আগেই গরু এনে দুর্ভোগে খামারি-ব্যাপারীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৬:১৯ পিএম, ১৪ জুলাই ২০২১

ঝিনাইদহ থেকে ১৪টি গরু নিয়ে রাজধানীর শাহজাহানপুর হাটে এসেছেন ব্যাপারী লিয়াকত আলী। ১৩ বছর ধরে কোরবানির ঈদে এ হাটে গরু বিক্রি করেন তিনি। কিন্তু এ বছরের অভিজ্ঞতা অতি তিক্ত। গরু আর নিজের শরীর নিয়ে এখন বিপাকে তিনি।

লিয়াকত বলেন, ‘দু’দিন আগে গরু নিয়ে শাহজাহানপুর হাটে পৌঁছলেও লকডাউন থাকায় ১৬ তারিখের আগে হাটের ভেতরে গরু রাখতে দেয়া হচ্ছে না। গরু নিয়ে খোলা আকাশের নিচে ফাঁকা এক জায়গায় থাকছি। সেখানে গরু প্রচণ্ড গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। কোনো নিরাপত্তাও নেই।’

jagonews24

তিনি আরও বলেন, ‘তের বছর এই হাট করছি। এমন দুরবস্থা জীবনে হয়নি। রাত জেগে গরু পাহারা, থাকা-খাওয়ায় কষ্ট হচ্ছে। গরিব মানুষ দু-চার টাকা লাভের আশায় এসেছি। কিন্তু সেই পরিবেশ নেই।’

শুধু লিয়াকত নন, রাজধানীর শাহজাহানপুর হাটের বাইরে এখন গরু নিয়ে ঢাকায় আসা খামারি ও ব্যাপারীদের আনাগোনা। কিন্তু কোনোভাবেই হাটে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। ফলে তাদের থাকার কোনো জায়গা নেই।

এদিকে, হোটেল-রেঁস্তোরা বন্ধ থাকায় খাবারের ব্যবস্থা করতেও হিমশিম খাচ্ছেন খামারি ও ব্যবসায়ীরা। সঙ্গে আনা গরুর খাবার শেষ হয়ে যাওয়ায় তা কিনতেও হচ্ছে অতিরিক্ত দামে।

সরেজমিনে হাট ঘুরে দেখা গেছে, হাটে প্রায় দুই থেকে তিনশ খামারি-ব্যাপারী এসেছেন। কিন্তু কোনো গরু হাটের ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। আশপাশে শত শত গরু রেখে ব্যাপারীরা হাটে বিশ্রাম করছেন। হাটেও চলছে প্রস্তুতির কাজ। কোনো ব্যবস্থাই ঠিকঠাক শেষ হয়নি।

jagonews24

পাঁচদিন আগে গরু নিয়ে এসেছেন ব্যাপারী সুমন মিয়া। তিনি বলেন, ‘এ হাটের পরিস্থিতি খারাপ। অন্য হাটে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ইজারাদাররা যেতে দেয় না। বাধ্য হয়ে কষ্ট করে আছি।’

দূর-দূরান্ত থেকে গরু নিয়ে হাটে আসা খামারি-ব্যাপারীদের দুর্দশা নিয়ে চিন্তা নেই ইজারাদারদের। কিন্তু ঠিকই হাট এলাকা থেকে অন্য হাটে যেতে চাইলে বাধা দিচ্ছেন তারা।

অভিযোগ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি ইজারাদার কমিটির সদস্যরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বলেন, ‘১৭ তারিখ ভোর থেকে শুরু হবে হাট। গরু ঢুকবে ১৬ জুলাই রাত থেকে। এর আগে গরু ঢোকানোর ব্যাপারে প্রশাসনের কড়া নিষেধ আছে।’

jagonews24

এদিকে হাটে আনা গরু প্রচণ্ড গরম ও ভালো জায়গার অভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এ নিয়ে শঙ্কায় দিন পার করছেন ব্যাপারী ও খামারিরা। হাটের পাশে গরুর ওষুধ গুঁড় করতে দেখা যায় এক ব্যাপারীকে।

জানতে চাইলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘মঙ্গলবার রাতে গরু নিয়ে হাট পর্যন্ত পৌঁছানোর আগেই অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে একটা গরু মারা যাওয়ার অবস্থা প্রায়। সেজন্য গরুটিকে ওষুধ খাওয়ানো হচ্ছে।’

জানা গেছে, রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক আগামী ১৭ জুলাই থেকে ঢাকায় কোরবানির পশুর হাট বসবে। চলবে ঈদের দিন (২১ জুলাই) পর্যন্ত।

ইজারাদাররা পশু বিক্রি শুরুর দুদিন আগে হাটগুলো প্রস্তুতি নেয়ার সুযোগ পাবেন। দুই সিটির ইজারা দেয়া ১৯টি অস্থায়ী হাটের প্রস্তুতি প্রায় শেষ দিকে। শুক্রবার (১৬ জুলাই) রাত থেকেই হাটে ঢুকবে গরু।

এনএইচ/এএএইচ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।