কঠোর বিধিনিষেধের প্রথম সকালটা যেমন চলছে
করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে আজ (বৃহস্পতিবার) ভোর ৬টা থেকে শুরু হওয়া সপ্তাহব্যাপী কঠোর লকডাউন বাস্তবায়ন করতে কাকডাকা ভোর থেকে মাঠে ব্যাপক তৎপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহনে তল্লাশি ও পথচারীদের বাইরে বের হওয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করছেন তারা।
অন্যান্যদিন চেকপোস্টগুলোতে হাতেগোনা দু-চারজন থাকলেও আজ প্রতিটি চেকপোস্টে ১০ থেকে ১২ জন পুলিশ সদস্যকে দায়িত্বরত দেখা গেছে। তাদের মধ্যে ডিসি পর্যায়ের কর্মকর্তারাও সকাল থেকে মাঠে থেকে লকডাউন বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে বের হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে কর্তব্যরতরা জানিয়েছেন।
রাজধানীসহ সারাদেশের মানুষ যারা লকডাউনের কারণে ঘরবন্দি তাদের অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে কেমন চলছে লকডাউনের সকালটা। তাদের জন্য জাগো নিউজের এ প্রতিবেদক ঘণ্টাব্যাপী রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখেন।
সকাল সোয়া ৮টা। রাজধানীর নীলক্ষেত ট্রাফিক সিগন্যাল মোড়ে ঘুমঘুম চোখে একজন পুলিশ কনস্টেবল দাঁড়িয়েছিলেন। আলাপকালে তিনি বলেন, সকাল ৬টায় পোস্টে রিপোর্ট করেছি। তাই ঘুম থেকে আরও ঘণ্টাখানেক আগে উঠে রেডি হতে হয়েছে। গরমে রাতে ঘুম ভালো হয়নি। একে তো লকডাউন তারওপর যারা কাজে বের হবেন তারাও সকাল সকাল ততটা বের হননি। তাই একটু বিশ্রাম নিচ্ছি।
এ সময় পাশ দিয়ে দ্রুত বেগে হেঁটে যাচ্ছিলেন মধ্যবয়সী এক নারী। লকডাউনের সময় কোথায় যাচ্ছেন- এ কথা জিজ্ঞাসা করতেই তিনি থতমত খেয়ে বললেন, ‘স্যার, আমি ধানমন্ডি আইকেয়ার হাসপাতালে চাকরি করি, সেখানে যাচ্ছি।’
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে রহিমা খাতুন নামে ওই নারী জানান, তার বাসা লালবাগের শহীদনগরে। প্রতিদিন বাসা থেকে হেঁটে আজিমপুরে এসে বাসে ওঠেন। কিন্তু লকডাউনের কারণে বাস বন্ধ থাকায় এবং রিকশাভাড়া অনেক বলে হেঁটেই যাচ্ছেন। সকাল ৮টা থেকে ডিউটি হলেও ঘুম থেকে উঠতে দেরি হওয়ায় তাড়াহুড়া করে যাচ্ছেন।
রাজধানীর মিরপুর রোডে গত তিন দিনের সকালের তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম যানবাহন ও মানুষ চলাচল করতে দেখা যায়। জরুরি পণ্য বহনকারী যানবাহন ছাড়া অন্যকোনো যানবাহন খুব একটা চোখে পড়েনি। এলিফ্যান্ট রোড বাটা সিগন্যাল মোড়ের সিগন্যালে চেকপোস্টে সাজ সাজ রব দেখা যায়।
পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিজে দাঁড়িয়ে থেকে চেকপোস্টের কাজ তদারকি করছিলেন। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, সকাল ৬টা থেকে অপরাধবিভাগ ও ট্রাফিক বিভাগ ঢাকা শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে যৌথভাবে চেকপোস্ট করছে। প্রথম দুই ঘণ্টায় প্রজ্ঞাপন অনুসারে যে সকল যানবাহন বা মানুষ চলাচল করার কথা তাদেরই দেখতে পেয়েছেন বলে জানান।
রাজধানীর নিউমার্কেট, ধানমন্ডি, রমনা, তেজগাঁও ও কলাবাগান থানা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়ে রাস্তায় চলাচলকারী যানবাহন ও মানুষকে বাইরে বের হওয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করছেন। তবে সাত সকালে বেশিরভাগ মানুষকে রিকশা, ভ্যান ও পিকআপে কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন পাইকারি বাজার থেকে পণ্য কিনে ফিরতে দেখা যায়। এছাড়া জরুরী সেবায় নিয়োজিত বিভিন্ন পেশার মানুষকে পরিচয়পত্র সঙ্গে নিয়ে পথচলতে দেখা গেছে।
এমইউ/বিএ/এএসএম