময়লার গাড়িতে চড়েও গাদাগাদি করে বাড়ি ফিরেছে মানুষ। এই বিষয়টিই রোগতত্ত্ব ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ তথা সরকারকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।
১৪ মে (শুক্রবার) ঈদের দিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ঈদের আগে যারা বাড়ি গেছেন তাদের বিলম্ব করে বাড়ি থেকে ফেরার পরামর্শ দিয়েছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, ধীরে ধীরে ভিড় এড়িয়ে ফিরলে সংক্রমণ তীব্রভাবে ছড়িয়ে পড়বে না।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, করোনা রোগীদের চিকিৎসায় রাজধানীসহ সারাদেশের করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত সংখ্যক সাধারণ শয্যা, আইসিইউ, আইসিইউ সমতুল্য শয্যা, হাইফ্লো নজেল ক্যানুলা, অক্সিজেন কনসেনট্রেটরসহ নানা প্রস্তুতি রয়েছে। তবে হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। ঈদের আগে যেভাবে মানুষ গাদাগাদি করে গ্রামে ফিরেছে তারা আবার একইভাবে ফিরলে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার কিছুদিন পর বেড়ে যেতে পারে।
এদিকে, পরিস্থিতি খারাপ হলে প্রয়োজনে ঢাকা শহরের কমিউনিটি সেন্টারগুলোকে করোনা চিকিৎসার কাজে ব্যবহার করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত প্রেস বিজ্ঞপ্তির তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ঠিক এক মাস আগে (১৪ এপ্রিল) প্রথম রমজানের দিনের আগে ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নতুন রোগীর সংখ্যা ছিল পাঁচ হাজার ১৮৫ জন। একই সময়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় ৯৬ জনের।
একমাস পর গত ১৪ মে ঈদের দিনের আগে ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত নতুন রোগীর সংখ্যা ছিল ৮৬৪ জন, মৃত্যু ২৬ জন এবং সুস্থ রোগীর সংখ্যা ছিল ৮৫২ জন।
১৪ এপ্রিল থেকে ১৪ মে পর্যন্ত সময়ে মোট ৭৬ হাজার ৩৬৫ জন আক্রান্ত, দুই হাজার ১১৫ জনের মৃত্যু এবং এক লাখ ২৯ হাজার ১৭২ জন সুস্থ হন।
ঈদের আগের দিন (১৩ মে) করোনা পরিস্থিতি সম্পর্কিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম জানান, গত কয়েকদিন যাবৎ করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা কমে আসা স্বস্তির খবর হলেও ঈদের আগে যারা বাড়ি ফিরেছে তারা ফিরে আসার পর সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ে কি-না তা নিয়ে কর্তৃপক্ষ উদ্বিগ্ন।
তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে ৪৫৯টি ল্যাবরেটরিতে (১২৮টি আরটিপিসিআর, ৩৬টি জিন এক্সপার্ট এবং ২৯৫টি র্যাপিড অ্যান্টিজেন) করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। সেজন্য লক্ষণ দেখা দিলেই টেস্ট করাতে হবে।
দেশে গত ২৭ জানুয়ারি ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদিত ভ্যাকসিন দিয়ে টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন হয়। গত কয়েক মাস টিকা কর্মসূচি পরিচালনার পর বর্তমানে ঘাটতির কারণে প্রথম ডোজের টিকা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। প্রথম ডোজের টিকা নিয়ে দ্বিতীয় ডোজের টিকার অপেক্ষায় রয়েছেন লাখ লাখ মানুষ। বর্তমানে যে মজুত আছে তা শেষ হওয়ার পর আরও ১৭-১৮ লাখ ডোজ ঘাটতি থাকবে।
এদিকে, সরকার চীন ও রাশিয়াসহ বিভিন্ন উৎস থেকে টিকা সংগ্রহের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তবে যতদিন টিকা না আসে ততদিন মানুষকে সংক্রমণমুক্ত থাকতে শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি (ঘরের বাইরে বের হলে মাস্ক পরা,ভিড় এড়িয়ে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে চলা, ঘন ঘন সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, স্যানিটাইজার ব্যবহার করা ইত্যাদি) মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
এমইউ/এসএস/এমকেএইচ